উন্নয়নের প্রকল্পের সময় ও খরচ বাড়িয়ে জনগণের করের টাকা অপচয় হচ্ছে -দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
জেলা বাজেটের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলেই গেছেন অর্থমন্ত্রী -ফজলে হোসেন বাদশা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ব্যাংক ও পুঁজিবাজার দুর্নীতি, উন্নয়নের প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে খরচ বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণের করের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজেট বরাদ্দ ব্যবহারের গুণগতমানের নিশ্চয়তা না দিলে সবই হারাধনের পকেটে যাবে। তার মতে, সেটি যেন না হয় তার জন্য বাজেট বিষয়ক আলোচনায় এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ বাজেট বাস্তবায়নের সামগ্রিক পরিস্থিতি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদ ‘জন-বাজেট সংসদ ২০১৭’ আয়োজন করে জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস, সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এবং গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন।
এই আয়োজনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহবায়ক ড. হামিদা হোসেন, নিজেরা করি এর সমন্বয়ক খুশি কবির সমাপনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
দিনব্যাপি ‘জন-বাজেট সংসদ ২০১৭’র উদ্বোধনী ভাষণে জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস’র সহ-সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা, এমপি বলেন, জাতীয় সংসদে বাজেট বিষয়ক যে আলোচনা হয় তা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আমরা বাজেট বিষয়ে জনগনের কণ্ঠস্বর জাতীয় সংসদে পৌঁছাতে পারি না।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা জেলা বাজেটের তাগিদ দিচ্ছি। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তা ভুলে গেছেন। ফলে জনগণের চাওয়ার প্রতিফলন ছাড়াই নির্ধারিত হচ্ছে দেশের উন্নয়নসহ অন্য সব কর্মকান্ডের বাজেট এবং এক পাক্ষিক এই বাজেট জনগনের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে।
বাংলাদেশের প্রথাগত বাজেট বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে। যথাযথ বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ কাঠামোর মাধ্যমে দেশের সবধরনের জনগোষ্ঠির উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখার দাবি তুলে ধরার জন্য এ ছায়া সংসদ ‘জন-বাজেট সংসদ ২০১৭’ আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশের বাজেটের পূর্বে যত প্রাক-বাজেট আলোচনা হয়, পৃথিবীর আর কোন দেশে এমনটা হয়না। তবে এ সব প্রাক-বাজেট আলোচনার কোন প্রতিফলন বাজেটে পড়ে কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন আছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘প্রাক বাজেট নথি-প্রি বাজেট স্টেটমেন্ট’ তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে এর প্রচলন হওয়া জরুরী।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম। এমনকি শিক্ষার সাথে প্রযুক্তির বাজেট জুড়ে দেয়া হয়। এগুলো না করে কেবল শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রয়েছে।
জাতীয় বাজেটে জনঅংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শ্রম-কর্মসংস্থান, জেন্ডার, দলিত, আদিবাসি ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ নিয়ে চারটি বিশেষ অধিবেশন পরিচালিত হয়। এর আগে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক বাজেট শুনানীর আয়োজন করা হয়। যেখানে সাধারণ মানুষ বাজেট নিয়ে তাদের পরামর্শগুলো এতে উত্থাপন করেন।
টিপু সুলতান এমপি, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সভাপ্রধান ড. প্রতিমা পাল মজুমদার, গবেষণা সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা, সহ-সভাপ্রধান আসগর আলী সাবরি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর সাদেকা হালিম, প্রফেসর তৈয়বুর রহমান, বিআইডিএস এর সিনিয়ার রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, বিল্স এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, খানি এর সহ সহভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের সবগুলো জেলা থেকে সাধারণ জনগন তাদের বাজেট বিষয়ক পরামর্শ এ ছায়া সংসদে উত্থাপন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন