শফিউল আলম : ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক আকারের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এই পরিকল্পনাটি অনিশ্চিত অবস্থায় ঝুলে গেছে। এতে করে জ্বালানি তেল খাতে ভারসাম্য ও সক্ষমতা হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্দরনগরীর দক্ষিণ প্রান্তে পতেঙ্গা ভারী শিল্প এলাকায় অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল পরিশোধন কারখানা ইস্টার্ন রিফাইনারি। সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় যুগোপযোগী প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধায় ঢেলে সাজানোর জন্য কারিগরি সংস্কার, আধুনিকায়ন ও স¤প্রসারণ (বিএমআরই) করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরমধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির সাথেই জ্বালানি তেল শোধনাগারটির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের জন্যও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এ মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সহায়তায় অর্থনৈতিক ও কারিগরি সমীক্ষার কাজ ৪ বছর পূর্বেই সম্পন্ন করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ কমবে। এর ফলে জ্বালানি তেল আমদানি খাতে ব্যয় অনেকটা সাশ্রয় হবে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ যাবত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে তাও কেউ বলতে পারে না। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, প্রকল্পটি এখনও বিবেচনায় আছে; সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনায় আনা হলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও শুরু হবে। প্রকল্পের কারিগরি সমীক্ষায় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের কারিগরি সুবিধাসমূহ বাড়ানো হলে এর উৎপাদনের সক্ষমতা বর্তমানের তুলনায় তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং অবস্থানগত অবকাঠামো সুবিধার কারণে এটি জ্বালানি তেল পরিশোধনের জন্যও সমভাবে উপযোগী বা আদর্শ একটি স্থান বলে উল্লেখ করা হয়। বিএমআরই বাস্তবায়নে এডিবি’র সমীক্ষা প্রতিবেদনে এক বিলিয়ন ডলার সমপরিমান ব্যয়ের লক্ষ্যে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসি’কে আইডিবি সহজশর্তে ঋণ সুবিধা দিয়ে আসছে।
এদিকে দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত¡ প্রতিষ্ঠান ইআরএল-এর স¤প্রসারণ জরুরি অপরিহার্য হয়ে পড়লেও বাস্তবায়নের বিষয়টি ঝুলে আছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির সার্বিক উন্নয়ন ও স¤প্রসারণে বিএমআরই পরিকল্পনার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে গৃহীত ডিপিপি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও ইস্টার্ন রিফাইনারির শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রকৌশলীরা এ ব্যাপারে সমন্বয় সাধন করেন। একই সাথে ইআরএল’র আধুনিকায়নের প্রকল্প গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে এর আর্থিক ও কারিগরি দিকসমূহ মূল্যায়ন ও বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিঃ চার দশকেরও বেশিকাল পূর্বে প্রতিষ্ঠিত দেশের একক জ্বালানি তেল শোধনাগার। এ কারণে উৎপাদনশীলতায় বা পরিশোধনের যে সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে এবং দেশে জ্বালানি তেলের ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে আরও একাধিক শোধনাগার স্থাপনের উদ্যোগের ব্যাপারে সরকার, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সকলেই একমত। অথচ বাস্তবে এ ব্যাপারে কোনো ধরনেরই অগ্রগতি হয়নি। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে শোধন প্রক্রিয়ার জন্যই প্রয়োজন বৃহৎ তেল শোধনাগারের। কেননা ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ল্যুব অয়েলসহ যে কোন ধরনের তেল পরিশোধিত অবস্থায় আমদানিতে যে পরিমাণ খরচ পড়ে সেই তুলনায় ক্রুড (অপরিশোধিত) অয়েল আমদানি করে তা পরিশোধন করলে বিপুল অংকের আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারির বার্ষিক সর্বোচ্চ ১৫ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্রুড অয়েল পরিশোধনের কারিগরি সক্ষমতা রয়েছে।
জ্বালানি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইআরএল-এর বিএমআরই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেক্ষেত্রে বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ মেট্রিক টন অর্থাৎ বর্তমানের তিনগুণ বেশি পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিশোধন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে মাসিক গড়ে ১ লাখ মেট্রিক টন হারে বছরে ১২ লাখ মেট্রিক টন তেল ইআরএল-এর মাধ্যমে পরিশোধন করে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। সিংহভাগ পরিশোধিত জ্বালানি তেল বৈদেশিক মুদ্রায় সরাসরি আমদানি করতে গিয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত খরচ পড়ে।
মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত অবস্থায় জ্বালানি তেল আমদানি করে পরিশোধন করা হলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা সরাসরি সাশ্রয় হবে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা দাঁড়াবে বার্ষিক ৮০ থেকে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন। ইস্টার্ন রিফাইনারির বিএমআরই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সমপরিমান যে বিপুল আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে তাতে আইডিবি উল্লেখযোগ্য ঋণ সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে সায় দিয়ে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন