বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

পরিচয় পাল্টেছে ঝরে পড়া কিশোর কিশোরীদের

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কুড়িতে বুড়ি নয়, বিশের আগে বিয়ে নয়’ বাস্তব এবং সত্য এ প্রবাদটি ভালভাবেই রপ্ত করতে পেরেছে অজ পাড়াগাঁয়ের এক কিশোরী। বাল্য বিয়ের কুফল জানতে পেরে নিজেকে সেই বলিদানের আগেই ঠেকাতে পেরেছে কিশোরী শাকিলা। এজন্য তাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। অভিভাবক থেকে পাড়া-পরশির নানান কথা হজম করতে হয় তাকে। গ্রামের লোকজন আঙ্গুল নাচিয়ে বাবা মাকে শুনিয়েছে নানা কেচ্ছা। অমন মেয়েকে লেখাপড়া করানো ঠিক হয়নি, পড়ালেখা শিখে এমন আস্ত বেয়াদফ বানাইছ। মুরুব্বি মানে না কথায় কথায় তর্ক করে, সাহস বেশি এ ধরনের নানা তপ্ত বাক্য। তাতে কি! শাকিলা এ ধরনের পুতুল খেলায় গা ভাসায়নি। তার সুন্দর জীবন গড়ার সৎ সাহস এবং শক্তি জুগিয়েছে ইউনিসেফের অর্থায়নে পরিচালিত ‘অগ্রসর সংগঠন’। এলাকার কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে টিয়াখালীতে রয়েছে প্রকল্পের অর্থায়নে ক্লাব। ৩০ জন কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে বরগুনার আমতলী ইউনিয়নে টিয়াখালি গ্রামে গড়ে উঠেছে সচেতনমূলক এ সংগঠন।
দেশের ১৭টি জেলায় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল বিভাগের ৩টি জেলা পটুয়াখালি, ভোলা এবং বরগুনায় এই আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ওয়াশা, চাইল্ড প্রোটেকশন, কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্টে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইউনিসেফ। সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের ১৫-১৮ বছরের কিশোর কিশোরীদের নিয়ে তৈরি অগ্রসর সংগঠনটি এলাকার নানামুখী উন্নয়ন কাজ করছে। ইউনিসেফ সিএমইএস প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের হত দরিদ্র পরিবারে ছেলে-মেয়েদের ঝরে পড়ার আগেই তাদের আর্থিক উপবৃত্তি দিয়ে আসছে ২০১৩ সাল থেকে।
ক্লাবের সদস্য শাকিলা মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে শাকিলা চার দশমিক দুই পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করে এবারে কলেজে পড়ছে। সে নিজের বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন এই বলে যে, বাল্যবিবাহ কারও জন্য মঙ্গল আনে না। ১৫ হাজার টাকার উপবৃত্তিতে সেলাই করে নিজের ব্যয় নির্বাহ করছেন। তবে শাকিলার মনে দুঃখ নিজের বিয়ে ঠেকাতে পারলেও তানিয়ার বিয়ে ঠেকাতে পারেনি। সংগঠনের ২ জন সি এম (চেন্জ মেকার)সহ তানিয়র বাবাকে অনেক বুঝিয়েও তানিয়ার বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে পারেনি। শাকিলার আশঙ্কা রেজিস্ট্র্রি ছাড়া বা কোন দলিল ছাড়া এ বিয়েতে তানিয়ার কোন ডকুমেন্ট নেই। বিয়ে পড়ানোর কাজে কাজী কে বাধা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু হুজুর দিয়ে শুধু কলেমা করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন তানিয়ার অভিভাবক। সংসারে কোন ঝামেলা হলে তানিয়া ভবিষ্যতে কোন কাগজ দেখাতে পারবে না। তানিয়া না পারলেও সাহিদা বা কেশবদের মত উপবৃত্তিতে জীবন সাজাতে শুরু করেছে গ্রামের অনেক পরিবারই।
এইচএসসি শিক্ষার্থী কেশব দাস। দরিদ্র প্রাণ গোবিন্দ দাস ও সবিতা রাণীর এ ছেলে প্রতিবন্ধী, নবম শ্রেণিতে পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইউনিসেফ’র নতুন প্রকল্প সিএমইএস’র মাধ্যমে প্রথমদিকে ১৫ হাজার করে দিলেও আজ দুই বছর যাবত ২০ হাজার টাকা দিচ্ছে। এমনটাই জানালেন ২০ হাজার টাকা উপবৃত্তি পাওয়া প্রতিবন্ধী কিশোর কেশব। সেই টাকায় একটি মুদি দোকান দিয়েছেন। দোকানের আয়ে শুধু পড়ালেখাই নয়, তার পরিবারেরও সহযোগিতা হচ্ছে এখন। বিস্কুট, চানাচুর, চকলেটের পাশাপাশি জরুরি কিছু ওষুধও বিক্রি করে কেশব। পড়া শেষ করে ব্যাংকার হতে চান কেশব। দৈনিক গড়ে এক হাজার টাকার বেচাবিক্রি করেন আমতলীর এ কিশোর ব্যবসায়ী। বর্ষায় তার বিক্রি বাড়ে। গ্রামেরই অন্য একজন তরিকুল ইসলামও সমপরিমাণ অর্থে হাঁসের চাষ শুরু করে নিজেদের পুকুরে। এখন তার হাঁস ১০০টি। নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি, বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানি রোধ, যৌতুকের বিরুদ্ধে সোচ্চার করা, ঝরে পড়ার হার কমানো এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে এ ক্লাব। প্রতি বুধবার ৩টা থেকে ঘণ্টাখানেক তাদের বৈঠক চলে ক্লাবে।
য় শাহনাজ পলি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন