রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুরাদনগরে জোড়া খুন

| প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার উত্তর জনপদের আলোচিত উপজেলা মুরাদনগরে এমপি ইউছুফ আবদুল্লাহ হারুন গ্রæপ এখন সহিংসতার পথে। স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি হলেও ইউছুফ আবদুল্লাহ হারুন এখন মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
তবে মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন ইউছুফ হারুন স্বতন্ত্র এমপি। তার অনুসারীরা সবাই হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। তৃণমূল আওয়ামী লীগের সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ইউছুফ হারুনের অনুসারীরা মুরাদনগরে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে। গত তিন বছরে এমপি ইউছুফ হারুনের অনুসারীরা এলাকায় কখনো নদীর বালু, কখনো পুকুর দখল, মাছের টাকার ভাগাভাগি, টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেরাই সংঘর্ষ, গোলাগুলি, মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে। এমপি ইউছুফ হারুন অনুসারীদের প্রায় সময়ের সাংঘর্ষিক ঘটনা শেষ পর্যন্ত খুনের জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আশরাফ ও আলাউদ্দিন-আনিস গ্রæপ গোমতী নদীর ড্রেজার ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আর এঘটনায় আশরাফ গ্রæপের ফারুক ও সাইদুলকে কুপিয়ে খুন করে কবির-আলাউদ্দিন গ্রæপ।
মুরাদনগর আসনের স্বতন্ত্র এমপি ইউছুফ হারুনের একাধিক অনুসারী গ্রæপের ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে পুলিশ। গত তিন বছরে তাদের লাগামহীন দোর্দÐ প্রতাপের কারণে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে এমপি অনুসারীদের একের পর এক ঘটনার উৎপত্তি ঘটছে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর (পশ্চিম) ইউনিয়নের রহিমপুর-নয়াকান্দি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জীবন দিতে হয়েছে রহিমপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে ফারুক (২৫) এবং একই গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে সাইদুল ইসলাম (২৭)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জোড়া খুনের ঘটনাটি এলাকায় এমপির দুই গ্রæপের আধিপত্য বিস্তার, বালু ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঘটেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও বালু ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের এমপি সমর্থক মেম্বার আশরাফ গ্রæপ ও এমপি অনুসারী কবির-আলাউদ্দিন গ্রæপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। মাসুম খানেক আগে আশরাফ মেম্বার ১০কেজি গাঁজাসহ কবির-আলাউদ্দিন গ্রæপের সদস্য হিরন মিয়ার পুত্র গাঁজা সাইদুরকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। এ নিয়ে উভয় গ্রæপে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এ ছাড়াও আশরাফ মেম্বারের নিয়ন্ত্রণে থাকা গোমতী নদীতে বালু ব্যবসার ড্রেজার স্থাপন নিয়ে কবির-আলাউদ্দিন গ্রæপের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়েও দুই গ্রæপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কবির-আলাউদ্দিন গ্রæপের লোকজন আশরাফ মেম্বারের বালু ব্যবসার ড্রেজার কাজে নিয়োজিত কেয়ারটেকার রুবেলকে মারধর করে। খবর পেয়ে আশরাফ গ্রæপের সদস্য সাইদুল ইসলাম সেখানে গেলে আলাউদ্দিন-আনিস গ্রæপের কবির, আনিস, আলাউদ্দিন, আবু মুছা, শাহআলম, কনু মিয়াসহ অন্যান্যরা সাইদুলকে কুপিয়ে ও গলায় ধারালো অস্ত্র চালিয়ে খুন করে। এ খবর পেয়ে আশরাফ মেম্বার ও ফারুক লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেলে তাদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে ফারুককেও হত্যা করা হয়। এ সময় সংঘর্ষে আশরাফ মেম্বারসহ উভয় গ্রæপের অন্তত ১০ জন আহত হয়। গতকাল বুধবার আশরাফ গ্রæপের প্রধান আলী আশরাফ বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ কবির-আলাউদ্দিন গ্রæপের ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত আলাউদ্দিন-আনিস গ্রæপের ৯ জনকে আটক করেছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. আবদুল মোমেন জানান, ‘ঘটনার ভয়াবহতা দেখে দুইজনকে হত্যার বিষয়টি পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’ জোড়া খুনের বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ আহাম্মদ হোসেন আওয়াল, মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম খসরু ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তরীকুল ইসলাম দীপু জানান, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় সাইদুল ওফারুক নামে যে দুই যুবক নিহত হয়েছে তারা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের লোক। যে দুই গ্রæপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে এসব করছে তারা এমপির অনুসারী। এরা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন