বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

ছদ্মবেশী পুরুষের নারী রূপ ও উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ কামাল হোসেন : ‘এদেশে কবি আর কাকের সংখ্যা তাহলে সত্যি সত্যি বেড়ে গেল।’ এমন অপমান কারো ভালো লাগার কথা নয়। শুভ্ররও নয়। ফেসবুকে তার পোস্ট করা কবিতায়, অচেনা অজানা কোনো এক পুষ্পিতার এমন কমেন্ট। রাগে-ক্ষোভে সে ফুঁসছে। প্রতিভার অবমূল্যায়ন, তীর্যক কটাক্ষ সহ্য করা যায় না। তৎক্ষণাৎ সে ইটের বদলে পাটকেল তৈরি করে ফেলে। পাল্টা লিখে দেয়-

‘কাক তবুও ভালো, শরীর চক চক করে। মসৃণ পালিশ করা। তোমার গা থেকে তো উৎকট গন্ধ বেরুচ্ছে, ফেসবুকেও আসা যায় না ওয়াককক... ...থু!!’ব্যস লেগে গেল ধুন্ধুমার কান্ড। পাল্টাপাল্টি চলতে থাকে আরও বেশ কিছু দিন। একসময় দুজনের ঝগড়া, হানাহানি শেষ হয়। সম্পর্কে নতুন বাঁক নেয়। ভালোবাসা তৈরি হয় দুজনার মাঝে। শুভ্র ঘূর্ণাক্ষরে টের পায় না, সে অজান্তে ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে। পুষ্পিতা ছদ্মবেশী নারীর আড়ালে একজন ভÐ পুরুষ। নিজের পরিচয় গোপন করে ফেসবুকে ফেক আইডি খুলেছে। এভাবেই চলতে থাকে। এগোতে থাকে তাদের ভালোবাসা। একসময় সর্বস্ব লুটেপুটে নিয়ে যায় ছদ্মবেশী পুষ্পিতা। পথে বসে বেচারা আহম্মক শুভ্র। গল্পটা আরো এগোতে পারত। হয়তো ভাবছেন ভালোই লাগছিল। কিন্তু সেটা আর করা যাচ্ছে না। এমনিতে অনেকটা বেড়ে গেছে। ফেসবুক জগতে এটা এখন রমরমা ব্যবসা। এটা নিঃসন্দেহে একটা অপরাধ।
মারাত্মক গর্হিত কাজ। পুরুষ সমাজের জন্য অপমানজনকও বৈকি। কারণ পুরো বিষয়টা যেমন পুরুষকে ছোট করার একটা মারাত্মক প্রয়াস। নারীকে আরো বেশি। কারণ দোষ না করেও নারী জাতির ওপর ষোলআনা দোষ চাপানো হচ্ছে। উদোর পিÐি বুদোর ঘাড়ের মতো। মুহূর্তে ভিকটিম পুরুষের মননে এক প্রকার নারীবিদ্বেষী মনোভাবও সৃষ্টি হচ্ছে। ভাবছে একজন নারী-ই বুঝি তার জীবনটাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। অথচ ছেলেটা একটুও জানতে পারল না, নেপথ্যে প্রকৃত ঘটনাটা আসলে কী? প্রকৃত দোষী কে? ফেসবুকে ফেক আইডির সংখ্যা বর্তমানে অসংখ্য। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে। প্রকৃত সংখ্যাটা নেহায়েত কম না। এগুলোর বেশির ভাগ সুন্দর সুশ্রী নারীর ছবি দিয়ে আড়ালে-আবডালে কোনো না কোনো বিকৃত পুরুষ চালিত করছে। স্কুল বা কলেজের কোমলমতি ছাত্রদের টার্গেট করে তাদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগদ অর্থকড়ি, মোবাইল, ল্যাপটপসহ আরো অনেক কিছু হাতিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। নারীর ছদ্মবেশে নেপথ্যে পুরুষটি ঠড়রপব পযধহমবৎ ধঢ়ঢ়ং দিয়ে অনায়াসে নারীদের মতো কথাও বলছে। কবিতা আবৃতি করছে। গান শোনাচ্ছে। যন্ত্রটি সয়ংক্রিয়ভাবে অনায়াসে বাঁজখাই পুরুষ কণ্ঠকেও নারীর মতো সুরেলা, মায়াবী ও মোহনীয় করে তুলছে। অবিকল নারী কণ্ঠ। বোঝার কোনো সুযোগ নেই। এড়ড়মষব ংবধৎপয করে আজকাল দেশি-বিদেশি অনেক সুন্দরী নারীর একাধিক ছবি প্রোপাইলে ব্যবহার করে এক শ্রেণির অসাধু মানুষ এ মারাত্মক ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিচ্ছে। কোমলমতি নারীর সৌন্দর্য, স্বকীয়তা, সরলতা ইজ্জত ও আব্রæকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছে। এসব ছেলেমেয়ে সুন্দর সুন্দর ছবির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদের অনাগত ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। অল্প বয়সে নারীর প্রতি তাদের অন্তরে ঘৃণার বীজ বপন হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ঘৃণার বিষবাষ্প। মাতৃরূপী মা-বোনকে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করতে শিখছে। একসময় মদ, জুয়া, নেশায় মত্ত হচ্ছে। অঙ্কুরে তাদের সুন্দর সোনার ভবিষ্যৎ নিকষ কালো অমাবস্যার আঁধারে পতিত হচ্ছে। ঢেকে যাচ্ছে অমিত সম্ভাবনা। গত ৮ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছর এ দিবসটিকে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যতা ও সম্মান বজায় রেখে বিশ্বব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করে থাকে। এ বছরও পালন করেছে। নারী সমাজের ওপর চলমান সহিংসতা রোধ, নারী অধিকার আদায়, নারী ক্ষমতায়ন, সুরক্ষা ও মাতৃত্বকালীন পরিচর্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জোর আলোচনা হয়। সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য সরকারি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ ক্রোড়পত্র, সাময়িকী প্রকাশ করে থাকে। টিভি চ্যানেলগুলো নারী দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের পসরা সাজিয়ে থাকে। দিবসটি আয়োজনে কোনো ভুলচুক বা কমতি থাকে না।
অথচ দিবসটির তাৎপর্য ভুলে পুরুষরূপী কতক মানুষ সুযোগ পেলে নারীকে বিভিন্নভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও পরিবার সমাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সকল স্তরে নারীকে অপমান, অসম্মান, নির্যাতনের হিড়িক পড়ে গেছে। নারী দিবসে নারীকে নির্যাতনের খবরও পাওয়া যায়। প্রতি বছর দিবসটি আসে যায় কিন্তু নারীর প্রতি চলমান সহিংসতা, পীড়ন, নির্যাতন একটুও কমে না। যৌন নির্যাতন অতীতের সকল সমীক্ষা কিংবা জরিপকে দিনকে দিন ছাড়িয়ে যায়। কখনো কখনো রক্ষক হয়ে ওঠে ভক্ষকের ভ‚মিকায়। নীতু বা মিতুর মতো জঘন্য হত্যাকাÐ আমাদের সভ্য সমাজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা এখনো কতটা অসভ্য রয়ে গেছি। এ সমাজে এখনো বদরুলের মতো লোকেরা ঘুর ঘুর করছে। অনেকে আবার আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে দিব্যি বুকে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিকটিম পরিবারকে ক্ষণে ক্ষণে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। প্রতিটি রাত প্রতিটি দিন ভুক্তভোগী পরিবার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে। মুখ ফুটে কিছু বলে না কিংবা বলতে সাহস পায় না। সমস্ত অপমান, অন্যায়, অপরাধ তারা মাটি কামড়ে সহ্য করে।
ফেসবুক বা টুইটারে আজ সর্বত্র নারীকে বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে। নিত্য নতুন এক এক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। নারীর ইজ্জত আব্রæ ভ‚লুণ্ঠিত হচ্ছে। নারীকে কেউ ভোগ্যবস্তু বা যৌন রসনার বিলাস বানাচ্ছে।
কেউবা পণ্য বানাচ্ছে। পুরুষের ইচ্ছেমাফিক যখন যেভাবে পারছে, নারীকে ব্যবহার করছে। পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য হিস্সা পাচ্ছে না। মুখ বুজে নারীকে সব কিছু ঘরে-বাইরে সহ্য করতে হচ্ছে। কেউ তার কষ্ট যন্ত্রণা বোঝার চেষ্টা করছে না। এমনিতে কথায় কথায় নারীর জন্য আমাদের দরদ উতলে উতলে উঠছে। কার্যত অনেকাংশে উল্টো চালচিত্র দেখা যায়। নারী খেলনা বস্তু। যে যেভাবে পারছি খেলছি।
পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বার বার চরিত্রের বদল হচ্ছে, চিত্রায়ণ একই থাকছে। তাই আসুন, নারী সুরক্ষা ও সম্মানে সবাই এগিয়ে আসি। নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিই। প্রতিটি নারীর অধিকার আদায়ে আমরা সর্বাগ্রে এগিয়ে আসি। ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নারীকে যেন ঘুঁটি হিসেবে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখি। প্রয়োজনে আইনের সহায়তা নিই। অপরাধ করে কেউ যেন পার পেয়ে যেতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখি। তাহলে নারী দিবসের তাৎপর্যতা ও গুরুত্ব সমাজে বা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যথায় নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
কবির আহমেদ বাচ্চু ২১ মার্চ, ২০১৭, ৬:০৯ এএম says : 0
কামাল ভাই, অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লেখেছেন, ফেইস বুকে এখন আসল আইডি থেকে ভুয়া আইডির সংখ্যা বেশি,, মেয়েদের প্রোফাইল থেকে ছবি ডাউনলোড করে মেয়ের নামে আইডি খুলে প্রতারণা করছে এক শ্রেণীর লোক,,,আর এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অপহরণ হচ্ছে অনেকে,,,,আর কিছু কিছু মেয়ে, ছেলে আছে প্রতি দিন নিজের ৫-৬ টা ছবি ফেইস বুকে আপলোড না দিলে রাতে ঘুম হয় না,,,,,,,
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন