স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ৫ বছর পর রাজধানীতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি করেছে বিএনপি। বদ্ধ খাঁচার পাখি যেনো ক্ষণিকের জন্য মুক্ত হয়েছিলো। তাই র্যালি রূপ নিয়েছিলো সমাবেশের। কোনো কোনো নেতা-কর্মীর পরস্পরের মধ্যে সাক্ষাৎ হলো এতোদিন পর। কর্মীর কাছে ফিরতে পেরে নেতা যেমন তুষ্টি প্রকাশ করেছেন; তেমনি নেতাকে কাছে পেয়ে কর্মীও আবেগে ফেটে পড়েন। ফলে আনন্দ র্যালিতে আবেগঘন পরিবেশের অবতারণাও ঘটতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৬ মার্চ বিএনপিকে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত ‘স্বাধীনতার র্যালী’ করার অনুমতি দিয়েছিলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া ২০১৫ সালের বিএনপি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় র্যালি করেছিলো মালিবাগ পর্যন্ত।
গতকাল রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য র্যালীতে নানা রঙ্গে ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত গোটা এলাকা সমাবেশ রূপ নেয়। বিকাল সোয়া তিনটায় র্যালিটি শুরু হলেও মাত্র ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে শান্তিনগরের কাছে পৌঁছায় মিছিলের অগ্রভাগ। ওইসময় মিছিলের শেষ ভাগ নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেলে সামনে রাজাকার-আলবদর গ্রেফতার করে প্রতিকি চিত্রসহ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি র্যালিতে শোভা পায়। র্যালির কারণে মালিবাগ থেকে কাকরাইল, বিজয় নগর, মতিঝিল সড়কের ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ‘স্বাধীনতার র্যালি’র উদ্বোধন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারের কাছে পরিষ্কারভাবে বলছি, আপনারা একটা আলোচনার মাধ্যমে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করুন, যার মধ্য দিয়ে দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটতে পারে শুধুমাত্র অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। সেটা সম্ভব নির্বাচনকালীন একটা সহায়ক নিরপেক্ষ সরকারের মধ্য দিয়ে। এটাই আজকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশে বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই স্বাধীনতার দিবসে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে সেই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে। আমরা আশা করবো, বাংলাদেশের মানুষ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি, জঙ্গিবাদকে প্রশ্র্রয় দেবেও না।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, জঙ্গি যদি এদেশে সত্যি সত্যি এসে থাকে তাহলে গণতন্ত্রকে মুক্তি দিন, মিছিল-মিটিং মুক্তি দিন। তাহলে দেখবেন জঙ্গিরা মিছিল-মিটিং এর ভিড়ে কোথায় চলে যায়। আর যদি আপনারা গণতন্ত্র মুক্তি না দেন, মিছিল-মিটিংয়ের অনুমতি না দেন, তাহলে মনে করবো জঙ্গি ধরার নামে নাটক চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে যাচ্ছেন। আপনি যদি দেশের মানুষের প্রাণের দাবি তিস্তা চুক্তি করে না আসতে পারেন, তাহলে আপনি দেশের সাধারণ মানুষকে মুখ দেখাতে পারবেন না।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের থেকে শুরু হওয়া র্যালির সম্মুখভাগে বিশাল আকৃতির লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা এবং এরপর ধানের শীষের বিএনপির পতাকা ছিলো। র্যালি কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর ঘুরে নয়া পল্টনে এসে শেষ হয়। এতে মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, উলামা দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, জাসাসসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দলীয় পতাকা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড-ব্যানার হাতে নিয়ে র্যালীতে যোগ দেয়।
র্যালীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়াও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, আব্দুস সালামসহ অঙ্গসংগঠনের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আব্দুুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, নুরী আরা সাফা, হেলেন জেরিন খান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, হেলাল খান, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ নেতারা অংশ নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন