মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের হাতে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ১৫৭ জন সংসদ সদস্য। এক চিঠির মাধ্যমে তারা মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া স্থগিত করতেও আহŸান জানান। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে বার্মার দ্য ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চিকে সতর্ক করেছেন যে জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন দেশটির খ্যাতিকে কলঙ্কিত করেছে।
পার্লামেন্ট সদস্যরা জনসনের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানায় এবং পাশাপাশি তরা বার্মিজ সামরিক বাহিনীকে ব্রিটিশ প্রশিক্ষণ স্থগিত করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানায়।
গত বছর বার্মিজ সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রশিক্ষণ ব্যয় বাবদ যুক্তরাজ্য ৩,০৫,০০০ পাউন্ড খরচ করেছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে সা¤প্রতিক সহিংসতায় দেশটির সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে গলা কেটে হত্যা, ধর্ষণ এবং শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করার অভিযোগ ওঠেছে।
যুক্তরাজ্য যুদ্ধ প্রশিক্ষণ প্রদান করে না বরং গণতন্ত্র, নেতৃত্ব এবং ইংরেজি ভাষায় সৈন্যদের প্রশিক্ষিত করার চেষ্টা করে।
গত বছরের নভেম্বরে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাইক পেনিং বলেছিলেন যে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযানে জড়িত কোনো সৈন্যকে যুক্তরাজ্য কর্তৃক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে কিনা সরকার সে সম্পর্কে অবগত নয় এবং প্রশিক্ষণ মানবাধিকারের উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রেখেছে কর্মকর্তারা তা মূল্যায়ন করে নি।
মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে গত দুই সপ্তাহে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
লেবার পার্টির এমপি রুশনার আলীর নেতৃত্বে পার্লামেন্ট সদস্যরা লিখিত চিঠিতে বরিস জনসনকে বলেন, ‘জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন এবং রোহিঙ্গা সংগঠনসমূহের রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা মিয়ানমারের ইতিহাসের জগন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করছি।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য গঠিত সর্বদলীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান।
এতে বলা হয়, ‘চার শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মিয়ানমার সরকার স্বীকার করেছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য রোহিঙ্গা সূত্রগুলোর মতে এই সংখ্যা ২ হাজার থেকে ৩ হাজারের মধ্যে।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে, তাদেরকে সারিবদ্ধভাবে শুয়ে থাকতে তাদের বাধ্য করার পর মাথার পিছনে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এছাড়াও, তাদের শিশুদের, শ্বাসরোধ করে হত্যার পাশাপাশি ঘরের ভিতর আটকে রেখে তারপর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তারা শিশুদেরকেও ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যা করছে।’
এছাড়াও, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হেইঙ্গকে চাপ প্রয়োগ করতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জনসনের প্রতি আহŸান জানায় এবং বলেন যে, ‘বার্মিজ সামরিক বাহিনীর প্রতি সরকারের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত’। সূত্র: টাইমস এন্ড স্টার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন