শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

ভালোবেসে কাঁদে যখন নারী

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খন্দকার মর্জিনা সাঈদ : ভালোবাসার প্রসঙ্গ আনতেই মিতার দু’চোখ বেয়ে অশ্রুঝরে, সে ভালোবেসে কাঁদে না, ভালোবাসার মানুষটির প্রতারণার শিকার হয়ে কাঁদে। ঘটনাটি ছিল এমন, মিতারা পাঁচ বোন, ওদের কোনো ভাই নেই বিধায় ধনী বাবার প্রথম সন্তান মিতাকে কিশোরী বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে  হয়েছিল। ভাইয়ের অভাব পূরণ ও বাবার একজন বিশ্বস্ত সহযোগী, পরম আত্মীয় পুরুষের প্রয়োজন ছিল বিধায়। সেই পরম আত্মীয় মিতার স্বামী বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় যাবতীয় সম্পত্তির যখন ভাগ-বাটোয়ারা চেয়ে বসল, তখন স্ত্রী মিতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ভাবে, কী করবে সে। প্রতারক স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করবে, নাকি বাবার মানসম্মান, ছোট বোনদের ভবিষ্যতের কথা, সমাজের নিন্দা এড়াতে নীরবে সব মেনে নেবে! সেই ছোট্ট আলেয়া, যে ছিল এক সময় বাবার নয়নের আলো, সময়ের বিবর্তে সে আলেয়াই হয়েছে বাবার অসুস্থতার অন্যতম কারণ। নিজ কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় অপমানে বার বার ন্যুব্জ হয়ে পড়ছিল আলেয়ার মাথা। ওড়নায় মুখ ঢেকে সে ক্ষীণ স্বরে বলে, বাবার অমতে বেকার গৃহশিক্ষককে বিয়ে করে পালিয়ে যাই। যার সাথে পালিয়ে যাই, সে ছিল নিঃস্ব ভবঘুরে। পালিয়ে যাবার ২২ দিনের মাথায় বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলঙ্কার বিক্রির টাকা শেষ হওয়া মাত্রই, যখন সে বলল, ফিরে যাও তোমার পিত্রালয়ে, তখন বুঝতে বাকি রইল না, আমি এক প্রতারকের পাল্লায় পড়েছি। আত্মহত্যা মহাপাপ, বাবা-মা একমাত্র সন্তানকে চিরতরে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না বুঝে নিয়ে পুনরায় ফিরে আসায় বাবা প্রাথমিকভাবে কলঙ্কিত জীবন মেনে নিতে পারছিলেন না সহজে। আর সে কারণেই অবশেষে তাকে স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হতে হলো। যা আমাকে  সর্বক্ষণ পীড়া দেয়, আমার জন্য কতটা কষ্ট তারা পেয়েছেন, পাবেন জীবনভর। একজন প্রবাসী পুরুষের প্রাক্তন স্ত্রী, (ছদ্মনাম) শিরিন নিজ কলঙ্ক উন্মোচনে জানান, স্বামীর অবর্তমানের সুযোগে প্রতিবেশী এক পুরুষ প্রেমের প্রলোভনে কিছুটা হলেও নমনীয় হয়েছিলাম, ভালোবাসার নামে প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে এবং পরবর্তীতে সেই সুযোগসন্ধানী গা-ঢাকা দিলেও আমি রক্ষা পাইনি পাপের প্রায়শ্চিত্ত থেকে। পরিণামে নিজ হাতে গড়া সাজানো-গোছানো সংসার ভেঙে গেল। প্রবাসী স্বামী বিশ্বাসঘাতক স্ত্রীকে মেনে নিতে চাইল না, ঘৃণায় অপমানে প্রকাশ্যে ডাক মারফত তালাকনামা পাঠিয়ে তিনি হলেন সারা জীবনের জন্য দেশান্তরী। আর আমি হলাম সমাজ সংসার নিগৃহীত জন। সতের বছর বয়সের গৃহপরিচারিকা সুলতানা ৬ মাসের শিশু সন্তান বিজলিকে মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে পুনরায় ঢুকে পড়েছে বান্দা বাসায়। মা সুলতানা সারাক্ষণ শুধু কাঁদে সন্তানের কথা মনে করে। এ নিয়ে বেগম সাহেবা কত বকা-ঝকা দেয়। তবুও সে কাঁদে ভুল জীবনের ভুল আবেগের কথা স্মরণ হলেই। সুলতানা জানায়, আপন বাবা-মা না থাকলেও পালক পিতা-মাথার কাছে সে সুখেই ছিল। তারা দরিদ্র ছিল, কিন্তু তাদের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। তবু সে তার বয়ঃসন্ধি আবেগ দমাতে পারেনি। অল্প পরিচয়ে প্রেমের মাত্র তিন মাসের মাথায় এক রিকশাচালকের হাতে ধরে ঘর ছাড়ে। এক বছর তিন মাসের মাথায় সুলতানার কোলে সন্তান এলে, তার তথাকথিত স্বামী হয় নিরুদ্দেশ, পালক পিতামাতা সন্তানসহ সুলতানাকে গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলে বাচ্চা নিয়ে বাসাবাড়িতে কেউ কাজ না দেয়ায় জীবন বাঁচাতে, সন্তানকে বাঁচাতে নামমাত্র মূল্যে নিজ সন্তানকে বিক্রি করেছে বলে জানায় সে, দুঃখ পরিতাপ প্রকাশ করে।
আমরা মাত্র কয়েকজন নারীর জীবন আলেখ্য শুনলাম। কিন্তু এমন অনেকে আছেন যারা তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা বাধ্য হন চেপে যেতে সমাজ ও পারিপার্শিকতার ভয়ে। যার দরুন অপরাধীরা সহজে পার পায়, অপরাধ বহুগুণে হয় সংক্রমিত, নারীরা হন নতুন নতুন প্রতারণার শিকার। আমরা আর প্রতারিত হতে চাই না। হতে চাই সাবধানী প্রতিটি ক্ষেত্রে, তা হোক যত গভীরতম ভালোবাসা কিংবা প্রেমের ভুবন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন