শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ২৫ হাজার একর জমির বোরো ধান পানির নিচে

কৃষকরা দিশেহারা

| প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মো: আব্দুল মান্নান, কালিয়াকৈর থেকে : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার খাদ্য ভাÐার হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী  আলোয়ার বিলের প্রায় ২৫ হাজার একর বোরো ধানের ক্ষেত টানা বর্ষণের ফলে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ওই বিলকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রায় ৩০-৪০টি গ্রামের সাধারণ কৃষকরা।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আলোয়ার বিলের প্রায় ২৫০০ হাজার একর বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ফলে ওই বিলে ধান চাষ করা কৃষকরা পড়েছে চরম বিপদে। প্রতি বছর একবার করে জমিতে ধান চাষ করে ওই এলাকার কৃষকরা। কিন্তু এবার টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তারা।
কালিয়াকৈর উপজেলার ২নং চাপাইর ইউনিয়নের রশিদপুর, বানিয়ারচালা, গোবিন্দপুর, কাঞ্চনপুর, মেদী আশুলাই, সাদুল্যাপুর, নামাশুলাই, খালপাড়, আশাড়িয়া বাড়ি, চান্দেরচালা, মিনারবহ, মহিষবাতান, কোটবাড়ি, বেতারা, আজগানার কিছু অংশ এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে প্রায় ২৫০০ হাজার একর আয়তনের ফসলি জমি নিয়ে বিস্তীর্ণ এ বিলের পরিসীমা।
এদিকে ওই বিলের পানি কোন ভাবেই কমছে না। আলোয়ার বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হচ্ছে পাশের নিকনার কাল। যা মেদি আশুলাই ব্রিজ হয়ে বড়ইবাড়ি হয়ে তুরাগ নদীতে প্রবাহিত। কিন্তু দিন দিন নিকনার খালের প্রসারতা ও গভীরতা কমে যাওয়ার কারণেই এরকম নাজেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষকরা দাবি করছে।
সরেজমিনে কালিয়াকৈর উপজেলার ২নং চাপাইর ইউনিয়নের আলোয়ার বিল ঘুরে দেখা গেছে, একরের পর একর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। যতদূর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। আর পানির নিচে রয়েছে কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন বুনা কাঁচা ধান। অনেককে আবার কাঁচা ধান পানির নিচে ডুব দিয়ে কাটতেও দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত যদি ধান থেকে ক্ষুদ তৈরি করা যায় সে আশায় কাঁচা ধানই কাটছেন তারা।
রশিদপুর এলাকার কৃষক মো: সিরাজ উদ্দিন জানান, আলোয়ার বিলে তার ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ২০০ শতাংশ। যার পুরোটা তিনি এবার বোরা ধানের চাষ করেছেন। পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে তার পুরো জমির ধানই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে তার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তিনি প্রশাসনের নিকট সাহায্যের আবেদন করে বলেন, সরকার যদি সাহায্য সহযোগিতা না করে তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তিনি জানান, আলোয়ার বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হচ্ছে পাশের নিকনার খাল। অথচ দিন দিন নিকনার খালের পাশে মাটি ভরাট ও এর পাশে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে খালটির প্রসারতা ও গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। আর সেজন্য আলোয়ার বিলের হাজার হাজার একর বোরো ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
আলোয়ার বিলে এবার বোরো ধান চাষ করেছে এমন কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা বছরের খাবারের যোগান আসে বোরো ধানের ফলনের উপর। এবার ধানের ফলন ভাল হলেও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সব আশা-ভরসা তেতো হয়ে গেছে। কাঁচা অবস্থাতেই ধান কেটে আনতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। খড়কুটো ছাড়া আর কোন কিছুরই আশা করা যাচ্ছে না।
পানির নিচে তলিয়ে ধান পচে যাচ্ছে। অথচ পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এমন নাজেহাল অবস্থার সৃষ্টি কখনো হতো না। তারা সকলেই সরকারের কাছে জোর দাবি জানান যাতে করে হাজার হাজার একর ফসলি জমি রক্ষার জন্য পাশের একমাত্র নিকনার খালটি পুনঃখনন করা হয়।
কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম জানান, আলোয়ার বিলটি দুটি থানার অন্তর্ভুক্ত। কিছু অংশ কালিয়াকৈর থানার অন্তর্ভুক্ত। আমি আলোয়ার বিল পরিদর্শন করেছি। অনেক বোরো ধানের ক্ষেত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে আছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের একটি তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়েছি।
সারাদেশে এবার পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন