শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নৌকা-ধানের শীষের লড়াই

কুসিক মেয়র কাউন্সিলর নির্ধারণে আজ আশা-আকাক্সক্ষার ভোট

| প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : অপেক্ষার পালা শেষ। আজ শুরু হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ নির্বাচন নিয়ে আশা-আশঙ্কার দোলাচলে রয়েছে রাজনৈতিক মহল। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচন ঘিরে ভোটের মাঠে শুরু হয় রাজনৈতিক উত্তাপ-উত্তেজনা। নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী হলেও আলোচনা ও তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আঞ্জুম সুলতানা সীমা এবং বিএনপিধানের শীষ প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু। এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে জল্পনা ও বিশ্লেষণের শেষ নেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। তবে নগরবাসী বলছেন, নগরকর্তা যিনিই হোন না কেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেই জিততে হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা গত ১৪-১৫ দিন ধরে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনী এলাকা ছেড়েছেন। এখন সীমা ও সাক্কুকে নিয়ে মূল্যায়নের জায়গায় রয়েছেন নগরবাসী। নির্বাচনে নগরীর দুই লক্ষাধিক ভোটারের রায়ে আজকে প্রতিফলন ঘটবে সীমা ও সাক্কুর মধ্যে কে হবেন নগর অভিভাবক। এ নির্বাচন শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, জাতীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। আজকে ভোটের ফল কী হয় তা জানতে সারাদেশের মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পরিবর্তনের ¯েøাগান নিয়ে আসা সীমা নাকি নগর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় থাকা সাবেক মেয়র সাক্কুকে বেছে নেবেন ভোটাররা- এমন সিদ্ধান্তের জন্য এখন শুধুই অপেক্ষা। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট দেবেন প্রায় দুই লাখ ভোটার। মেয়র পদে চার প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা নৌকা এবং বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও বাকি দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তারা প্রতীক নিয়ে জেএসডির শিরিন আক্তার ও টেবিল ঘড়ি নিয়ে স্বতন্ত্র থেকে মামুনুর রশীদ প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে ৪০ জন মহিলা ও সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৪ জনসহ মোট ১৫৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৬টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ব্যালট ছাপানো হয়েছে ৬ লাখ ২২ হাজার ৬৯৮টি। ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৩টি ভোটকেন্দ্রের ৬২৮টি কক্ষে এসব ব্যালটে রায় জানাবেন ভোটাররা। এবারে মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন মহিলা ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারসহ প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় চার হাজার সদস্য রয়েছেন ভোটের নিরাপত্তায়।
সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে থাকলেও শঙ্কা কাটছে না ভোটারদের। নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কি না এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ ভোটাররা। গতকাল রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা যায় নির্বাচন ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠার কথা। গত মঙ্গলবার ও বুধবার পুলিশ নগরীর কয়েকটি এলাকা থেকে বিএনপির একাধিক কর্মীকে আটক করেছে। নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, শঙ্কা তো রয়েছেই। কেননা বিনা কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা শুরু থেকে বলে আসছি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গড়ে তোলা হোক। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর দিকে স্থানীয় প্রশাসনের এক ধরনের প্রভাব রয়েছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। নির্বাচনে এ ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করা উচিত নয়। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চাই এ নির্বাচনে অন্তত ভোটাররা নির্বিঘেœ নিরাপদে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসুক। আমি বিশ্বাস করি সুষ্ঠু ও সুষম ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, নির্বাচনে কালো টাকার ছড়িছড়ি চলছে। আমি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ প্রত্যাশা করছি। নগরবাসীর মধ্যে এবার একটা চেতনা জেগে উঠেছে। আর সেটা হচ্ছে পরিবর্তনের চেতনা। নগরীর যথাযথ উন্নয়নে ভোটাররা এবার নৌকা প্রতীকের পক্ষেই তাদের রায় জানাবেন। মনোনয়ন পাবার পর থেকে সার্বিক প্রচারণায় নগরীতে নৌকা জয়ের জোয়ার উঠেছে। আমি চাই সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটাররা যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং আমার সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের যে পজেটিভ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে আমি আশাবাদী নির্বাচনে নৌকা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের আভাস দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মÐল দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কোনো মহলের বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন নির্বাচন কমিশন। ভোটাররা যাতে নিরাপদে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে স্বাধীনভাবে বেছে নিতে পারে এমন নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে উঠেছে। ভোটের দিন নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের স্ট্রাইকিং টহল ফোর্সের তৎপরতা থাকবে। ২৬ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাবের ৩৪টি টিম এবং পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রায় চার হাজারের বেশি নিরাপত্তা বাহিনী ও কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো মহল প্রশ্ন তুলুক সেই সুযোগ দেয়া হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেস সে ধরনের নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাতে আমরা আশা করি কোনোরকম শঙ্কা না রেখে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন এবং নির্বিঘেœ নিরাপদে ভোট দিয়ে ঘরে ফিরবেন। প্রার্থীরাও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করছি সব ধরনের শঙ্কা দূর করে আনন্দমুখর পরিবেশে কুমিল্লায় ভোট হবে। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। কোথাও অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা রয়েছে। কারো ব্যর্থতার জন্য ভোট বিঘিœত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে গতকাল বেলা ১২টা হতে কুমিল্লা টাউন হল থেকে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনী সরঞ্জাম হস্তান্তর করা হয়। তার মধ্যে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, প্যাড, সিল, অমোচনীয় কালি, সুই, সুতা, স্ট্যাপলার মেশিন, চটের বস্তাসহ প্রায় ৫০টি উপকরণ পুলিশি পাহারায় ১০৩টি ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়। দায়িতপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দুপুর থেকেই পৌঁছে যায় স্ব-স্ব কেন্দ্রে।
প্রসঙ্গত, ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা পৌরসভা এবং ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে নিয়ে ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিলা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খানকে প্রায় ত্রিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সিটির মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। পাঁচ বছর পর এবারের নির্বাচনে আফজল খান কন্যা ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার সঙ্গে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
MD Elias ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৩ এএম says : 0
je kono vabe e houk Awamileuge jitbe
Total Reply(0)
kawsir ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৪ এএম says : 0
Susto hole BNP jitbe ata sure.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন