ইনকিলাব ডেস্ক : আগুনে পুড়ে গেছে লন্ডনের একটি বহুতল ভবন। অবিশ্বাস্য গতিতে ভবনটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ তখনো ঘুমে ছিল। ৪০টি ফায়ার ইঞ্জিন নিয়ে প্রায় ২০০ ফায়ার ফাইটার আগুন নিভানোর কাজ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, এই ভবনে বহু বাংলাদেশী পরিবার এবং অন্যান্য দেশের মুসলিম পরিবারেরও বসবাস ছিল। অন্যদিকে বিভিন্ন তথ্যসূত্র বলছে, এই ভবনে ৬০০ বাসিন্দা ছিল। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত ও প্রায় ৫০ জনকে লন্ডনের পাঁচটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে নির্মিত ওয়েস্ট লন্ডনের কেনসিংটন এন্ড চেলসি বারার ২৭ তলা গ্রেনফেল টাওয়ার ভবনে ১২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। রাত আনুমানিক ১২টা ৫৪ মিনিট থেকে আগুনের সূচনা হয়।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের পক্ষ থেকে যৌথ প্রেস কনফারেন্স করে। তবে এটার সাথে কোনও সন্ত্রাসী হামলার যোগসূত্র আছে কিনা বা কীভাবে আগুন লেগেছে তারা এখনো কোনও কিছু নিশ্চিত বলতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার ডেন ডেলি বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ। অনেক বড় অগ্নিকাÐের ঘটনা এটি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ৪০টি ইউনিট ও প্রায় ২০০ দমকলকর্মী। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। দমকল কর্মী হিসেবে আমার ২৯ বছরের অভিজ্ঞতায় এ ধরনের ব্যাপক অগ্নিকাÐের ঘটনা আমি আর দেখিনি।
লন্ডন মেয়র সাদিক খান ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে হতবাক হয়েছেন। উদ্ধারকর্মী এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহমর্মিতা জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনাকে লন্ডনের সবচাইতে বড় ঘটনা বলে উল্লেখ করেন মেয়র সাদিক খান এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটি নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের মতো ধসে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ভয়াবহ এ অগ্নিকাÐে প্রাণহানির বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কন্ডি বলেন, এ পর্যন্ত ৬ জন নিহতের খবর রয়েছে তাদের কাছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুনের গোলায় পরিণত হওয়া লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে আর্তনাদ, কান্নার শব্দ। জীবন বাঁচানোর করুণ আকুতি আসে ওই ভবনের ভিতর থেকে। আর বাইরে অপেক্ষায় ছিল অসহায় স্বজনরা ও অগ্নিনির্বাপণকারীরা। কারো যেন করার কিছু নেই। সর্বগ্রাসী আগুন ঢেকে দিয়েছে ২৭ তলাবিশিষ্ট ওই টাওয়ারকে। এটা ছিল অন্য রকম ভয়ানক পরিবেশ ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবারের অগ্নিকাÐের ১৮ মাস আগেই বসবাসরতদের আগুনের ঝুঁকির ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিল ল্যানচেস্টার ওয়েস্ট-ওর কমিউনিটিভিত্তিক বøগ গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রæপ। ২০১৩ সালে ভবনটির অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিলো গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রæপ।
রিপোর্টে বলা হয়, বেসমেন্ট, লিফটের মোটর রূপ ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের ইলেক্ট্রিকাল রুমের অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র এক বছরেরও বেশি পুরাতন ছিলো। আর ২০০৯ সালের পর থেকে সেগুলো পরীক্ষাও করা হয়নি বলে দাবি করে তারা। সেসময় তারা আরও জানায় যে, টেনান্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন বাড়ি নির্মাণের সময় রাবিশ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রæপ নিজেদেরকে ল্যাঙ্কাস্টার ওয়েস্ট কমিউনিটর সেবায় নিয়োজিত বলে দাবি করে। ২০১০ সালে গঠিত এই সংস্থাটি এর আগে ল্যাঙ্কাস্টার গ্রিনের নির্মাণের বিরোধিতাও করেছিলো। তবে গ্রেনফেল টাওয়ারের বাসিন্দাদের কাছে এটা পরিষ্কার ছিল যে দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যক্তিগত শত্রুতা যেকোনও সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর জমির মালিকরাও টাওয়ারটিতে প্রবেশ ও বাহিরপথে নিরাপত্তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন অনেকেই।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ওই ভবনের আশপাশের লোকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছে অস্থায়ী ভিত্তিতে তৈরি করা আবাসে। তারা জানিয়েছে, একটা সময় পর্যন্ত ভবনের ছাদ থেকেও মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল। এখন তারা কেবল নিজেদের জানালাকেই আশ্রয় করতে পারছেন জীবনের তাগিদে। আর্ত চিৎকার করতে থাকা বিপন্ন এইসব মানুষকেই উদ্ধারের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বাড়ির ভেতর তারা আলো দেখতে পাচ্ছেন। আর বাইরে সবকিছু ছাইয়ে ঢেকে যাচ্ছে। ব্রিটিশ সাংবাদিক জর্জ ক্লাক জানান, আশপাশের ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে ছাইয়ের আবরণ পড়ছে। ভবনটির একাংশ পুরোই আগুনে পুড়ে গেছে। আগুন লাগার আগে টাওয়ারটিতে সংস্কার কাজ চলছিলো। ফলে বের হওয়ার অনেক রাস্তাই বন্ধ থাকতে পরে ধারণা করা হচ্ছে।
জারা নামে ওই টাওয়ারের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘ভবনের ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ তলা থেকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন নিজের সন্তানকে। আমার মনে হয়, সে বেঁচে গেছে’। তবে তার হাড়গোড় ভেঙে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী।
কেবল ৫ তলা নয়, আগুনে জিম্মি গ্রেনফেল টাওয়ারের বিপন্ন এক মা, ভবনের ৯ তলা থেকে ছুঁড়ে দিয়েছেন নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাকে রক্ষার ক্ষীণ এক সম্ভাবনা নিয়ে। ওই শিশুকে ধরে ফেলেছেন লন্ডনের এক সাধারণ নাগরিক। নিজে ওই টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখেছেন সামিরা লামরানি নামে লন্ডনের এক বাসিন্দা।
এপির কাছে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন সেই নারী। তিনি জানিয়েছেন, আগুন লাগা ভবনের বাসিন্দারা জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনই এক আধখোলা জানালা দিয়ে এক মা তার শিশু সন্তানকে নিচে ছুঁড়ে দেয়। ‘হ্যাঁ, এক ভদ্রলোক সামনে খানিকটা এগিয়ে যান এবং শিশুটিকে ধরে ফেলতে সমর্থ হন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেখেছি চারপাশ থেকে এগিয়ে আসছিলো মানুষ, ওই একটি শিশুকে রক্ষা করার স্বার্থে।’
‘যুক্তরাষ্ট্রের সেই কংগ্রেস মেম্বার সেই মানুষদের আশ্বস্ত করেছিলেন শিশুটির জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে। বলছিলেন, যা করার সেটা আমরা করেছি। ৯৯৯ (জরুরি সার্ভিস)-এ ফোন করেছি।’ আমার মেয়ের বন্ধু জানালো, তিনি এক প্রবীণকে দেখেছেন যিনি বাড়িতে বানানো এক প্যারাসুটের মতো কিছু একটায় করে জানালা দিয়ে নেমে আসার চেষ্টা করছিলেন।’
এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবারের অগ্নিকাÐের ১৮ মাস আগেই বসবাসরতদের আগুনের ঝুঁকির ব্যাপারে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে ভবনটির অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিলো গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রæপ। রিপোর্টে বলা হয়, বেসমেন্ট, লিফটের মোটর রুপ ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের ইলেক্ট্রিকাল রুমের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এক বছরেরও বেশি পুরাতন ছিলো। আর ২০০৯ সালের পর থেকে সেগুলো পরীক্ষাও করা হয়নি বলে দাবি করে গ্রæপটি। সেসময় তারা আরও জানায় যে টেনান্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন বাড়ি নির্মাণের সময় রাবিশ ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
এবিসিরি প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেনফেল টাওয়ারের বাসিন্দাদের কাছে এটা পরিষ্কার ছিল যে দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যক্তিগত শত্রুতা যেকোনও সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর জমির মালিকরাও টাওয়ারটিতে প্রবেশ ও বাহিরপথে নিরাপত্তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন