শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলা ফিচার

২২ কোটি টাকার রোলবল বিশ্বকাপ

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : ২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার রোলবল বিশ্বকাপের চতুর্থ আসরের বর্ণাঢ্য আয়োজন অগোছালো হলেও সফলভাবেই তা শেষ করেছে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দান সংলগ্ন নব-নির্মিত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে পর্দা ওঠার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি একই ভেন্যুতে আয়োজন করা হয় আসরের সমাপনী অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি থেকে বিশ্বকাপের উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
আর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শ্রী বীরেন শিকদার এমপি, উপমন্ত্রী  আরিফ খান জয় এমপি, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. জাহিদ আহসান রাসেল,  আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বাস্তবায়নের মূখ্য আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুব ও ক্রীড়া সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক রোলবল ফেডারেশনের সভাপতি পেনিয়া কাবিঙ্গে, সাধারণ সম্পাদক রাজু ডাবাদে এবং বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
চল্লিশ দেশের ছয়শ’ প্রতিযোগির অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স এবং মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম মুখরিত হলেও বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য সব ক্রীড়াবিদের কেন্দ্রস্থলই ছিল শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং  কমপ্লেক্স। আসরে অংশ নেয়া সব দেশের ক্রীড়াবিদরাই এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ‘জাগো বাঙ্গালী জাগো’ গানের তালে তালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত খেলোয়াড়রা উল্লাসে মেতে ওঠেন। তারা গ্যালারিতে নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে এর আগে আইসিসি বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা এশিয়া কাপ ক্রিকেটের মতো বড় আয়োজন হলেও অংশ নেয়া দলগুলোর সংখ্যায় সব টুর্নামেন্টকে ছাড়িয়ে গেছে রোলবল বিশ্বকাপ। ৪০ দেশের অংশগ্রহণে এমন আয়োজন লাল-সবুজদের জন্য ইতিহাস হয়েই থাকছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ্য করে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে দু’পাশের গ্যালারি ছিল দর্শকপূর্ণ। আনন্দের রঙে রঙিন ছিল পুরো কমপ্লেক্স। চোখে চেয়ে দেখার মতই এ অভুতপূর্ব দৃশ্য। ‘জাঁগো বাঙ্গালী জাঁগো; গানের তালে তালে বিডি কোস্পানির শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন ছিল দারুণ। ছোট্ট পরিসরে হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই প্রথমবার দেশীয় সংস্কৃতি বিদেশীদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস চালায় আয়োজকরা। এরপর অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নাম লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিডি কোম্পানির মেয়েরা লাল-সবুজ পোষাকে একে একে মঞ্চে উঠে আসেন। বেজে ওঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালবাসি’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই সবাইকে এমন ক্রীড়াযজ্ঞে অংশ নেয়ার জন্য স্বাগতক জানান ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কামাল আজাদ। তিনি বলেন, ‘স্বাগতিক দেশ হিসেবে আগের চেয়ে ভালো করার চেষ্টা করবো আমরা। তিন মাস অনুশীলনের মধ্যে ছিল ছেলে মেয়েরা। এর মধ্যে ভারত ও নেপালের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে জয়ও পেয়েছে তারা। তাই বলা যায় বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত আমরা।’ অনুষ্ঠানের শেষ দিকে প্রধান অতিথি রোলবল বিশ্বকাপের শুভকামনা জানিয়ে উদ্বোধন ঘোষণার পর মিনি আতসবাঁজির আলোকচ্ছ্বটায় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো কমপ্লেক্সে। এরপর মঞ্চের দু’পাশে বিশাল সাইটস্ক্রিনে ভেসে উঠে জাতীয় জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবারের সদস্যদের পরিচিতি এবং বিগত দিনগুলোতে ক্রীড়াক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের দৃশ্য। এর পর আয়োজন হয় মনমাতানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এতে শহীদদের উদ্দেশে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী। সামিনার পর সংগীত পরিবেশন করেন এসআই টুটুল। তার গান পরিবেশনের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডিজে ডোয়াইন ব্র্যাভোর ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’, ডিজে সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চতুর্থ রোলবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন খেলাধুলার মান উন্নয়নে পদ্মার চরে একটি ক্রীড়াপল্লী ও অলিম্পিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে। সেই পদ্মার চরেই আমরা একটি উন্নতমানের ক্রীড়াপল্লী গড়ে তুলবো, যেখানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা আয়োজন এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এমনকি একটি অলিম্পিক কমপ্লেক্সও আমরা  তৈরি করতে চাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন,‘ট্র্যাক থ্রি ডিপলোমেসি’র এই সময়ে খেলাও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, আঞ্চলিক সম্পর্ককেও মজবুত করতে পারে।’ চল্লিশ দেশের প্রায় ছয়শ’ ক্রীড়াবিদের অংশগ্রহণে সপ্তাহব্যাপী এই ক্রীড়াযজ্ঞের যবনিকাপাত ঘটলো। এদিন সকালে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার ছোট ভাইয়ের নামে ‘শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের’ উদ্বোধন করেন। পরে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের অধিনায়কদের হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শ্রী বীরেন শিকদার এমপি, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. জাহিদ আহসান রাসেল,  আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বাস্তবায়নের মূখ্য আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুব ও ক্রীড়া সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক রোল বল ফেডারেশনের সভাপতি পেনিয়া কাবিঙ্গে, সাধারণ সম্পাদক রাজু ডাবাদে এবং রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
টুর্নামেন্টে ২৮ গোল করে সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ১ লাখ টাকা পান বাংলাদেশের দ্বীন হাসান হৃদয়। ভারত পুরুষ বিভাগে ইরানকে ৮-৭ গোলে এবং মহিলা বিভাগে ৬-৪ গোলে ইরানী মহিলা দলকে হারিয়ে উভয় বিভাগেই শিরোপা জিতে। বাংলাদেশ নারী দল প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিলেও পুরুষরা সেমিফাইনালে খেলে। তবে দুর্ভাগ্য লাল-সবুজ পুরুষ দলের। তারা সেমির গন্ডি টপকাতে পারেনি। ইরানের কাছে হেরে ছিটকে পড়ার পর স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও কেনিয়ার কাছে হেরে যায় স্বাগতিকরা। ফলে চতুর্থ স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশ পুরুষ দলকে।
সমাপণী অনুষ্ঠানের শুরুতেই ৪০ দেশের খেলোয়াড়রা নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে রোলার স্কেটিং ফ্লোরে সারিবদ্ধ ভাবে জড়ো হন। এরপর শেখ রাসেলকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি গানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোলা স্থিরচিত্র বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গাওয়া ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গানের  সঙ্গে দলগত নৃত্যও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,‘ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমরা প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ক্রীড়া শিক্ষা প্রশিক্ষণ, বিশেষায়িত ক্রীড়া শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের সামগ্রিক পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং ধীরে ধীরে আরও জোর দেবো। আজকাল খেলা মাঠে গড়ালে তা শুধু খেলোয়ারদের মধ্যে কেবল বন্ধুত্ব কিংবা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। খেলাধূলার মাধ্যমে একটি দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অন্য দেশের খেলোয়াড়দের মতবিনিময়ের সুযোগ হয়। এতে বন্ধুত্বের সূচনা হয়। এবারের আয়োজনে অংশ নেওয়া ৬২৫ জন ক্রীড়াবিদ বাংলাদেশ দেখে গেলেন। তাদের প্রতি আহ্বান আপনারা নিজের দেশে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করবেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে যা দেখলেন, তা বলতে পারবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোলবল বাংলাদেশে খুব পরিচিত নয়। উদ্যোগ নিতে হবে, খেলাটি যেন আরো পরিচিতি পায়। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। যুব সমাজ যেন খেলাধূলার প্রতি আরো সম্পৃক্ত হয়, সেজন্য আমরা প্রত্যেকটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম এবং জেলাগুলোতে স্টেডিয়ামের সাথে সাথে সুইমিংপুল নির্মাণসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে যাচ্ছি। খেলাধুলার প্রতি যেন ছেলেমেয়েরা আরো আগ্রহী হয়।’
আসরে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো- ভারত, আইভরিকোস্ট, সিয়েরালিওন, ওমান, ইংল্যান্ড, উগান্ডা, মিশর, ইরান, আর্জেন্টিনা, তানজানিয়া, লাটভিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, রুয়ান্ডা, গিনি, মিয়ানমার, ভুটান, ফিজি, হংকং, ফ্রান্স, চীন, বেনিন, নেপাল, থাইল্যান্ড, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, ডেনমার্ক, সেনেগাল, বেলারুশ, তুরস্ক, সৌদি আরব, উরুগুয়ে, নেদারল্যান্ডস, ভিয়েতনাম, চাইনিজ তাইপে, জাম্বিয়া, সেøাভেনিয়া, ফিলিপাইন ও স্বাগতিক বাংলাদেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন