শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির রাত পোহাবে কবে?

সুশীল সমাজের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে ইসির সংলাপ

| প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি/ এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে/ সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে/ তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে/ অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি’। ফররুখ আহমদের পাঞ্জেরি কবিতাই এই পংক্তিই এখন বিএনপির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মুখে মুখে। নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর দেশ নির্বাচনী মহাসড়কে উঠে গেছে। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার লক্ষ্যে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনী প্রক্রিয়াও শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। চলছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। ইতোমধ্যে ইসি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছে। আগামী ১৬ ও ১৭ আগষ্ট দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় খরচে জেলা সফরে গিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছে। এমপিদের উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকে এখনো সভা সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ঘরোয়া ভাবে কর্মী সংগ্রহ অভিযানে দলটির নেতাদের আইন শৃংখলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। একপক্ষ রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচে প্রচারণা চালাচ্ছে; অন্যপক্ষকে আইন শৃংখলা রক্ষাজনিত অজুহাতে প্রচারণায় বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। চিত্র দেখেও নির্বাচন কমিশন নীরব থেকেই রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব?
নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুয়ায়ী অংশিজন তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কর্মসূচি দিয়েছে ইসি। তারও আগে দেয়া হয় সুশীল সমাজ, মিডিয়া প্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে তাদের মতামত নেয়ার কর্মসূচি। ৩১ জুলাই ইসি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সংলাপে ৩০ জন সিনিয়র নাগরিক অংশ নেন। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক আমলা ছাড়াও নির্বাচন-স্থানীয় সরকার এবং ভোট নিয়ে গবেষণা করেন এমন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। সংলাপে মূল ফোকাস দেওয়া হয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন-সবার অংশগ্রহণে ভোট। ‘নির্বাচন হচ্ছে সুপার পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ হিসেবে অবিহিত করে বিশেষজ্ঞরা সহায়ক সরকারে অধিনে নির্বাচনের প্রস্তাবনা দিয়ে ভোটের দিন সেনা মোতায়েন, ‘না’ ভোট প্রবর্তন এবং নেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে নৌকা, ধানের শীষ প্রতীকের দলসহ সব দল যাতে প্রচারণায় সমান সুযোগ পায় সে লক্ষ্যে রোডম্যাপের খানাখন্দ মেরামত করার সুপারিশ করেন। বিশেষজ্ঞরা ইসিকে জানান, এক পক্ষ রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন অন্য পক্ষকে প্রচারণায় নামতে দেয়া হবে না এটা চলতে থাকলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সিইসি কে এম নূরুল হুদা ‘তফসিল ঘোষণার আগে ইসির করার কিছু নেই’ বক্তব্য দিলে এর প্রতিবাদ করেন আলোচকরা। তারা সংবিধান ও নির্বাচনী আরচণ বিধির কোন ধারায় কি আছে ইসির কি ক্ষমতা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরে এখনই নিরপেক্ষ ফিল্ড গঠনের পরামর্শ দেন। তারা আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় খরচে প্রচারনা চালাচ্ছে এবং বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না চিত্র তুলে ধরে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে সব দলের জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনের পরামর্শ দেন। শুধু তাই নয় অনেকগুলো ইস্যুতে সিইসি ও ইসি’র কমিশনারদের কথাবার্তা না বলার পরামর্শ দেন। ইসি সংলাপ শেষে সবার মতামত তুলে ধরে পুস্তিকা প্রকাশের কথা জানালে সুশীল সমাজের প্রনিনিধিরা বলেন, সবার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে মাঠ সমতল না করলে হাজার পুস্তিকা প্রকাশ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
১৬ ও ১৭ আগষ্ট পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছে ইসি। কিন্তু কয়েক দিন আগের সংলাপে রাষ্ট্রের সিনিয়র নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কোনো পরামর্শই বাস্তবায়নের চেস্টা করেনি। এমনকি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিরা নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠ দাপিয়ে বেড়ালেও বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানায়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী নতুন সদস্য সংগ্রহ-সদস্য পদ নবায়ন কর্মসূচি চালাচ্ছে। মন্ত্রি-প্রতিমন্ত্রী-এমপিরা রাষ্ট্রীয় অর্থব্যয়ে জেলা-উপজেলা সফরে গিয়ে এ কর্মসুচি পালন করছেন। জেলা প্রশাসক-উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসপি-ওসিসহ প্রশাসনে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের সহায়তা করছেন। অন্যদিকে বিএনপির সংগঠনিক কর্মসুচি হিসেবে সদস্যপদ নবায়ন-নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করার পর থেকে পথে পথে বাধার সন্মুখীন হচ্ছে। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়; বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে পুলিশ বাধা দিয়েছে; লাঠিপেটা করছে। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন সমাবেশ-মহাসমাবেশ দূরের কথা ঘরোয়া পরিবেশে আলোচনা সভা করতেও বাধার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। আর হামলা মামলা তাদের যাপিত জীবনে হয়ে গেছে নিয়তি। বিএনপির নিজস্ব জরিপের তথ্য অনুযায়ী মহাজোট সরকারের আমলে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার মামলা। আসামির তালিকায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ নেতাকর্মীর নাম। দলের চেয়ারপার্সনর বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দুই শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধেই মামলার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। মামলার সেঞ্চুরী-ডাবল সেঞ্চুরী পার করেছেন অন্তত দুই ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। কয়েক ডজন নেতার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৫০ এর উর্ধ্বে। প্রায় সব মামলাই করা হয়েছে বিস্ফোরক দ্রব্য-সন্ত্রাসবিরোধী-দ্রুত বিচার-বিশেষ ক্ষমতা আইনে। মামলা দায়েরের সময় যেসব ধারা উলেখ করা হয় চার্জশিটের সময় আলাদা আইনে বিভক্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন মামলা। চার্জশিটের পর বেশির ভাগ নেতার মামলার সংখ্যা বাড়ছে। মামলার ডাবল সেঞ্চুরী পার করেছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঢাকসুর সাবেক ভিপি আমানউলাহ আমান (২১৭ মামলা), যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল (২১৪ মামলা) ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু (২১০ মামলা)। অন্যদিকে মামলার সেঞ্চুরী পেরিয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (১৩৪ মামলা), চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস (১১২ মামলা), প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী (১২০ মামলা), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল (১৩৭ মামলা), ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক নবী উলাহ নবী (১০০ মামলা), হাবিবুর রশীদ হাবিব (১২০ মামলা)। বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নীতিনির্ধারকসহ কেন্দ্রীয় ও মাঝারি সারির নেতাদের আদালতে সপ্তাহে তিন-চারদিন হাজিরা দিতে হচ্ছে। নেতাকর্মীরা শত শত মামলা মাথায় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগ পাবে না ইসির সংলাপে এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিল সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
দেশের সিনিয়র নাগরিকের সংলাপে ইসিকে প্রস্তাব দিয়েছেন প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হোক। এসব পরামর্শ আমলে নিয়ে ইসি সবার জন্য সমান ফিল্ড করবে কিনা সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আলামত দেখা যাচ্ছে না। অথচ ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীরা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মাঠে না নামার অভিযোগ তুলছেন; আন্দোলন গড়ে তুললে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগের দাবি করছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের এসব বালখিল্য কথাবার্তা প্রসঙ্গে সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি (যারা ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন) বলেন, পুলিশ প্রহরা ছাড়া যারা নির্বাচনী প্রচারণায় জনগণের কাছে যেতে পারেন না তাদের মুখেই কেবল এমন বক্তব্য শোভনীয়। নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগ ইসি তৈরি করতে না পারলে এমন বক্তব্য আসতেই থাকবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মহাসড়কে দেশ; অথচ দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অন্যতম বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন না। মামলার ভারে ন্যূজ্য হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ রিপোর্ট যখন লিখছি তখন রংপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিএনপির এক নেতা ফোনে নিজেদের অবস্থা তুলে ধরতে পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের কবিতা পড়ে শোনালেন ‘ছেলে কয়- মারে, কত রাত আছে কখন সকাল হবে/ ভাল যে লাগে না, এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে/ মা কয় বাছারে চুপটি করিয়া ঘুমা ত একটি বার/ ছেলে রেগে কয় ঘুম যে আসে না কি করিব আমি তার?’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
আকাশ ৮ আগস্ট, ২০১৭, ২:৪২ এএম says : 0
ইসির সংলাপ যেন লেঅক দেখানো না হয়---- এটাই জনগণের প্রত্যাশা
Total Reply(0)
হাসিব ৮ আগস্ট, ২০১৭, ২:৪৩ এএম says : 0
এই অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের পরে একটি সুন্দর দিন বা সময়ের অপেক্ষায় আছে গোটা জাতি
Total Reply(0)
Mukesh Ghosh ৮ আগস্ট, ২০১৭, ১১:১২ এএম says : 0
যে দিন বিএনপির সকাল হবে সেদিন।
Total Reply(0)
Md. Harun-ur-Rashid ৮ আগস্ট, ২০১৭, ২:৫৭ পিএম says : 0
Mukher kathay chira bajayana, andolon kortai shahas lagi, kuntu readymade nitara ba karira ta parana. THIS PARTY WAS CONCEIVE FROM A MILITARY RULER POCKET AND MOST OF POLITICAL GARBAGE ALWAYS JOINED WITH THIS PARTY. MR STALIN SARKER PLEASE HIGHLIGHT ABOUT THIS.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন