বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আসর

পাগলা হাওয়ার বাদলদিনে

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আ ফ জা ল আ ন সা রী : বৈশাখের হাওয়ার মত অর্পিতা। চনমনে স্বভাবের । কোন কাজেই বেশীক্ষণ স্থির থাকেনা। দশ মিটিটের বেশী কোন কাজ হলে ধৈর্য্য চুত্যি ঘটে।
বৈশাখি মেলার কথা বলে লোভ দেখিয়েছে। ব্যস ওতেই কাত । বাঁশি আর ডমরু কেনার বায়না। আশা দিয়েছে বৈশাখি মেলা থেকে কিনে দিবে। আশা অনেক মধুর । আমাকে সবুজ রঙের টিয়া পাখি কেনার কথা বলে রঞ্জু মামা পাকা তিন বছর পার করেছেন।
নিলু সাইক্লিং এ ওস্তাদ ! মাত্র আট ন’ বছরে পুরাপুরি সাইকেল বিষারদ। ওর বাবা একটা চায়না লেডিজ সাইকেল কিনে দিয়েছেন। ওই সাইকেলে চড়ে একাই স্কুল-কোচিং-খালাবাড়ী-মামাবাড়ী সবখানে বেড়াচ্ছে। মিরপুর থেকে সোজা ঢাকাবিশ^বিদ্যালয়ের সবুজ লনে হাজির।
হলুদ পাখির মত উড়াউড়ি করে বেড়াচ্ছে। একজন ক্যামেরা ম্যান ওর ছবি তুলে নিল । সাইকেলে এক পায়ে দাঁড়ানো পোজ। বাতাসে চুল গুলো উড়ছে। মামার প্রতি অর্পিতা বিরক্ত! আশা দিয়েও টিয়া পাখি এখনো কিনে দেয়নি। তবে মামার একটা ভাল গুনও আছে। ঝড়-বাদল যাই থাকনা কেন বাংলা নবর্বষের দিন অবশ্যই বেড়াতে নিয়ে আসেন। খুব মজা হচ্ছে।
আব্বু-আম্মু আর রঞ্জু মামা গোল হয়ে বসে বাদাম খাচ্ছে। অর্পিতা আর নিলু সাইকেল নিয়ে সেকি মাতামাতি। মাঠের এককোনে বাইস্কোপওয়ালা। বৈশাখি মেলা হলেই ওদের দেখা মেলে। অনেক গুলো শিশু মুখ গলিয়ে দেখছে। লোকটা সুন্দরতালে ডমরু বাজাচ্ছে। মাথায় ঝাঁকড়াচুল, গলায় লালগামছা, পররে সবুজলুঙ্গি, ছিপছিপে চিকন কালো। মুখের দাঁত বড় বড়। হাসিমাখা মুখে মাথা জাকিয়ে বললঃ দেখ মা, দেখ।
দুটো ছেলেকে সরিয়ে অর্পিতা আর আমিও দেখছি। ভারি মজার দৃশ্য। তাজমহলের অনেক বড় বড় ছবি। কানের কাছে ডমরু আওয়াজ। লোকটা নেচেনেচে বলছে, কি চমৎকার দেখা গেল। দিল্লীগেট চইলা আইল।
বাবা-মার হাত ধরে সবাই এসেছে। আমার মত মজা করছেনা কেউ। অর্পিতাকে পিছনে নিয়েও সাইকেল চালাতে পারি।
আমতলায় একটা শিশু অনবরত কাঁদছে। কিছু বায়না ধরছে হয়ত। গরীববাবা পরণে অল্পদামী শার্ট-লুঙ্গি। একটা চড় মারার শব্দ কানে এল। অর্পিতা বলল, দেখ দেখ মারছে!
সাথে মা আসেনি। দরিদ্র পিতা সন্তানকে একটু আনন্দ দিতে এনেছে। সাইকেলের গতি কমিয়ে আবদারের স্বরে বললাম,
আংকেল, ওকে আমাদের সাইকেলে দিন না? দু’ জনকে পিছনে বসিয়ে আনন্দ দিচ্ছি। ভারী মজা হচ্ছে। একটু ভারী ভারী লাগছে। আব্বু-আম্মুর কাছে চলে এসেছি। রঞ্জু মামা রং করে বললেন, ওই চুনো পুটকি কোথায় পেলিরে? রঞ্জু মামাকে ফেলে আবার আম তলায়। মাঠের এ কোনে আমতলায় নতুন করে সাপখেলা জুটেছে। ইয়া বড় বড় সাপ! একেবারে ফাঁকা জায়গা কোন লোক ছিলনা । এখন অনেক লোক জড়ো হয়েছে।
একটা দাড়াস সাপ সাপুড়ের হাত ফসকে ছুটে পালানোর মত দৌড়। কিসের সাইকেল কিসের কি? জানের ভয় পাবলিক উধাও। ফাঁকা মাঠে আমার লাল সাইকেল আর সাপুড়ের কয়েকটা পুরাতন বাক্স পড়ে আছে। ভয়ে এগুতে পারছিনা। সাপুড়ে সাপটা ধরার পর সাইকেল নিয়ে ফিরে এলাম।
মাঠের গরম, লোকের গরম মিলে একাকার। সকালের ঠান্ডা বাতাস আবার শুরু। পশ্চিমের আকাশে হঠাৎ কালো মেঘ। পাগলা হাওয়া বৃষ্টি নামবে নামবে মনে হয়। বৃষ্টি নামলে আমার সমস্যা। আব্বু-আম্মু বাসে ফিরবেন? আমি আর রঞ্জু মামা সাইকেলে । ঝড়ো হাওয়া বইছে। ধুলিবালিতে এককার শুকনো লতা-পাতার সাথে সাথে ওড়ানা -শাড়িও উড়চ্ছে। আমরা রাস্তা ফেলে সাইকেল হাতে করে দৌড়াচ্ছি।
আচমকা ঝমঝম বৃষ্টি। কিছু পূর্বের গরমের তাপ উধাও। একেবারে শীতের ঠান্ডা। বিজে জুবুথুব হয়ে গেছি। রঞ্জু মামার কানের লতি দিয়ে পানি গড়াচ্ছে । আম্মু শাড়ির আচঁল দিয়ে আমার আর অর্পিতার মাথা মুছে দিচ্ছেন। বাতাসের দাপাদাপি ও মূর্হতেই নরম হয়ে এলো। মায়ের সাথে মনে হচ্ছে প্রকৃতিটাও যেন আমাদের আরেক মা। বাইস্কোপ ওয়ালার ডমরু মধুর আওয়াজটা এখনো কানে বাজছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন