অপেক্ষার পালা শেষ। মাঠে গড়ালো হিরো এশিয়া কাপ হকি টুর্নামেন্ট। দীর্ঘ ৩২ বছর পর এশিয় হকির সর্ববৃহৎ এ টুর্নামেন্ট ঢাকায় ফিরলেও শুরুটা মধুর হয়নি বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনই স্বাগতিক বাংলাদেশকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে উড়ন্ত সূচনা করলো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। গতকাল মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে ‘এ’ গ্রæপে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশকে। চার কোয়ার্টারের ম্যাচের প্রথমটি গোলশূণ্য থাকলেও দ্বিতীয় কোয়ার্টারে এক, তৃতীয় কোয়ার্টারে তিন এবং চতুর্থ কোয়ার্টারে আরও তিনটি গোল হজম করে লাল-সবুজরা। পাকিস্তানের হয়ে আবু মাহমুদ তিনটি, শাকিল বাট ও মোহাম্মদ কাদির দু’টি করে গোল করেন। শক্তির বিচারে যোজন যোজন এগিয়ে পাকিস্তান, তা বেশ মোটা দাগেই জিমিদের বুঝিয়ে দিল পাকিস্তান।
১৯৮৫ এশিয়া কাপে ঢাকায় ঘাসের মাঠে শাহাবুদ্দিন চাকলাদার, কামরুল ইসলাম কিসমতরা যা পেরেছিলেন তা মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের নীলাভ টার্ফে পারেননি রাসেল মাহমুদ জিমি, মামুনুর রহমান চয়নরা। তখন ম্যাচের ৬৪ মিনিট পর্যন্ত তৎকালীন অলিম্পিক ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে আটকে রাখার পর শেষ মূহূর্তে গোল হজম করেছিলো বাংলাদেশ। আর গতকাল এখনকার পাকিস্তানের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি লাল-সবুজরা। ১৭ মিনিটে আবু মাহমুদের স্টিক থেকে যে গোলের সূচনা করে পাকিস্তান তা থামে ৫৯ মিনিটে মোহাম্মদ কাদিরের গোল করার মধ্যদিয়ে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাতে গোনা তিন/চারটি সুযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। যা থেকে একবারও তারা সফল হতে পারেনি।
নিজের শততম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি স্মরনীয় করে রাখতে পারলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক জিমি। তাই মনটাও তার বেজায় খারাপ। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জিমির চেহারা দেখেই তা বোঝা গেল।
ঘরের মাঠে এশিয়া কাপ। কতই না রোমাঞ্চিত ছিলেন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়রা। কত সভা, সেমিনার। ঘাম ঝড়ানো অনুশীলন। চীন গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা। টুর্নামেন্টের আগে জাপানের বিপক্ষে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়া। সবই যেন জলে গেল। একটি গোল শোধ দেয়া তো দূরের কথা ম্যাচে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। তাই তো জিমির কন্ঠে অনুযোগের সূর, ‘ম্যাচে আমাদের শুরুটা ভালই ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আমরা খেলেছিও ভাল। কিন্তু তৃতীয় কোয়ার্টার থেকেই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারোয়ারের অভাবতো ছিলই দলে। তবে এখন প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিজের পজিশনে খেললে চলে না। পজিশন পরিবর্তন করে খেলতে হয়। তৃতীয় কোয়ার্টারে গিয়ে আমরা এলোমেলো হয়ে পড়ি।’ মিডিয়ার প্রশ্ন- কোচ মাহবুব হারুনের নির্দেশ কি ছিল? এর জবাবে জিমি বলেন, ‘ছোট পাসে খেলে বল নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ ছিল। কিন্তু আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। তাই এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের।’
জাতীয় দলের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘প্রথম এবং দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আমরা ছন্দেই ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় কোয়ার্টার থেকেই ছেলেদের ভুল শুরু হয়। মিডফিল্ডে বল ধরে রাখতে পারেনি তারা। বল পজিশন নিজেদের মধ্যে ছিল না। তাই আমাদের বাজে দিন দেখতে হয়েছে।’
ম্যাচের শুরুতেই ঝামেলা দেখা দেয় বাংলাদেশ দলে। মিডফিল্ডার রোমান সরকার দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু নিজের জার্সী আনতে ভুলে যান তিনি। তন্ন তন্ন করে ব্যাগ খুঁজেও পাননি জার্সী। পরে হোটেল থেকে আনতে হয়। ফলে প্রথম একাদশে নামতে পারেননি রোমান। ভুলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধেছিল যেন দূর্ভাগ্যও। না হলে ১-০ তে পিছিয়ে পড়ার পর ডান প্রান্ত দিয়ে জিমির শট কেনইবা ক্রসবারে লেগে ফিরে যাবে। একে ম্যাচের দুর্ভাগ্যই বললেন জিমি, ‘আসলে এমন বড় ম্যাচে ওই গোলটি হলে মানসিকভাবে আমরা চাঙ্গা থাকতে পারতাম।’
আগামীকাল টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আরেক শক্তিশালী ভারতকে মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন