বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সীমার আশা-ভরসা ঐক্যবদ্ধ দল সুষ্ঠু নির্বাচনের আশায় সাক্কু

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের বাকি মাত্র দুইদিন। দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপিধানের শীষ প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কুর নির্ঘুম রাত কাটছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ঘাম ঝরালেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনী এলাকার ভোটার বা বাসিন্দা না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা থাকায় গত রাতেই সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়তে হয়েছে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের। নির্বাচনী এলাকায় মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য ভারী-হালকা যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে গোটা নির্বাচনী এলাকা। আজ মধ্যরাতে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হচ্ছে। আর এ শেষ মুহূর্তে জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমা বলছেন, কুমিল্লার ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ নৌকার বিজয় এনে দেবে। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী সাক্কু ভোটের মাঠ গুছিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় ইসির ভূমিকার দিকে আশায় বুক বেঁধেছেন।  
প্রচারণার ডামাডোল শেষ হচ্ছে আজ রাত বারোটার মধ্যেই। এরপর অপেক্ষা শুধু ভোটের। ১৫ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে ভোটের মাঠে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয় প্রার্থীদের। টানা ১৩ দিনের পথচলায় কুসিক নির্বাচনের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর প্রচারণায় যুক্ত হয় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর। কেন্দ্রিয় নেতা বলে কথা। আর তাই কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ ঘিরে দুই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে বাড়তি উদ্দীপনা দেখা দেয়। কখনো দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে, কখনো প্রার্থী ছাড়াই দলবেঁধে ভোট চাওয়ার প্রচারণায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নগরী। অতীতের কোনো নির্বাচনেই একসঙ্গে দুই দলের এতো কেন্দ্রীয় নেতা দেখেনি কুমিল্লাবাসী। টানা ১৩ দিন দলীয় প্রার্থীর জন্য ঘামঝরানো কাজ করে নির্বাচনী এলাকা ছাড়লেন দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। আজ সকাল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত চলবে প্রার্থীদের গণসংযোগ, উঠোন বৈঠকসহ নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা থাকায় দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে আজকের শেষদিনের প্রচারণায় দেখা মিলবে না কেন্দ্রীয় নেতাদের। কারণ তারা নির্বাচনী এলাকার ভোটার বা বাসিন্দার আওতায় পড়ছেন না। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগেই আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।
আগামী ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎসবের সঙ্গে বিরাজ করছে শঙ্কাও। এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। একই সাথে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপি দাবি করেছে ভোট প্রদানের কক্ষ ছাড়া সকল ভোটকেন্দ্রে ওয়েব ক্যামেরা স্থাপনের। ভোটাররা বলছেন পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। ক্লিন ইমেজ আর পরিবর্তনের   শ্লোগান এনে ভোটারদের নজর কেড়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনি বলেন, কুমিল্লা আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থক শেখ হাসিনার জন্য মাঠে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর নৌকার জন্য মাঠে থাকবেন। যারা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনীতি করেন তারা গত একমাস ধরে মাঠে নেমে নৌকা প্রতীকের জন্য বিরামহীনভাবে কাজ করেছেন। তারা কখনো ঘরে বসে থাকতে পারেননি। কুমিল্লা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে, থাকবে। আর এই ঐক্যবদ্ধতাই এবারের সিটি নির্বাচনে নৌকার জয় এনে দেবে, ইনশাল্লাহ।
এদিকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং গত পাঁচ বছরে নগরীর উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে ভোটারদের অবস্থান অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা বলছেন বিশ্বমানের কুমিল্লা নগরী গড়তে সাক্কু ইশতেহারে যে ২৭টি প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তা ভোটার ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিএনপি নেতারা দৃঢ়তার সাথে বলেন, দলের নেতাকর্মীরা ভোটের দিন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাহস ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে ধানের শীষের বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবে। নগরবাসী আগামী দিনের শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির কুমিল্লা গড়তে ৩০ মার্চ নীরব ভোট বিপ্লব ঘটাবে। জয় নিয়ে এমন আশার মধ্যেও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশনের দিকে আশায় বুক বেধে আছেন বিএনপি প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং পরিবেশ তৈরি করা হোক। আমার বিশ্বাস, নতুন নির্বাচন কমিশন যেহেতু এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তাই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে জনগণের রায় প্রতিফলনের বাস্তবায়ন ঘটাবেন।       
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল স্বাক্ষরিত চারটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা কিংবা ভোটার নয় এমন ব্যক্তিদের সোমবার রাত বারোটার মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে হবে। একই সময় থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটর সাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। মঙ্গলবার রাত বারোটা থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো জনসভা, অনুষ্ঠান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা না করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ৩০মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণের বিষয়টি জানানো হয়। রিটানিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান,  সোমবার রাত বারোটার পর থেকে আমরা পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে আবাসিক হোটেলসহ সন্ধিগ্ধ স্থানে অভিযান পরিচালনা করবো, এসব স্থানে কোনো বহিরাগত আছে কিনা। পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মঙ্গলবার থেকে গোটা নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে। কোন অবস্থাতেই কাউকে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার সুযোগ দেয়া হবেনা। প্রার্থীদের কোনো রকম অভিযোগ আসলে আমরা তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখনো পর্যন্ত এখানকার নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত। প্রার্থীরা ইতিমধ্যে আশ্বস্ত হতে পেরেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। ভোটারদেরকেও আশ্বস্ত করতে চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছি মনে কোনো শঙ্কা না রেখে নিঃসংকোচে বৃহস্পতিবার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
nurul ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১০:৪৯ পিএম says : 0
sakku tumi agi chulu subai achi tumar sati danir sis marker vod din ok
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন