অপেক্ষার পালা শেষ। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আর মাত্র ক’ঘন্টা পর ঢাকায় উদ্বোধন হচ্ছে হিরো এশিয়া কাপ হকি টুর্নামেন্টের। দীর্ঘ ৩২ বছর পর এশিয় হকির সর্ববৃহৎ এ টুর্নামেন্ট ঢাকায় ফিরলেও এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হচ্ছে সাদামাটা। দুপুর পৌঁনে তিনটায় মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি থেকে এ আসরের উদ্বোধন করবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, এমপি। এ সময় উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) সভাপতি ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এমপি এবং এশিয়ান হকি ফেডারেশনের (এএইচএফ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৈয়ব ইকরাম।
টুর্নামেন্টে এশিয়ার আটটি দেশ দুই গ্রæপে ভাগ হয়ে অংশ নিচ্ছে। ‘এ’ গ্রæপে খেলবে- স্বাগতিক বাংলাদেশ, শক্তিশালী ভারত, পাকিস্তান ও জাপান। ‘বি’ গ্রæপের দলগুলো হচ্ছে- টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ওমান ও চীন। দু’গ্রæপের দু’টি করে দল যাবে সেমিফাইনালে। বাকিরা খেলবে স্থান নির্ধারনী ম্যাচ। টুর্নামেন্টে স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য ষষ্ঠস্থান অর্জন। শ্রেষ্ঠত্বের মহারণে নামার অপেক্ষার পালা শেষে আজ উদ্বোধনী দিন ‘এ’ গ্রæপের প্রথম ম্যাচে ভারত মোকাবেলা করবে জাপানকে। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে বেলা তিনটায় শুরু হবে ম্যাচটি। একই ভেন্যুতে বিকাল সাড়ে ৫টায় দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
আসরকে সামনে রেখে দু’দিন আগেই ঢাকায় এসেছেন সাত বিদেশী দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়,এএইচএফের কর্মকর্তারাও এখন রাজধানীতে অবস্থান করছেন। আট দেশের অধিনায়কের উপস্থিতিতে সোমবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে উম্মোচিত হয় টুর্নামেন্টের ট্রফি। এশিয়া কাপের দশম আসরকে সামনে রেখে নতুন সাজে সেজেছে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম। এখানে স্থাপন হয়েছে বহুল কাঙ্খিত ফ্লাডলাইট। বসেছে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক স্কোরবোর্ড। ড্রেসিংরুম, গ্যালারী ও নীলাভ টার্ফ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করাসহ স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাহিরে করা হয়েছে নানা সংস্কার কাজ। গেল দু’মাস ধরে কয়েকশ’ শ্রমিকের সমন্বয়ে করা হয় এই কাজগুলো। আধুনিক সাজে সজ্জিত করা হয়েছে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের রুমগুলো। স্টেডিয়ামের রবিউদ্দিন গেট থেকে সরাসরি ভিভিআইপি বক্সে ওঠার জন্য স্থাপন হয়েছে লিফট। ভিআইপি দর্শকদের জন্য গ্যালারিতে ছাউনি দেয়া হয়েছে। তবে প্রেসবক্স সম্প্রসারিত হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তেমন বড় করা হয়নি। সরেজমিনে দেখে বোঝা গেছে, প্রেসবক্সে গাদাগাদি করে চেয়ার বসানোর ফলে নড়াচড়ার জায়গা নেই। ফলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে।
১৯৮৫ থেকে ২০১৭ সাল। দুরত্ব দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশী সময়ের। তখন ঘাসের মাঠে খেলা হলেও ৮৫’ সালের এশিয়া কাপে জুম্মন লুসাই, লুলু, কিসমতদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন দর্শকরা। পশ্চিম আকাছে সূর্য ঢলে পড়ার আগেই খেলা শেষ করতে হতো তখন। এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবারের এশিয়া কাপ হবে আন্তর্জাতিক মানের নীল টার্ফে। এএইচএফের শর্তমোতাবেক স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট বাসার কারণে এখন আর সূর্যের অপেক্ষা করতে হবেনা। রাতের আধাঁরেও খেলা চলবে।
’৮৫ এশিয়া কাপে লাল-সবুজরা ভালো খেলোয় হকি নিয়ে দেশে একটি জোয়ার তৈরী হয়েছিল। ওই আসরে স্বাগতিক বাংলাদেশ জুম্মন লুসাইয়ের হ্যাটট্রিকের সুবাদে ইরানের বিপক্ষে ৩-১ জয় পেয়েছিলো। কিসমতের গোলে জাপানের বিপক্ষে ম্যাচটি ১-১ ব্যবধানে ড্র করার পর কিসমত ও মালেক চুন্নুর গোলে চীনের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। এরপর তো পাকিস্তানকে প্রায় রুখেই দিয়েছিলেন শাহাবুদ্দিন চাকলাদাররা। ম্যাচের ৬৪ মিনিটি পর্যন্ত আটকে রাখার পর পাকিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিলো লাল-সবুজরা। আর কোয়ার্টার ফাইনালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। তখন জুম্মন লুসাইদের এমন পারফরম্যান্সের পর দেশে হকির জাগরন তৈরী হয়েছিল। মাঠে-ঘাটে কিশোর-তরুণরা বাঁশ বা কাঠ দিয়ে স্টিক বানিয়ে মেতে ওঠেছিল হকি নিয়ে। কিন্তু পরের সময়টা হতাশার।নানা কারণে ধীরে ধীরে হকিকে ভুলতে শুরু করেছে দেশের তরুণ সমাজ। তবে সময় এসেছে ফের দেশের হকির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর। আর এ কাজটি করতে পারেন জিমি-চয়নরাই। দশম এশিয়া কাপে ভালো করে তারা আবারও ফিরিয়ে আনতে পারেন দেশের হকির হারানো গৌরব। তাদের দিকেই চেয়ে আছে গোটা দেশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন