বিশেষ সংবাদদাতা: শাসক জোটের মূল শরিক দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মীর অতি উৎসাহী কর্মকা-ের পাশাপাশি পুলিশের যথাযথ দায়িত্ব পালনে উদাসীনতায় দীর্ঘদিন পরে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গন আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারী একতরফা নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার বরিশালের রাজপথ উত্তপ্ত হওয়াসহ সহিংসতার ঘটনাকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল ‘সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার জন্য দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। মহলটির মতে এতে করে শাসক জোটের ভাবমর্যাদা আরো সংকটে পড়বে।
পাশাপাশি তা দেশের মূলবিরোধী জোটের রাজনৈতিক ভীতকে সুদৃঢ় করতেও সহায়ক হতে পারে। আর সে কাজটি করে দিচ্ছে শাসক জোটের মূল দলটির ছাত্র ও যুব সংগঠন। তবে এর পেছনে মূল দলের কোন ইন্ধন থাকলে তাকে আরো দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছে মহলটি।
গত বৃহস্পতিবার মহানগর পুলিশের অনুমোদন নিয়ে বরিশাল টাউন হল সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতিকালেই অদূরে অপেক্ষমাণ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কতিপয় কর্মী সেখানে হামলা চালায়। একপর্যায়ে হমলাকারীরা বিএনপি অফিসে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে মারধর করে। এমনকি প্রকাশ্য ছাত্রদলের এক মহিলা কর্মীকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় ক্ষমতাসীন দলের ঐসব অতি উৎসাহী কর্মীরা। দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরসহ নারকীয় তা-বে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে জনমনে যথেষ্ঠ ভীতরও সৃষ্টি হয়। আর এসব কিছুই ঘটেছে পুলিশের সরব উপস্থিতিতে।
তবে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার, (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান তার দায় এড়াতে সাংবাদিকদের কাছে এর একটি ব্যখ্যাও দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সদর রোড তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিতে থাকে। একই সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও কিছুটা দূরে সদর রোডে অবস্থান নেয়। তবে এক পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিক থেকে একটি বোতল ছুঁড়ে মারার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষের মধ্যে ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে চড়াও হতে দেখা যায় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু সময় পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে’।
গত কয়েক বছর ধরে সারা দেশের মত বরিশালেও ঘর পালানো বিএনপি নেতা-কর্মীদের সরকারী দলের অবস্থানের দিকে বোতল ছুঁড়ে মারা দূরের কথা ভাল করে তাকানোর সাহস আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। আর যেখানে একটি বিরোধী দকে সভা-সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমোদন নিতে হয়, সেখানে সরকারী দলের তার নিকট দূর অবস্থানের কোন অনুমোদন ছিল কিনা তা অবশ্য পুলিশের কোন দায়িত্বশীল কর্তারা বলতে পারেননি। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোন কর্মসূচীর কাছে প্রতিপক্ষের যেকোন অবস্থান সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে বলে সাধারণ মানুষ সতর্ক থাকলেও পুলিশের সেক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা গ্রহণের ঘাটতি থাকার কথা নয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। মহলটির মতে, আমাদের পেশাগত দক্ষতা সম্পন্ন পুলিশ বাহিনীর পক্ষে এ সামান্য বিষয়টি অনুধাবন করে প্রাক-প্রস্তুতি না থাকার বিষয়টি অনেকের মনেই সন্দেহের উদ্রেক করে।
তবে গত বৃহস্পতিবার বরিশালের রাজপথে অনৈতিক বল প্রয়োগে শাসক দল সফল হলেও তারা রাজনৈতিকভাবে দলকে পুরনো বদনামে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি তা বিরোধী দলের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করতেও সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
২০১৪-এর শুরু থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দক্ষিণাঞ্চলেও বিরোধী রাজনৈতিক দল-বিএনপি ও তার জোট সহযোগীরা রাজনৈতিক তেমন কোন কর্মসূচী পালন করতে না পারলেও সাম্প্রতিককালে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসছিল। ফলে একাধিক মামলায় জর্জরিত রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা আস্থার ভাব ফিরতে শুরু করলেও তাতে আরেকটি ধাক্কা লাগল গত বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনাটি। এমনকি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে প্রেসিডেন্টর ইতিবাচক উদ্যোগসহ আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার বিষয়টি যখন আলোচনায়, তখন সরকারী দলের এ ধরনের আচরণ, তাদের অবস্থানকেও নরবরে করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বরিশালের সাধারণ মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন