অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এদেশের নারী সমাজের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে নারীদের ভ‚মিকা অপরিসীম। সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে নারীর অবদান বা ভ‚মিকা ছাড়া সম্ভব না। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় জড়িতদের কেউ ভাল ছবি আঁকে, গান গায় এবং লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত। সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর কয়েকজন সাংবাদিকের প্রকাশিত বই নিয়ে এ আয়োজন। তাদের সুপ্ত বাসনাগুলো মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। এদের সবাই এক একজন সফল সাংবাদিক, নারীজাগরণ ও সমাজ-প্রগতির পথিকৃত।
শান্তা মারিয়া
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একজন লেখক। লেখালেখির সাথে তিনি দীর্ঘদিন জড়িত। পরপর কয়েক বছরই বইমেলায় শান্তা মারিয়ার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এবারের বইমেলায় লেখকের ভ্রমণগদ্য প্রকাশিত হয়েছে। নাম ‘চকবাজার টু চায়না’। এটা চীনদেশে লেখকের সাংবাদিক হিসেবে চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালে চাকরির অভিজ্ঞতা। এটি শান্তার দশম বই। যা রাইজিং বিডি অনলাইনে ধারাবাহিক প্রকাশের সময় সাড়া জাগিয়েছিল। লেখকের অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই আছে। মাধ্যাকর্ষণ (১৯৭৯), সকল দোকান বন্ধ ছিল (১৯৯৬), ‘এবং একতারা বৃক্ষ’ (২০০০), ‘আমরা বলে কোনো গল্প নেই’ (২০০৪), ‘গন্তব্য কার্তিকপুর বাংলো’ (২০১০), ‘ওম মণি পদ্মে হুম (২০১৬)’ এগুলো কবিতার বই। এছাড়াও ছোটদের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (২০০৪) এবং বিশ্বের সেরা রূপকথার গল্প (১৯৯৬) সম্পাদিত। আকবর দ্য গ্রেট (১৯৯৬) ইতিহাসের গল্প।
লাবণ্য লিপি
বিশ্ব ভালবাসা দিবসে দেশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে লেখক ও সাংবাদিক লাবণ্য লিপির নতুন উপন্যাস ‘বুকের ভেতর বৃষ্টি নামে’। এটি লেখকের তৃতীয় উপন্যাস। এর আগে ‘সে রাতেও পূর্ণিমা ছিল’ ও ‘মেঘের ওপারে আকাশ’ নামে দুটি উপন্যাস বের হয়েছে অয়ন প্রকাশন থেকে। নির্বাচিত গল্প সংকলন ‘বৃত্তের বাইরে’। তার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ছোটদের জন্য গল্পের বই ‘স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা’। বইটি প্রকাশিত হয়েছে অয়ন প্রকাশন থেকে। এ বছরও দেশ পাবলিকেশন্স থেকে বের হচ্ছে ছোটদের গল্পের বই ‘অর্কর গাছ বন্ধু’। এছাড়াও মুক্তধারা থেকে বের হয়েছে রূপচর্চা বিষয়ক বই ‘সাজঘরের সাতকাহন’ ও অবসর প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে সম্পাদিত রেসিপির বই ‘উৎসবের রান্না’। ২০১২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা’।
মেহেরুন নেছা রুমা
প্রতি বছরের মতো এবারও একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মেহেরুন নেছা রুমার একটি গল্পগ্রন্থ। নাম-জীবনের গল্প। ২০টি ছোটগল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। পরিবার, সমাজ, দেশ ও মানুষের জীবনের ছোট ছোট কথা, ব্যথা-বেদনা, প্রেম-বিরহ, সুখ-দুঃখ, কষ্ট-সংগ্রাম, সম্পর্কের নানা টানাপড়েন ইত্যাদি বিষয় সম্বলিত এই গ্রন্থখানি। আছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের চরিত্র অবলম্বনে গল্প। একই সঙ্গে রয়েছে একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা এবং তার পরিবারের কথা। এতে আছে ঢাকা শহরে বসবাসরত কর্মজীবী ব্যাচেলরদের, নারী শিক্ষার্থীদের জীবনযাপন নিয়ে কথা, পরিবার, সম্পর্ক, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক, সম-অসম প্রেম, পাস্পরিক দ্ব›দ্ব, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামী, অশিক্ষার প্রতিফল, শ্রেণিগত বৈষম্য নিয়ে গল্প। বইটি প্রকাশ করেছে ‘অক্ষর’ প্রকাশনী। পাওয়া যাচ্ছে ৫৬৯, ৫৭০, ৫৭১, ৫৭২ নম্বর স্টলে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রæব এষ। বইটির মূল্য ২০০ টাকা। লেখকের অন্যান্য বই- যে জীবন হয়নি যাপন (গল্পগ্রন্থ), সম্পর্ক (৩টি প্রায় উপন্যাস নিয়ে একটি গ্রন্থ), ওইখানে যেওনাকো তুমি (নারীচরিত উপন্যাস), অভিলাষী জোছনা (উপন্যাস), অপরাহ্ণ প্রেম (উপন্যাস), নারী-উৎস থেকে নিরন্তর (গবেষণাধর্মী ফিচার সংকলন)।
মাহমুদা আকতার
কেউ ভালো গল্প লেখেন আবার কেউ সুন্দর গান করেন কিংবা গান লেখেন। কেউবা ভালো কবিতা আবৃত্তি করেন বা ভালো ছবি আঁকেন। কিন্তু একজনের পক্ষে কি একসঙ্গে সব কিছু করা সম্ভব! বিষয়টি সাধারণের কাছে অসম্ভব মনে হলেও ব্যতিক্রমী
প্রতিভার অধিকারী হয় হাতে গোনা কিছু মানুষ। তাদেরই একজন মাহমুদা আকতার। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তার লেখনীও মজবুত। মাহমুদার প্রথম উপন্যাস চৈতি হাওয়া। গত বছর ২১শে বইমেলায় প্রকাশ পায়। সাত ফর্মার এ বইটির প্রকাশক হাতেখড়ি। এ বছরে ফিকশন বই ফড়িং ওড়ার দিন প্রকাশ পেয়েছে। হাতিখড়ি প্রকাশনা থেকেই। বাংলা একাডেমির বইমেলায় সাংবাদিক ও লেখক মাহমুদা আকতারের বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। অন্যধারা সাহিত্য পত্রিকায় আমার এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে। মাহমুদা আকতারের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও বসবাস ঢাকাতে। পড়াশোনা করেছেন কামরুন্নেসা স্কুল, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিভৃতচারী এই লেখকের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘শ্বেত হংসীর কান্না’ বেরিয়েছিল বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে। দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘বালিকা ও চিল’। তার প্রথম উপন্যাস ‘চৈতি হওয়া’। ‘ফড়িং উড়ার দিন’ তার দ্বিতীয় উপন্যাস। চার ফর্মার বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, হাতেখড়ির স্টলে।
বিউটি হাসু
সাংবাদিক বিউটি হাসুর লেখা ছোটগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও মতামতপ্রধান রচনা স্বনামে ও বেনামে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। “জলহীন তৃষ্ণার পাথার” তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মানব-মানবীর প্রেমের শাশ্বত রূপ ও অন্তরদহন, সমাজের নির্মম বাস্তবতা, মানুষের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, অবচেতন মনের কল্পনা ও রূঢ় বাস্তবতার দ্ব›দ্ব, গভীর মর্মব্যথা, হৃদয়ের গহিনে অনন্ত রক্তক্ষরণ, আজন্ম তৃষ্ণা কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। লেখকের সাথে আলাপচারিতায় তিনি জানান, প্রায় এক যুগ ধরে জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতা করছি। আমার লেখা ছোটগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও মতামত প্রধান রচনা স্বনামে ও বেনামে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে “জলহীন তৃষ্ণার পাথার” আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। সেই শৈশব থেকে লেখার হাতেখড়ি। কোন কিছু না বুঝেই মাত্র ৭ বছর বয়সে একটি ছড়া লেখা, এরপর আমার মাকে নিয়ে লিখি ‘মা’ কবিতা। সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে এলোমেলা শব্দে সাজানো কবিতায় শেষ হতো ডায়েরীর পাতা। লেখিকা হওয়ার সুপ্ত বাসনা আমার মনে ছিল। এই ভাবনা থেকেই পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাই প্রাধান্য দেয়া।
য় শাহানাজ বেগম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন