স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার সারাদেশে মহানগর-জেলা সদরে এবং ঢাকায় থানায় থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণতন্ত্রের কালো দিবস পালনের কর্মসূচি পালনের অনুমতি না দিলেও দিনভর দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনি ঘেরা। ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনির ভেতরে গতকাল সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দল ঘোষিত কর্মসূচি পালনের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা নারী নির্যাতনের প্রতিযোগিতাকে অলিম্পিকের স্তরে উন্নীত করেছে। বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই অনাচারের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। এই পথ বেছে নেয়ার জন্যই অপরাধীরা আশকারা পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সংগঠন নিজেই যেন অপরাধীদের প্রজনন খামার।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ কর্মসূচি করতে না দেয়ায় আবারো প্রমাণিত হলো, তারা (সরকার) গণতন্ত্রের সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতার গলায় ফাঁসির দড়ি লটকিয়ে দিয়েছে। নিঃশব্দ বোবাকণ্ঠই হচ্ছে আওয়ামী বাকশালিদের কাছে প্রিয়।
রিজভী বলেন, আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক আজকের কর্মসূচিতে বর্বরোচিতভাবে বাধা দেয়ার তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। আজকে কর্মসূচি করতে না দেয়া এবং গত ৫ জানুয়ারি সারাদেশে আমাদের ঘোষিত কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। রাজধানীর থানায় থানায় এই কর্মসূচি হবে।
এদিকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সকাল থেকে বিএনপির কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। সকালের দিকে কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ তিন কর্মীকে আটক করে। কার্যালয়ে নেতাকর্মীকে পুলিশ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে রিজভী বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও একই যুদ্ধংদেহি পরিবেশ বিরাজমান।
তিনি বলেন, আজ ক্রসফায়ারে নিহত লাশ ও আটক বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বন্দিশালার ওপর, গুম-খুন হয়ে যাওয়া সন্তানদের মায়ের অশ্রুজলের ওপর বিরোধীদলের কর্মসূচিকে থেঁতলিয়ে দেয়ার জন্য জলকামান আর আর্মার্ড কারের ওপর আওয়ামী গণতন্ত্রের পতাকা উড়ে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের কণ্ঠে বলতে চাই, ক্ষমতাসীনরা উৎপীড়নের পথ বেছে নিয়ে যেভাবে গণতন্ত্রকে বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়েছেন, তার পরিণতিতে আপনাদের পরিস্থিতি যদি হয় ভয়াবহ, তাহলে আপনাদের জন্য কান্না ও হায়-হুতাশ করার লোকও খুঁজে পাবেন না।
রিজভী বলেন, বরিশালে মহানগর কার্যালয়ে গণতন্ত্র হত্যা দিবস (৫ জানুয়ারি) উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে মহিলা কাউন্সিলরসহ মহিলা দলের অর্ধশত নেতাকর্মীকে নির্যাতন করে মারাত্মক আহত করেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখন র্যাব-পুলিশ ও অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে আপনাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। আজ দেশে গণতন্ত্রের লেশ মাত্র নেই।
শুক্রবার ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের কাজ হচ্ছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। তাই তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায়। এর জবাবে রিজভী বলেন, এটা সঠিক নয়। বরং আপনাদেরই দেখা গেছে, এরশাদ একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছেন তখন-আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেছেন, আই অ্যাম নট আনহ্যাপি। এটা কী ষড়যন্ত্রের অংশ নয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চাই।
‘তিনি বলেন, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সংবিধান বহির্ভুতভাবে দুই বছর ক্ষমতায় ছিলেন এবং আপনারা তাদের বলেছেন, আন্দোলনের ফসল এবং তারা যা কিছু করবেনÑ সেটা আপনারা বৈধ্যতাদান করবেন। এরকম একটা অনিয়মতান্ত্রিক অবৈধ সরকারকে সমর্থন করলেন, তারা কী ষড়যন্ত্রকারী নয়? বিএনপি কোনো ‘অশুভ শক্তি’ বা ‘গণতন্ত্র নস্যাৎ করা শক্তির’ কে কখনো সমর্থন দেয়নি বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
রিজভী আরো বলেন, ষড়যন্ত্র যদি হয় দ্বি-চারিতা, ষড়যন্ত্র যদি হয়, মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং ক্ষমতায় এসে তার বিপরীত কাজ করা তাহলে এটারও উত্তর তাকে (ওবায়দুল কাদের) দিতে হবে। ষড়যন্ত্র যদি হয়, গণতন্ত্রকে যারা হত্যা করেন তাদের প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়া। এটা কী ষড়যন্ত্রের অংশ কিনাÑ এটাও আমরা জানতে চাই।
তিনি বলেন, যারা অনিয়মিতভাবে সংবিধান বহির্ভুতভাবে দুইবছর ক্ষমতায় থাকলেন কোনো নির্বাচন না দিয়ে, তাদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন করা, তাদের আন্দোলনের ফসল, এটা ষড়যন্ত্র কিনাÑ এটাও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পরিষ্কার করা দরকার। এটা কিন্তু সুস্পষ্টভাবে দেখা গেছে, শোনা গেছে, পত্রিকায় পড়া গেছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ জানুয়ারি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। তবে ৫ জানুয়ারি ঢাকা ব্যতিত সারাদেশে মহানগর ও জেলায় কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার শরিকরা। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন