বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতায় শীর্ষ দেশগুলোর দায় বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির দেশগুলোর দায় ক্রমে বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এরই মধ্যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে চীনকে টপকে দায়িত্ব নিয়েছে জার্মানি; দীর্ঘসময় ধরে চলতি হিসাবে ঘাটতির মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশ্বজুড়ে চলমান রক্ষণশীলতার ঢেউ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকি হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আইএমএফের বার্ষিক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সঞ্চয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা থেকে সৃষ্ট ঝুঁকি ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক সংকটের চেয়েও ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণকালেই উত্তরাধিকার সূত্রে সুবিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মুখোমুখি। বিশেষ করে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা বৈশ্বিক ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখছে। অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচিগুলোর মধ্যে বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির আকার কমিয়ে আনতে সবচেয়ে জোর দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে বিভিন্ন আমদানিকৃত পণ্যে শুল্কারোপ ও বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা করেছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ চলতি হিসাবে ঘাটতি হ্রাস তথা যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কার্যকর হবে না। আইএমএফের প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক লুই কুবেদু বলেন, যেকোনো মূল্যে রক্ষণশীলতামূলক কার্যক্রম বাদ দিতে হবে। কারণ এ ধরনের পদক্ষেপ কোনোভাবেই অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা দূর করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও ক্ষতিকর হবে তা। আইএমএফের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে জার্মানির চলতি হিসাবে ২৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, যা দেশটির জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এদিক থেকে দেশটি চীনকে পেছনে ফেলেছে। ২০১৬ সালে চীনের ১৯ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল (জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ)। অন্যদিকে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪৫ হাজার ১৭০ কোটি ডলার। এটি শুধু দেশটির জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশই নয়, যুক্তরাজ্যে চলতি হিসাবের ঘাটতির চার গুণ। চলতি হিসাবে ঘাটতির দিক থেকে বিশ্বে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয় (১১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার)। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা কানাডার ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ৫০ কোটি ডলার। এদিকে ২০০৮ সালের সংকটপূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বৈশ্বিক ভারসাম্যহীনতার হার অনেকটাই কমে এসেছে। সে সময় বৈশ্বিক উদ্বৃত্তের বেশির ভাগই ছিল চীনের দখলে। এছাড়া সংকট পূর্ববর্তী সময়ে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের; বর্তমানে যা অনেকটাই কমে এসেছে। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ ঘাটতির মধ্যে থাকা দেশগুলোকে বাণিজ্য রক্ষণশীলতার মনোভাব থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্স্যুরেন্স নীতিমালা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের প্রত্যাহার ইস্যু ঘিরে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ বলে উল্লেখ করেছে আইএমএফ। এছাড়া বিশ্বায়ন ও উদার বাণিজ্যের প্রচারণা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সা¤প্রতিক সফর রক্ষণশীলতার ইস্যুকে আরো উসকে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রধান উপদেষ্টারা জার্মানিকে কৃত্রিমভাবে ইউরোর মান দুর্বল রাখার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। তাদের অভিযোগ, বেআইনিভাবে মুনাফা করতেই দেশটি এমন চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জার্মানি, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত অ্যালুমিনিয়াম ও ধাতবপণ্যে শুল্ক ও নানা বিধিনিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিরোধে জড়িয়ে না পড়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের ঋণের বোঝা হ্রাসে মনোযোগ দেয়া উচিত বলে জানিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিযোগিতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে আইএমএফের পক্ষ থেকে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে জার্মানিকে অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, উৎপাদন সক্ষমতার অভাবে থাকা জার্মানি এভাবেই নিজেদের সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি করতে পারবে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন