ঘূর্ণিঝড় ‘ ইয়াশ’এ ফসল ও উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ব্যাপক ক্ষতির এক বছরের মাথায়ই মাঠে থাকা বোরো ধান সহ রবি ফসলের জন্য আরেক প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিয়ে ‘অশনি’ দক্ষিনাঞ্চলবাসীর দড়জায় কড়া নাড়ছে। ৭০ভাগ আধাপাকা ও পাকা বোরোধান এখনো মাঠে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলার সাড়ে ১০ লাখ কৃষক সহ গৃহস্থ্য পরিবারগুলোর এখন দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই।
বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও ২ নম্বর দুরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে সমগ্র দক্ষিণ উপক’লীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি চুড়ান্ত করা হয়েছে ইতোমধ্যে। রেড ক্রিসেন্টের ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র ৭০১টি ইউনিটের প্রায় ৭৫ হাজার সেচ্ছা সেবককে উপক’লের ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলায় সার্বক্ষনিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতিতে ঝুকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতেও প্রস্তুত রয়েছেন তারা। ৪ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষিত না হলে উপকুলে কোন ধরনের বিপদ সংকেতের পতাকা উত্তোলন বা মাইক-মেগাফোন থেকে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছেনা। তবে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে সিপিপি সূত্রে জানা গেছে।
গত বছর ২০ মের পরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ‘ইয়াশ’ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ক্রমান্বয়ে গভীর নি¤œচাপে পরিনত হয়ে ভারেতর উড়িশ্যা উপকূলে ২৭ মে আঘাত হানে। কিন্তু তার প্রভাবে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে প্রায় ১শ কোটি টাকার ফসলহানি সহ কয়েকশ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ছাড়াও বিশাল উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও নদী তীর রক্ষা বাঁধের ক্ষতির পরিমানও ছিল প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। ইয়াশ-এর ছোবলে উপক’লীয় অবকাঠামোর সে ক্ষতি মেরামত এখনো সম্পন্ন হয়নি।
এমনকি গত বছর ইয়াশ-এ ভড় করে প্রবল বর্ষনে উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার নুতন আশায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ করেছেন কৃষকগন। কিন্তু সে ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে। সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল ও ফরিদপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে বোরো আবাদ সম্পন্ন হলেও এপর্যন্ত মাত্র ৩০% জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আর এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় অশনি’তে ভর করে সোমবার শেষরাত থেকেই উপক’ল সহ দক্ষিনাঞ্চলের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। হালকা ও মাঝারী বৃষ্টিপাত কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩ ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ফলে এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধান থেকে ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫২০ টন চাল পাবার লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে উৎপাদন ১৬ লাখ টনে উন্নীত হবার সম্ভবনা থাকলেও, ‘অশনি’ পরিস্থিতিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যায়, তা নিয়ে শংকিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগনও।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বরিশাল সহ উপক’লীয় এলাকায় মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভবনার কথা বলা হয়েছে। এমনকি পরবর্তি ৩ দিনেও বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, নি¤œচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে
অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’অশনি’তে পরিণত হয়েছে। যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন
এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গত বছরের ‘ ইয়াশ’এর মত আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র ও উড়িশ্যা উপক’লে আঘাত হানার সম্ভবনা বেশী হলেও একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ফলে অশণি’র প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চল সহ দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় আগামী ৩-৪দিন প্রবল বৃষ্টিপাতের আশংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে।
তবে ‘অশণি’ কোন কারণে তার গতি পরিবর্তন করে সোজা উত্তরে অগ্রসর হলে তা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মর্ধবর্তি সুন্দরবন উপক’লেও আঘাত হানার ক্ষিন সম্ভবনা রয়েছে। ফরে পরিস্থিতি হতে পারে আরো ভয়াবহ। তবে এসব কিছু বুুঝতে আরো ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে। কিন্তু অশণি বাংলাদেশ উপক’লে সরাসরি আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে আগামী ৩-৪ দিন দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকায় মাঝারী থেকে ভাড়ী বর্ষণের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন আবহাওয়াবীদগন।
ফলে দক্ষিনাঞ্চলের মাঠে থাকা বিপুল বোরো ধানের ভবিষ্যত নিয়ে শংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র তরফ থেকে যত দ্রুত সম্ভব মাঠে থাকা পাকাধান কেটে ফেলতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখতে ব্লক সুপারভাইজার সহ মাঠ কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে। তবে এত বিপুল পরিমান ধান দ্রুত কর্তনের মত কৃষি শ্রমিক নেই এ অঞ্চলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন