অর্থনৈতিক রিপোর্টার : রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষই দিয়ে থাকে। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত কমিটির মাধ্যমে। ফলে একই সময়ে যোগদান করলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন জিএম পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন, তখন বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মকর্তারা সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) থেকে যাচ্ছেন। একইভাবে জিএম থেকে ডিএমডি পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মকর্তারা। পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষ্যম্যের শিকার বিশেষায়িত ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তার এ বৈষম্যের কথা জানান। তাদের মতে, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো বিশেষায়িত ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাতে রাখা দরকার। দীর্ঘদিন থেকে এই ব্যবস্থা না থাকায় বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মকর্তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যাংকে যোগদান করেও অন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের থেকে তারা অনেকটা পিছিয়ে থাকছেন।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো নিজেদের পৃথক আইনে পরিচালিত হওয়ায় এক্ষেত্রে পরিচালনা রীতি দুই ধরনের। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো নিজেদের কর্মকর্তাদের যথাসময়ে পদোন্নতি দিতে না পারলে আমরা কী করব। পদোন্নতি প্রক্রিয়া পৃথক হওয়ায় দুই ধারার ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমতা বিধান সম্ভব নয়।
সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক কৃষি ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হিসেবে কর্মরত কামরুন নাহার। ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেয়া এ নারী ব্যাংকার চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) থেকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে পদোন্নতির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৈরিকৃত ৪২ জনের তালিকার সর্বশেষ নামটি তার। অথচ তার চেয়ে চার বছরের জুনিয়র হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে ওই তালিকার উপরের দিকে। একইভাবে পদোন্নতি তালিকার ৩৪ নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন ১৯৫৮ সালে জন্ম নেয়া কৃষি ব্যাংকের আরেক জিএম মুহম্মদ মাহমুদ হাসান। আগামী ৩১ জুলাই অবসরে যাবেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত। আর বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে তফসিলভুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এর বাইরে সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও হাউজবিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ব্যাংকের উদ্যোগে পদোন্নতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব পদ্ধতিতে ডিজিএম পদে কর্মরতদের তিন বছর পর নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পরিষদ থেকে জিএম পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সরকারি পুলবহির্ভূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অন্যদিকে সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির মাধ্যমে। ফলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘসূত্রতার। বিশেষায়িত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারসহ সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক থেকে তিন বছর সময় বেশি লাগে। ডিজিএম থেকে জিএম পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যদের নাম চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি। পরে প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের বিপরীতে এ পদোন্নতি কার্যকর হয়। এতে কালক্ষেপণ হয় আরো বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন