স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের ‘নেপথ্য কারণ’ জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য জানতে চান। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট পুরো বদলে ফেলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলছেনই বিদেশীদের চাপে তাদেরকে এই পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই, এই বিদেশটা কোন বিদেশে, যারা এই চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা খুব ভালো করে জানতে চাই, ইসলামী ব্যাংক কী সমস্যাগুলো ক্রিয়েট করেছে যে, যার জন্য পুরোপুরি ম্যানেজমেন্ট চেইঞ্জ করতে হচ্ছে। আমরা ভালো-মন্দ বলছি না কিন্তু, বিষয়গুলো জানতে চাচ্ছি। আই অ্যাম হিয়ার ইভরি রাইট টু নো এবাউট দেম- একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে আমরা সেগুলো জানার অবশ্যই অধিকার রয়েছে।
গত রোববার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইয়েস ইট লুকস গুড। তবে তাদের মুনাফা আসলে কোথায় যায়, এটা নিয়ে একটা প্রশ্ন তো ছিলোই। ইসলামী ব্যাংকের ফরেনার পার্টনার চেঞ্জ হয়েছে। এখন যা কিছু হয়েছে তাদের প্রেশারে হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদের ২৪০তম সভায় সাবেক সচিব আরাস্তু খান ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে এসেছেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। ব্যাংকটির সিনিয়র ডিএমডি মাহবুবুল আলমকে নতুন ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হয়েছে।
এর আগে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ার, ভাইস-চেয়ারম্যান আজিজুল হক ও এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নান স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
বেসরকারি এই ব্যাংকটিতে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতা থাকায় ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির আন্দোলনকারীরা।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিও ছিল ইসলামী ব্যাংকের উপর। ২০১০ সালে এই ব্যাংকে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া মীর কাসেম আলী ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ভাইস চেয়ারম্যান।
নতুন ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোর বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তার যে ম্যানেজমেন্ট, তার যে সাংগঠনিক কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন সেটাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কাদেরকে দেয়া হয়েছে এই ব্যাংকের পারমিশন। নতুন ব্যাংকগুলো সমস্ত আওয়ামী লীগের যারা নেতা হয় এমপি না হয় মন্ত্রী এবং কি এরশাদ সাহেবও পেয়েছে। ইনসুরেন্স কোম্পানি ও ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন ক্ষমতাসীনদের দেয়া হচ্ছে।
দেশের উন্নয়নের বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার মিথ্যাচার করছেন। গণতন্ত্রের বিষয়গুলো তারা এমনভাবে কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে যে, এটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা একটাই- সেটা হচ্ছে উন্নয়ন। এটা মধ্য আয়ের দেশ হয়ে যাচ্ছে, মানুষের ইনফ্লুয়েন্স এতো বাড়ছে যে, তারা খুব ভালো আছে। প্রকৃত তথ্যগুলো এর বিপরীতে। অর্থনৈতিক জরিপের তথ্য-উপাত্তগুলো দেখলে আপনারা তা বুঝতে পারবেন।
উন্নয়ন অন্বেষা একটা প্রতিষ্ঠানÑ তারা খুব স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, সরকারি পরিসংখ্যান-ডাটাগুলোতে যেভাবে দেখানো হচ্ছে, তাতে করে প্রমাণিত হচ্ছে- আসলে সেভাবে হচ্ছে না। রেমিটেন্স কমেছে, সেভাবে বাড়েনি। বিদেশী বিনিয়োগ একেবারেই নেই বললে চলে। দেশীয় যে বিনিয়োগ তা সুনির্দিষ্টভাবে খাতে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সিপিডি কালকে (গত রোববার) তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ডাইভারসিটিফাই ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না। কয়েকটি খাতে সীমিত আকারে ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে।
সারাদেশে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করে গতকাল সোমবারের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত দুর্নীতির খবরগুলো তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
প্রত্যেকটি পত্রিকা খুললে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। একটাই কারণ যে উন্নয়ন। গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন কখনোই টেকসই হতে পারে না। এটাই বিজ্ঞান। পৃথিবীর যেকোনো অর্থনীতিবিদকে জিজ্ঞাসা করুন- এটা হবে না।
রাজধানীতে ফ্লাইওয়ার নির্মাণে উন্নয়ন ব্যয় ‘দুর্নীতির কারণে’ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন