৪৩ সদস্যের উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির ৩১টি ভোট লাভ
ইনকিলাব ডেস্ক : সউদী বাদশাহ সালমান গতকাল ক্রাউন প্রিন্স (যুবরাজ) হিসেবে তার পুত্র মোহাম্মাদ বিন সালমানের নাম ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যদিয়ে আগের যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন নায়েফের (৫৭) কাছ থেকে ক্রমান্বয়ে ক্ষমতা অপসারণের কাজ শেষ হল। সউদী আরবের সরকারি সংবাদ সংস্থা পরিবেশিত রাজকীয় এক ফরমানে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও মোহাম্মাদ বিন সালমানের (৩১) নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করবেন। এসপিএ জানিয়েছে, সউদী আরবের উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির ভোটাভুটিতে ৪৩টি ভোটের মধ্যে ৩১টি পান মোহাম্মেদ বিন সালমান। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মক্কার আল সাফা প্রাসাদে উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ফরমানে বলা হয়, মোহাম্মাদ বিন নায়েফকে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ৮১ বছর বয়সী সালমান সিংহাসনে বসার দুই বছর পর মোহাম্মাদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা দিলেন। এর ফলে মোহাম্মাদ বিন সালমান এখন থেকে সিংহাসনের উত্তরসূরি বিবেচিত হবেন। সউদী বাদশাহর ডিক্রিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সউদ বিন নাইফকে।
২০১৫ সালে বাদশাহ সালমান দেশটির সিংহাসনে আরোহণের আগে তাঁর পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম বিশ্বের খুব কম মানুষই জানতো। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে বিশ্বের অন্যতম তেল রপ্তানিকারকে দেশের বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমান।
মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট। বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের তৃতীয় স্ত্রী ফাহদা বিনতে ফালাহ বিন সুলতানের সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমান। রাজধানী রিয়াদের কিং সউদ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করার পর বিভিন্ন রাষ্ট্র সংস্থায় কাজ করেছেন।
২০০৯ সালে তার বাবার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ বিন সালমান। সেই সময়ে রিয়াদের গর্ভনর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ।
২০১৩ সালে যখন মোহাম্মদ বিন সালমানকে যখন মন্ত্রীর মর্যাদাসহ সউদী রয়্যাল কোর্টের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন তখন থেকেই ক্ষমতায় তার উত্থান শুরু হয়।
সৎ ভাই বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে বাদশাহ হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন বর্তমান বাদশাহ সালমান, তখন তার বয়স ছিল ৭৯ বছর।
তখনই ক্ষমতায় এসে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাদশাহ সালমান, যা বিশ্লেষকদের কিছুটা অবাকও করেছিল।
ক্ষমতায় এসে বাদশাহ সালমান তাঁর ছেলেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান শুরুর পিছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল সউদী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সউদী নেতৃত্বাধীন জোট। যদিও দু’বছর ধরে চলা এই লড়াইয়ে অগ্রগতি খুব কমই হয়েছে।
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসেই বাদশাহ সালমানের আরেক দফা রদবদলের সিদ্ধান্ত বিশ্ববাসীকে অবাক করে। ওই মাসে তিনি তাঁর ছেলেকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন এবং তাঁর ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন।
ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হলেও মোহাম্মেদ বিন সালমান সউদী আরবের তেলনীতি বাস্তবায়ন ও ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিলেন। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক এই দেশের বিপুল প্রতিরক্ষা বাজেটও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। মোহাম্মদ বিন সালমান সউদী আরবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্যও তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছেন, যা ভিশন ২০৩০ নামে পরিচিত। তিনি অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাবও আনেন। এমনকি তেলখাতে ভর্তুকি কাঁটছাঁটের কথা উল্লেখ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি ‘সউদী আরামকো’র কিছু অংশ বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে একটি সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল তৈরির পরিকল্পনাও দেন তিনি। এছাড়া বাদশাহ সালমানের প্রতিনিধি হিসেবেও বেশ কয়েকটি দেশে সফর করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। বেইজিং, মস্কোসহ ওয়াশিংটনেও গিয়েছেন তিনি। মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানিকারক দেশ সউদী আরবের রাজনীতিতে মোহাম্মেদ বিন সালমানের অতি দ্রুত উত্থান বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।
মোহাম্মদ বিন সালমানকে গতকাল ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করার পর সউদী বাদশাহ নতুন যুবরাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। মোহাম্মদ বিন নায়েফ পদ হারিয়ে নতুন যুবরাজের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। নতুন যুবরাজ ঘোষণার মাধ্যমে সউদী আরবের ক্ষমতা কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনলেন বাদশাহ সালমান। কারণ সউদী আরবে যুবরাজই দেশটির সর্বোচ্চ পদটির উত্তরসুরী। ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজ পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজ বানালেন বাদশাহ। মাত্র ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমান একই সাথে উপ-প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করে যাবেন। সউদী রাজতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন বাদশাহ নিজ ছেলেকে যুবরাজ বানালেন। বর্তমান বাদশাহ’র পর যুবরাজই পরবর্তীতে দেশটির বাদশাহ হবেন। সূত্র : এসপিএ, বিবিসি ও এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন