লো ক মা ন তা জ
(গত সংখ্যার পর)
কারো কারো মুখে শোনা যাচ্ছে মহেন্দ লালের বাড়ির পাশে রাতে গেলেই ডাইনি হামলা করছে। এর ফলে সেই রাস্তায় সন্ধ্যার পর আর কোনো লোকের দেখা পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে একদল যুবক এসে হাঁক দিয়ে যায়। মহেন্দ লালের মা এখন আর রাতে ঘরের বের হয় না। সবাই একটা বা দুটো ডাইনি দেখে আর তিনি দেখেছেন এক সাথে তিনটে। তিনটে ডাইনি একসাথে দেখে সে কি আর রাতের বেলায় ঘরের বাহির হতে পারে। মহেন্দ লালের মার পেটটা ভালো যাচ্ছে না। বিকেলে তিনবার বাঁশ ঝারে গিয়ে প্রকৃতির ডাকে সারা দিয়ে এসেছে। রাতে প্রচন্ড শীত সেই সাথে কুয়াশা জেঁকে বসেছে। এমন রাতেই ডাইনিদের বিচরণ বেড়ে যায়। সেই ভেবেও শরীর দুর্বল হওয়াতে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে হমেন্দ লালের মা। ভোর বেলা ঘুম ভেঙে গেলে আঁতকে উঠে সে। একী করেছে। রাতে ঘুমের মধ্যেই পায়খানা করে কাঁথা-বালিশসহ তার দেহ মল দিয়ে মেখে ফেলেছে। শরীর এতটাই দুর্বল ছিল পুকুর ঘাটে গিয়ে যে পরিষ্কার করবে সেই শক্তিটুকু নেই। সেই অবস্থাতেই যায় মহেন্দ লালকে ডাকতে। ডাক শুনে তার বউ দরজা খুলে তাকে দেখেই ডাইনি বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ভোর বেলা পাহারা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল যুবকের দল। ডাইনি বলে চিৎকার শুনে ছুটে যায় মহেন্দ লালের বাড়ি। বাড়ি গিয়ে উঠানে দেখে বুড়ি দাঁড়িয়ে আছে মল মাখা সাদা কাপড় জড়িয়ে। পাশেই মহেন্দর স্ত্রী অচেতন হয়ে পড়ে আছে। মহেন্দও চিৎকার শুনে উঠে এসে দাঁড়ায় দরজার পাশে। যুবক দল বুড়িকে ডাইনি ভেবে পেটাতে থাকে। বুড়ি দেহের শেষ শক্তি দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এক যুবকের লাঠি ধরে চিৎকার করতে থাকে, আমি ডাইনি না, আমি ডাইনি না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। একের পর এক লাঠির বারি পড়তে থাকে তার দেহে। মৃত্যু নিশ্চিত হলেই লাঠি থামে যুবকদের। ডাইনি মারার আনন্দে চোখে-মুখে হাসি ফুটে উঠে। কত মহত কাজই না তারা আজ সাধন করেছে। একটি জীবন্ত ডাইনিকে হত্যা করে। এদিকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে মহেন্দ লাল। কি ঘটে গেল। পাথরের মতাে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অশ্রæ ঝরানো ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তার। সকালের সূর্য উঠতে না উঠতেই গ্রামের চারদিকে ছড়িয়ে গেল। গ্রামে ডাইনি মারার ঘটনা। কেউ কেউ পাহারাদার যুবকদের বীরত্বের কথা আরো বাড়িয়ে বলতে লাগলেন। গ্রাম থেকে একটি ডাইনি হলেও তো কমল। তবে কেউ যে মহেন্দ লালের মার মৃত্যুর জন্য মায়াকান্না করেনি তা কিন্তু নয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিলাপ করেছে আহা শেষ পর্যন্ত ডাইনিটা বুড়িটাকেও নিয়ে গেল। তাদের ধারণা, ডাইনি গ্রামের মানুষদের হামলা ও ভয় দেখায় আর সুযোগ পেলেই বৃদ্ধদের উপর ভর করে। যেহেতু বৃদ্ধের উপর ডাইনি ভর করেছে তাই তাকে বাঁচিয়ে রাখার আর কোনো পথ নেই। তাই সেই বৃদ্ধকে মেরে ডাইনির আত্মাকে ধ্বংস করাই হচ্ছে মূল দায়িত্ব। এতে যারা অংশগ্রহণ করবে তারাই সেই গ্রামের বীরপুরুষ। সেই বীরদের গ্রামের মানুষ সম্মান করে। প্রচার করে তাদের বীরত্ব। আর প্রতি শীতেই অসহায় বৃদ্ধদের বলির পাঁঠা হতে হয়। হতে হয় ডাইনি, নিতে হয় নির্মম মৃত্যুর স্বাদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন