শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্বার্থবিরোধী চুক্তি হলে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত
আফজাল বারী : দেশবাসীর দৃষ্টি এখন প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের দিকে। সফরটি  নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। দলের সিনিয়র ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে এ সংক্রান্ত একটি মনিটরিং টিমও গঠন করেছেন দলটির প্রধান।
দলীয় সূত্রমতে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে খোঁজ রাখছেন ওই টিমের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর সফরোত্তর সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত তারা তথ্য-উপাত্তব সংগ্রহ করে উপস্থাপন করবেন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে। ওই টিমের উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতেই জোট ও দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করা হবে।
দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তি বা সমঝোতাস্মারক জনসমক্ষে প্রকাশের দাবিও জানিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে তা নাকচ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে চুক্তির পর প্রকাশ করা হবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক যাই হোক না কেন-এর বিপক্ষে বিএনপিসহ তার মিত্ররা। ইতোমধ্যে চুক্তির বিষয়ে তাদের নীতিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশ বিরোধী চুক্তি করা হলে জনগণ তা মানবে না। দেশের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি দিবে।
দলটির নেতারা বলেছেন, ভারত একটি যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র। তারা মাঝে মাঝে পাকিস্তান এবং চীনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এই চুক্তির ফলে ভারতের সঙ্গে কারো যুদ্ধ হলে আমাদেরও সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। তার পরও যদি চুক্তিটি করা হয় তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কের তিলক হয়ে থাকবে। ভারতের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক থাকলে প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজন কিসের এমন প্রশ্নও রাখেন নেতারা।
এদিকে শেখ হাসিনার ভারত সফরের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রাথমিক খোঁজ-খবর নিয়েই দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের বৈঠক করেছেন বিএনপি প্রধান। তাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দেশ বিরোধী কোনো চুক্তি করা হলে এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি
চারদিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে দিল্লি পৌঁছেন। তার এই সফরে ভারতের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, পরমাণুবিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই ডজনেরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক সই হতে পারে। প্রটোকল ভেঙে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানের সিঁড়িতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
চুক্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে দেশ বিরোধী কোনো চুক্তি হবে না। এবার তিস্তা চুক্তি হবে না বলেও জানান দলের এই মুখপাত্র।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তির কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করেছেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি বলেছেন, ১৯৭২ সালে ভারতের সাথে ২৫ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে দেশের মানুষ হাপছেড়ে শ্বাস নিয়েছে। ভারত নিজেই অন্য দেশ থেকে অস্ত্র ক্রয় করছে। তাহলে কেনো তাদের দেশ থেকে আমার সমরাস্ত্র কিনতে হবে তা বোধগম্য নয়। আমাদের দেশের তিনপাশেই ভারত অন্য পাশে সাগর। তাহলে কোন দেশের সাথে যুদ্ধ করতে অস্ত্র কেনার জন্য চুক্তি সই করতে হবে সেটাও বোধগম্য হচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে অনেক শক্তিশালী অস্ত্র রয়েছে বলেও জানান এই সেনা কর্মকর্তা। তার মতে, প্রতিবেশী ভারতের সাথে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা সমাধানে তিস্তা চুক্তি জরুরি।
ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে আমাদের প্রতিরক্ষা হুমকিতে পড়বে-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম। তিনি বলেছেন, ভারত একটি যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র। তারা পাকিস্তান এবং চীনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। এই চুক্তির ফলে ভারতের সঙ্গে কারো যুদ্ধ হলে আমাদেরও সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। চুক্তির সবগুলোই ভারতের অনুক‚লে যাবে। এই সমস্ত চুক্তি থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে, নতুবা আমাদের সার্বোভৌমত্ব হুমকির মুখে পরবে। প্রতিরক্ষা চুক্তি আমাদের প্রয়োজন নেই। এই চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অনাকাক্সিক্ষত ফল বয়ে নিয়ে আসবে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেছেন, দেশ বিরোধী যেকোনো সামরিক চুক্তির পরিণাম হবে ভয়াবহ। জন্মলগ্ন থেকেই ভারত আমাদের সাথে বেনিয়ার মতো আচরণ করেছে। দিল্লি কখনো চায়নি বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।
তিনি বলেন, ২৫ বছরের গোলামী চুক্তির কথা মানুষ ভুলে যায়নি। তারা উপরে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে আমাদের পানিতে মারছে, গুলি করে সীমান্তের পাখির মতো মানুষ মারছে এ নিয়ে চুক্তি হতে পারে। কিসের সামরিক চুক্তি। এই চুক্তি হলে দেশে কাউয়া কেনো আরো কিছু ঢুকতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।  
একই বিষয়ে সমস্বরে দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবও। এক সভায় তিনি বলেছেন, যেকোনো ধরনের জাতীয় চুক্তি করার আগে জনগণের মতামত নেয়া দরকার। জাতির নাক কেটে অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়ে ভারতের সাথে কোনো বন্ধুত্ব চাই না। যেখানে স্বার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত সেখানে অন্ধকারে রেখে ভারতের সাথে কোনো চুক্তি জনগণ মানবে না।
সংশ্লিষ্ট দলীয় সূত্রমতে, দেশবিরোধী চুক্তি হলে বিএনপি তাদের দাবির সাথে সমমনাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির চিন্তা মাথায় রেখেছে। তবে অপেক্ষা করবে প্রধানমন্ত্রী দেশের ফেরা পর্যন্ত। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন