শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এক কোটি নতুন সদস্য চায় বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টার্গেট তরুণ প্রজন্মের ভোটার
ফারুক হোসাইন : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দল পুনর্গঠন ও মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দেশব্যাপী পরিচালিত এই কার্যক্রমে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে দলটি। অভিযানে পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন থাকলেও কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য থাকছে নতুন সদস্য সংগ্রহ করা। দুই মাসের মধ্যে এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের টার্গেটও নির্ধারণ করেছে বিএনপি
আর এই নতুন সদস্যদের মধ্যে বিশেষভাবে দৃষ্টি থাকছে তরুণ প্রজন্ম ও নতুন ভোটারদের প্রতি। বিশেষ করে যারা এখনো কোন রাজনৈতিক দলে নাম লেখাননি তাদের টার্গেট করে সারাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে নেতাকর্মীরা। এর মধ্যেমে একদিকে যেমন দলীয় নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে হালনাগাদ হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ডটাবেজ। যার মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যোগ্যপ্রার্থী বাছাই, দলের জন্য নতুন নেতৃত্ব খোঁজা এবং নতুন ভোটার চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটি সেরে ফেলতে চায় দলটি। গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন পর্যন্ত। ১ জুলাই রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ঘোষিত ‘প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ’ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কর্মসূচীর উদ্বোধনের সময় খালেদা জিয়া ১০ টাকার বিনিময়ে সদস্য রশিদে স্বাক্ষর করে নিজে সদস্যপদ নবায়ন করেন। এরপর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেন। এসময় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের মোট ৬ জন নতুন সদস্য সদস্যপদ সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন শিক্ষক, একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন যুগ্ম পরিচালক, একজন সাংবাদিক, একজন ব্যবসায়ী। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে ১০০ জন নতুন সদস্যও হন বলে বিএনপি’র পক্ষ জানানো হয়। কর্মসূচির উদ্বোধনের পর নেতাকর্মীদের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, গতবার আমাদের সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫০ লাখ। এবার আমাদের টার্গেট এক কোটি। সকলে সদস্য হোন, দলের জন্য কাজ করুন। ১ জুলাই থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানীর বাড্ডায় গত ৫ জুলাই এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই কর্মসূচী পুরোদমে শুরু হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সব জেলা ও মহানগরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে জেলা ও মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে দ্রুত সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরাধীন সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে নতুন ও প্রাথমিক সদস্য নবায়নের ফরম সংযুক্ত বই সরবরাহ করতে বলা হয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সদস্য ফরম পূরণ করে তার অনুলিপি কপি কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য আছে প্রায় ৫০ লাখ। নতুনভাবে শুরু হওয়া এই কর্মসূচীর ফলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই দলের নয়া পল্টন কার্যালয়ে অনেককে নতুন সদস্য ফরম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তবে সব জেলায় এখনো এই কার্যক্রম শুরু না হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারণীরা। গত শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকালও তিনি জেলা সদরের রায়পুর ইউনিয়নে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
জানতে চাইলে বিএনপির দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলমান। এ লক্ষ্যে নতুনভাবে দুই মাসব্যাপী কর্মসূচীর উদ্দেশ্য হলো নেতাকর্মীদের মাঝে আরো উদ্দীপনা তৈরি এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা। যা ইতোমধ্যে আমাদের দলের চেয়ারাপারসন বেগম খালেদা জিয়া উদ্বোধন করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সারাদেশে এই কর্মসূচী পুরোদমে শুরু হবে। বর্তমানে বিএনপির প্রায় ৫০ লাখ প্রাথমিক সদস্য রয়েছেন। আমরা আগামী দুইমাসের মধ্যে নতুন করে এক কোটি সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে কাজ করছি। নয়া পল্টন কার্যালয়ে অনেকেই এসে সদস্য ফরম সংগ্রহ করছেন। বিএনপি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে প্রত্যাশা করেন রিজভী।
১ জুলাই সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধনের পর গত সোমবার থেকেই বগুড়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচী শুরু হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম চলবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবার ১ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করেছেন। নেত্রীর এই টার্গেট পূরণ এবং কার্যক্রম সফল করার জন্য বগুড়াবাসী যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। সুনির্দিষ্ট টার্গেটের কথা না জানালেও বগুড়াতে এবার নতুন সদস্য সংগ্রহের সংখ্যা ‘একটি বড় ফিগারের’ হবে বলে তিনি জানান। ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব গত শুক্রবার এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এখন প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
খুলনা মহানগরীতে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, তরিকুল ইসলাম এবং খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কন্ডু ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরের সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সর্বশেষ ২০০৯ সালে পরিচালিত কর্মসূচি থেকে খুলনা মহানগরীতে ২৫ হাজার নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হয়। এবার মহানগরীতে ৫০ হাজার নতুন সদস্য সংগ্রহ করা আমাদের টার্গেট। সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদেরও এবার নতুন সদস্য করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড এই তিনটি ধাপে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই কর্মসূচির মাধ্যমে দল আরো বেশি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হবে বলে তার দাবি।
বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ জানান, নতুন প্রজন্ম যারা এখনো রাজনৈতিক দলে নাম লেখাননি তাদের টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে। যশোর জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপিকে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করতে জেলার নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ইতোমধ্যে যশোর জেলায় ১ লাখ ৪৭ হাজার নতুন সদস্য সংগ্রহ করেছি। কেন্দ্রকে অবহিত করে গত এক বছর ধরে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। যা গত মে মাসে সমাপ্ত হয়েছে। তবে গত ছয় মাস ধরে জেলায় যুবদল-ছাত্রদলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। তিনি জানান, আমরা ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে পাঠানো বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ফরম হাতে পেয়েছি। ফলে আগে থেকে সংগৃহীত এসব সদস্য ফরমগুলো এখন নবায়ন করা হবে। এছাড়া শনিবার থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচীর মাধ্যমে এখন নতুন করে সদস্য সংগ্রহ করা হবে। সবমিলিয়ে প্রায় দুই লাখ সদস্য আমরা সংগ্রহ করতে পারবো।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন জানান, মূলত দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা দলের প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হবেন। তিনি জানান, প্রতিটি ইউনিট নিজেদের সুবিধামতো সময়ে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান হয়েছিলো। কিন্তু তা শেষ হয়নি। এরপর ২০১২ সালে তা আবারো শুরু হয়। বিএনপি নেতারা জানান, আন্দোলনের কারণে পরবর্তীতে এই সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি করতে পারেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আসমা ৯ জুলাই, ২০১৭, ১:০৪ পিএম says : 0
ঘরে বসে বসে সেটা সম্ভব হবে না। তাই বিএনপি নেতাদেরকে ঘর থেকে বের হতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন