শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

পার্বত্য এলাকায় নতুন বাঁশশিল্প গড়ে তোলার দাবি

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নুরুল আবছার চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে : কাপ্তাইসহ তিন পার্বত্য জেলায় প্রাকৃতিক ভাবে প্রচুর বাঁশ জন্মে। এসব বাঁশ কর্তন, আহরণ, পরিবহন ও উৎপাদনের সাথে লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য জড়িত। এ সব বাঁশ সঠিকভাবে সদ্ব্যবহার করা গেলে অত্র এলাকায় বাঁশভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ এলাকায় বাঁশভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না। বিশেষ করে কাপ্তাই-রাঙামাটি অঞ্চলে উৎপন্ন বাঁশ পরিকল্পিভাবে আহরণ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হলে দেশের অর্থনীতি বদলে যেত বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
একমাত্র কর্ণফুলী কাগজকলের প্রধান সহায়ক শক্তি কাঁচামালের বিশাল জোগান দিয়ে থাকে এই বাঁশ। ইতোমধ্যে এ শিল্প রূগ্ন হয়ে যাওয়ায় মিলের নিকট বাঁশের চাহিদা কমতে থাকে। এতে এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় দুই লক্ষাধিক লোক বেকার হয়ে পড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পার্বত্য অজ্ঞলের বাঁশের সোনালী ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।
কর্ণফুলী কাগজ কলের কাঁচামালের যোগান দিতে গিয়ে বিভিন্ন বাঁশ জোত মালিকদের কাছে কেপিএমের ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট মিল কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে বাঁশশিল্পের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাঁশ আহরণ ও পরিবহন বন্ধ থাকায় এর সাথে জড়িত শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পার্বত্য এলাকার বাঁশ নিয়মিত পরিবহন এবং বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। কেপিএম চালু রাখা এবং বাঁশ সরবরাহকারী ঠিকাদারদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে গত ১১ জানুয়ারি শ্রমিক ও জনতা কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের কাপ্তাই উপজেলা সদরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, পার্বত্য এলাকার রাঙামাটি, খাগড়ছড়ি ও বান্দারবান জেলার ২৫ উপজেলায় বাঁশ জন্মে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঁশ জন্মে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির কাচালং, মাচালং, গংগারাম, শিশক এলাকায়। এখানে সুবিশাল এলাকায় সংরক্ষিত বাঁশবন রয়েছে। জেলার বরকল, লংগদু, নানিয়ারচর, কাউখালী, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলায়, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা, মানিকছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি, লক্ষীছড়ি, মহালছড়ি, রামগড় এবং বান্দরবান জেলা সদর, থানচি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, রোয়াংছড়ি উপজেলায় বিপুলপরিমাণে বাঁশ উৎপন্ন হয়।
বাঁশ ঠিকাদাররা জানান, এসব অঞ্চলে উৎপাদিত বাঁশ শুধু কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পেপার মিলে (কেপিএম) কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া কিছু কিছু বাঁশ চট্টগ্রামের মিরসরাই, বারৈয়ারহাট, ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের অন্য এলাকায় পারিবারিক ও নির্মাণকাজে কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অথচ পার্বত্যাঞ্চলের বিশাল বাঁশসম্পদ কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলে বাঁশভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। বিশেষ করে বাঁশভিত্তিক কুটির শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হলে পার্বত্য এলাকায় হাজার হাজার কর্মস্ংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সরকার আর্থিকভাবে অনেকে লাভবান হতে পারেন। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেয়া প্রয়োজন।
পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত বাঁশের মধ্যে রয়েছে বাইজ্যা, বড়াক, কাটা বড়াক, ডোল বড়াক, শীল বড়াক, মিতিংগ্যা, রফাই, ডলু, কালি, মুলি এবং কালিজিরি বাঁশ অন্যতম। এসব বাঁশ চালি আকারে কাপ্তাই হৃদ হয়ে জেটিঘাটে আনা হয়। এখান থেকে কিছু বাঁশ কর্ণফুলী নদীপথে চট্টগ্রাম অভিমুখে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া সড়ক পথে অবশিষ্ট বাঁশ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্রাকযোগে নেয়া হয়। তেমনি বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি হতে ট্রাকযোগে বাঁশ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়ে থাকে।
একটি বাইজ্যা বাঁশ স্থানীয়ভাবে ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। যা দেশের অন্যান্যস্থানে ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একেকটি মুলিবাঁশ ২৫-৩০ টাকায় স্থানীয় বাজারে বিক্রি হলেও দেশের অন্যান্য জেলায় তা ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়। কালিজিরি বাঁশ প্রতিটি ২-৪ টাকায় বিক্রি হয়। সমতলে এ বাঁশ ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হয়।
মো. জমির আহমদ কন্ট্রকাটার জানান, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে একমাত্র কর্ণফুলী কাগজ কল ছাড়া আর কোনো শিল্প কারখানা নেই। এই প্রতিষ্ঠানে কাগজ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে কিছু পরিমাণে বাঁশ ব্যবহৃত হয়। আর কিছু কিছু বাঁশ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। যা পার্বত্যাঞ্চল থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ অঞ্চলে বাঁশ ভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। ‹পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন বাঁশ, গাছের সাথেই জড়িত। একসময় ঘর-বাড়ি তৈরিতে বাঁশের ব্যাপক চাহিদা ছিল। বর্তমানে বাঁশের ঘর তেমন নেই। ফলে দিনদিন এ অঞ্চলের মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। বাঁশভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হলে পার্বত্য অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে বিশেষ উপকার হবে। বাঁশ ব্যবসায়ী হাজী আব্দুস সাত্তার বলেন, দীর্ঘ দিন যাবত কেপিএমসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাঁশ সরবরাহ করা হতো। ইদানিং কেপিএম কর্তৃপক্ষ বাঁশ সরবরাহকারীদের যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করায় এ শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের ধারকর্য করে জীবন নির্বাহ করতে হচ্ছে। পাওনাদারদের অত্যাচারে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। মিল কর্তৃপক্ষের নিকট বাঁশ ব্যবসায়ীদের কে তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন