শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে এম এ মতিন : গাজীপুর সদরের তিনটি ইউনিয়ন ভাওয়ালগড়, পিরুজালী, মির্জাপুর ও শ্রীপুর উপজেলার ছয়টিসহ মোট ৯টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা নিয়ে গাজীপুর-৩ আসনটি গঠিত। এই আসনটি বরাবরই আ.লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ সনের নির্বাচনে বর্তমান এমপি অ্যাড. রহমত আলী কারাগারে থাকার কারণে নির্বাচন করতে না পারায় বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা চৌধুরী তানভীর আহম্মদ সিদ্দিকী এমপি হন। বাকি সব কয়টি নির্বাচনে অ্যাড. রহমত আলী আ.লীগ থেকে গাজীপুর-৩ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন। গত এক বছর যাবত তিনি অসুস্থ। তার দ্বিতীয় ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় ভারতে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করে সরাসরি আ.লীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। ইতোমধ্যেই তিনি সংসদীয় এলাকায় ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন এবং পিতার স্থলাভিসিক্ত হয়ে সাংগঠনিকসহ সমস্ত কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান এমপি নির্বাচনের আগে সুস্থ হয়ে না ওঠলে তার স্থলে জামিল হাসান দুর্জয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইকবাল হোসেন সবুজ এককালের ছাত্রনেতা। ১৯৯৩ সালে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ থেকে ভিপি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্তমান জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, তিনিও মনোয়ন প্রত্যাশী। এদিকে আ: জলিল একসময়ের ছাত্রনেতা, তেলিহাটি ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বর্তমান শ্রীপুর উপজেলার চেয়ারম্যান, তিনিও মনোনয়নের জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। আ.লীগ থেকে বর্তমান এমপি অ্যাড. রহমত আলীসহ চারজনই মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তিন প্রার্থী নিজেদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। তারা নিজস্ব বলয়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে এমপিপুত্র জামিল হাসান দুর্জয় ও ইকবাল হোসেন সবুজ যার যার বলয়ে মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজীপুর-৩ আসনে সর্বত্রই এখন একাদশ জাতীয় সংসদীয় নির্বাচনের আমেজ বইতে শুরু করছে। বর্তমানে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি অনেকটা কৌশলী হয়ে নীরবে নির্বাচনী মাঠ গোছানো শুরু করেছে। বিএনপি নেতাদের মাঝে এখনো হামলা-মামলার আতঙ্ক কাজ করছে। তাই তারা আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপকহারে মাঠপর্যায়ে না নামলেও প্রায় সব’কটিতে দলীয় হাইকমান্ড থেকে গ্রিনসিগন্যাল দেয়া রয়েছে কেন্দ্রীয় দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী পীরজাদা মাওলানা এস এম রুহুল আমিন তিনি শ্রীপুর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক ওলামা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। আলহাজ শাহজাহান ফকির একসময়ের ছাত্রনেতা, ঐতিহ্যবাহী বরমী ইউনিয়নের সাবেক নির্বাচিত চেয়ারম্যান, বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি। বিএনপির আরেক প্রার্থী ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম (বাচ্চু) ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে এমবিবিএস পাস করে সরাসরি ড্যাবের রাজনীতিতে যোগ দেন। বর্তমানে ড্যাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। তিনি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০১৪ সালে নিজ বাসায় ও অফিসে বর্তমান সরকার কর্তৃক বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে চেয়ারপারসনের সাথে দেখা করায় ও যোগাযোগ রাখায় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি একজন চিকিৎসক হওয়ায় এলাকায় অনেক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান ও জটিল রোগীদের ঢাকা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের জন্য মাঠে কাজ করছেন এই রকম কোনো নেতা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে কোনোরকম ছাড় দিতে চায় না। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যায়, আলহাজ অ্যাড. রমহত আলী অসুস্থ্যতার কারণে মনোনয়ন না পেলে আগামী নির্বাচনে গাজীপুর-৩ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন