সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ওরা সাতজন। সন্ত্রাসী, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সব ধরনের বিপজ্জনক কাজ করাই ওদের পেশা। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এসব যুবকদের দেখে বোঝার কোনো জো নেই ওরা কতোটা ভয়ঙ্কর সব কর্মকাÐ করে থাকে। এসব যুবকরা চলাফেরায় অনেকটা ছাত্রভাব দেখালেও আসলে ওরা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। ওদের কাছে থাকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ মানুষের ক্ষতিসাধনের সবরকম সরঞ্জাম। কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর এলাকায় বসবাসকারি এমন একটি অস্ত্রধারি সন্ত্রাসী গ্রæপের সন্ধান পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের কুমিল্লা টিম। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত টানা ১৩ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে র্যাবের একটি আভিযানিক টিম বিদেশি রাইফেল, বন্দুক ও দেশীয় অস্ত্রসহ সাত সন্ত্রাসীকে কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর এলাকা থেকে আটক করে।
কুমিল্লা নগরীর তালিকাভুক্ত এলাকার মধ্যে ধর্মপুরও মাদক, ছিনতাই এবং অস্ত্রবাজদের আখড়া হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় চিহ্নিত রয়েছে। প্রায় সময়ই ধর্মপুরে ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাÐ ও অস্ত্রের মহড়া, গোলাগুলির ঘটনা ঘটে থাকে। আবার ধর্মপুরে রয়েছে শিক্ষিত ও সুশীল পরিবারের লোকজনের বসবাস। ধর্মপুর এলাকার ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীরা নিজেদের হাবভাব অনেকটা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রের মতো উপস্থাপন করে থাকে। আর এরকম লেবাসের ভিড়ে সবধরণের অপরাধ কর্মকাÐ করে থাকে তারা। এরকম একটি গ্রæপের ব্যাপারে তথ্য আসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১১, ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ কুমিল্লার কম্পানী কমান্ডারের কাছে। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে র্যাব জানতে পারে শনি বা রোববারের মধ্যে ধর্মপুর এলাকায় বসবাসকারী সাত সদস্যের একটি সন্ত্রাসী ও ডাকাতচক্র কুমিল্লা নগরীর যে কোনো স্থানে অথবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোথাও অস্ত্র প্রদর্শন করে কোনো অঘটন ঘটাবে। আর এ ধরনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা একত্রিত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এমন তথ্যের সত্যতার উপর নির্ভর করে র্যাব কুমিল্লার সদস্যরা সাদা পোষাকে ধর্মপুর এলাকায় অবস্থান নেয়।
র্যাবের গোয়েন্দা টিম ওই তথ্যের আরো সত্যতা পাবার পর র্যাব-১১, ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ এর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জারের নেতৃত্বে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় ধর্মপুর এলাকায় অভিযান শুরু হয়। মধ্যরাতে ভিক্টোরিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের মসজিদ গেটের সামনে জনৈক সেলিম আহাম্মদের মালিকানাধীন অপরাজিতা ছাত্রাবাস নামের একটি মেসে তল্লাশি চালায় র্যাবের আভিযানিক টিম। ওই মেসসহ কয়েকটি বাড়িতেও অভিযান চালায় র্যাব। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় অভিযান শেষ করে র্যাব। টানা ১৩ ঘণ্টার অভিযানে র্যাব ধর্মপুর কলেজ রোডের মৃত মোসলেম মিয়ার ছেলে সালাহউদ্দিন, আবদুল মতিনের ছেরে মো. মামুন, মো. আলাউদ্দিনের ছেলে আবদুর রহিম বাবু, দৌলতপুর কাজী বাড়ির মো. সেলিমের ছেলে ফজলে রাব্বী, ধর্মপুর শাহআলম মেম্বারের বাড়ির পেছনের বাসিন্দা রফিক মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন, ধর্মপুরের ছারু মিয়ার ছেলে নাহিদ ও মেহের আলীর ছেলে ছাব্বিরকে অস্ত্রসহ আটক করে। র্যাব ওই সন্ত্রাসীদের আখড়া থেকে দু’টি বিদেশি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, তিনটি একনলা বিদেশি বন্দুক, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন, পিস্তলের চার রাউন্ড গুলি, কার্তুজ এবং একটি রামদা উদ্ধার করে।
র্যাব কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার জানান, আটক সাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ধর্মপুর থেকে সমবেত হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ওরা এর আগেও এসব অস্ত্র ব্যবহার করে দুস্যতা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাÐ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক গুরুতর অভিযোগসহ মামলা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন