বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলা

বিশ্ব নারী দিবস আসে যায়

তবু ও এতটুকু কমেনা নারীর মজুরি বৈষম্য

প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত ৮ মার্চ ছিল বিশ্ব নারী দিবস। এর আদি নাম ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান বেশি গুরুত্ব পায়। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়; ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। ‘অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারো ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ। দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ইতিমধ্যেই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ দেশের বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে ছিল র‌্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভা। দিবসের কার্যক্রম প্রসঙ্গে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, এবারের দিবসটি পালনের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল ৬ মার্চ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অংশগ্রহণে দেশব্যাপী মানববন্ধন। ৬ মার্চ সকাল সাড়ে দশটায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। নারী দিবসের দিন অর্থাৎ ৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সব শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। প্রধান মন্ত্রী বলেন ধর্মের নামে নারীকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ইসলাম নারীকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ সব অধিকার প্রদান করেছে। নারী শিক্ষিত হচ্ছেন। পুরুষের পাশাপশি দক্ষতায় আন্তরিকতায় কাজে-কর্মে নিজের অবস্থান যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। মেধা মননে সামর্থ্যে পিছিয়ে নেই নারীরা। তারপরও এই নারীরা প্রতিনিয়ত ঘরে বাহিরে নির্যাতন নিপিড়নের শিকার। তবে কেন, নারীর প্রতি এই অবিচার? ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মজুরি বৈষম্য, যুলুম নারীর প্রতিদিনের সঙ্গী। আজ সময় এসেছে ভাবার। যে নারী ছাড়া পুরুষের জীবন পরিপূর্ণ নয় সেই নারীকে কেন এত লাঞ্ছনা ও বঞ্ছনার শিকার হতে হবে? প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে হত্যা, ধর্ষণ, নিপিড়নসহ নারীর প্রতি জুলুম অত্যারের মর্মান্তিক খবর। এ থেকে বাদ যায় না শিশু ও কিশোরীরাও। জাতীয় কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই। ‘পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক নর।’ এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’। শ্লোগানটি সার্থক হোক। সুন্দর হোক নারীর আগামীর পথচলা।
য় আলম শামস

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন