রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আসর

পরিধিদের পরিণতি

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেরীনা পারভীন
১৯ এপ্রিল, ভোর ৫.১৩ মিনিট, ২০১৫ সাল। স্বনামধন্য ক্লিনিকের সার্জারি রুমে জন্ম নিলো পরিধি। মায়ের জ্ঞান তখনও ফেরেনি। মাকে অবজারভেশন রুমে নেবার জন্য সবাই ব্যস্ত। মা ও বাচ্চা দু’জনেই সুস্থ।
আশ্্ফাক সাহেব ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন। বিজ্ঞানের গুণে প্রেগনেন্সির ৭ম মাসেই তিনি জানতে পেরেছিলেন তিনি মেয়ের বাবা হতে চলেছেন। তখন থেকেই স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে মেয়ের নাম ঠিক করে রেখেছিলেন। যদিও নামটা নিয়ে দাদী-নানীদের মধ্যে একটু চাপা অসম্মতির গুঞ্জন উঠেছিল, তবুও আশ্্ফাক সাহেব জোর দিয়েছিলেন তার মেয়ের নাম হবে “পরিধি”।
মেয়েটি দেখতে তার মায়ের মতোই হয়েছে। লম্বা, চিকন গঠন, হালকা শ্যামবর্ণ গায়ের রং, চোখ আর ঠোঁট চিকন। হালকা চোখ মেলে মেয়েটি এপাশ-ওপাশ দেখছে। সারাদিন শুধু পড়ে পড়ে ঘুমায়। মেয়েকে নিয়ে হাজারো আশা স্বপ্ন ডানা মেলে আশ্্্ফাক সাহেবের মনে। মেয়েকে পৃথিবীতে আনার আগেই সে অনেক স্বপ্ন দেখেছে তাকে ঘিরে। আর সেই আশা এবং সেই স্বপ্নের বিস্তর পরিধি মনে আগলে রেখে নিজের মনের রং মিশিয়ে মেয়ের নাম রেখেছেন “পরিধি”।
চারদিন পর পঞ্চম দিন সকালে আশফাক সাহেব তার স্ত্রী শামীমা, ও নতুন কন্যা সন্তান পরিধিকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন। আশ্্ফাক সাহেবের সাথে তার মাও আসলেন। আশ্্ফাক সাহেবেরা একভাই-একবোন। তার বোন যশোর থাকে শ্বশুড় বাড়িতে। সেখান থেকে নতুন বাবু দেখতে এখনো আসতে পারেননি। আশফাক সাহেব তার মাকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন। একা বাড়িতে শামীমার সাথে থাকার জন্য। এসময় পাশে থাকার জন্য একজন সঙ্গী খুব প্রয়োজন। আশফাক সাহেব যে ফ্ল্যাটটিতে থাকেন তা খুব ছোটও নয়, খুব বড়ও নয়। বলতে গেলে মাঝারি আকারের। অথবা তার চেয়ে একটু বড়। ছিমছাম খোলামেলা। মিসেস্ শামীমা আশ্্ফাক আহমেদ অনেকটা মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন ফ্ল্যাটটি। ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে আকর্ষণীয় লিভিং রুম তাতে ছোট-বড় নানা আকারের শেপিস। একটু সেকেলে আঙ্গিকের সোফাসেট, পাশে আরাম-কেদারা। ছোট গোল ডিম্বাকৃতির অ্যাক্যুরিয়াম তাতে লাল টুসটুসে গোল্ডফিস যেন কথা বলে। আরাম-কেদারার পাশে একটা স্ট্যান্ড ল্যাম্প। সবকিছু বর্ণনা দিতে গেলে অনেক কথা। দুটো বেডরুম, দু’বেডরুমের মাঝে কিচেন, তার সামনে মাঝারি আকারের ডাইনিং স্পেস। বেডরুমগুলোর ডানপাশে বড় জয়েন্ট করা বারান্দা। সেখানে মিসেস্্ আহমেদ মনের মতো করে বানিয়েছেন বেলকনি গার্ডেন। ঠিক আভিজাত্যও নয় আবার একেবারে সাবেকি হালও নয়, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্য দেখা দেয় এই ফ্ল্যাটটিতে। আর সেই ফ্ল্যাটের বুকে আলোর রেখা এঁকে দিতে পৃথিবীতে বাবা-মার কোলজুড়ে এসেছে পরিধি।
“পরিধি” শব্দটির অর্থ হচ্ছে বিস্তৃতি। কোন একটা বস্তু যতটুকু স্থান বিস্তার করে রাখে তাকে তার পরিধি বা সীমা বলা হয়ে থাকে। পরিধি নামটা রাখার পেছনে আশ্্ফাক সাহেবের একটা কারণ রয়েছে। আশ্্ফাক সাহেব মনে করেন প্রতিটি সন্তানই তার মা-বাবার বুকে জায়গা করে নেয়। তাদের ঘর ছোট্ট নতুন হাসির ছটায় আলো করে রাখে। হাসি আর আনন্দ দিয়ে নিজের অবস্থানটির পরিধি বা বিস্তৃতি নিশ্চিত করে নেয়। ঠিক তেমনি তাদের মেয়েও তার বুকের মাঝে তার পরিধি। অবস্থান আয়ত্ব করে নিয়েছে। সেই চিন্তা থেকেই মেয়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন “পরিধি”। আগে পাঁচটায় অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে আশ্্ফাক সাহেব চা খেতেন আর টেলিভিশন দেখতেন। আর এখন পরিধি আসার পর থেকে আশফাক সাহেব অফিস থেকে এসে চা খেয়েই পরিধির সাথে শুয়ে থাকেন। পরিধিকে নিয়েই তার যত খেলা। খেলা যেন শেষ হয় না। উবু হয়ে পরিধির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি। কি যেন কি খুঁজে বেড়ান। পরিধির ছোট্ট বুকে মাথা রেখে ‘মা’-‘মা’ বলে চোখ বুঝে থাকেন, পরিধিকে নিয়েই যেন তার সব। তার স্ত্রী ও মা দু’জনে দূর থেকে এসব দেখেন আর হাসেন। এখন যেন মেয়েই তার সব। তার আসল সঙ্গী। মেয়েকে পেয়ে মা আর স্ত্রীর কোন খবরই রাখেন না। আশ্্ফাক সাহেব নাক ঠেকিয়ে মেয়ের গায়ের ঘ্রাণ নেন। আর সাথে সাথে বুক ভরে নেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
অসমাপ্ত

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন