কামরুল হাসান দর্পণ
স্বাধীনতার পরপর তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বা তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এ বিষয়টি তিনি মানতে পারেননি বলেই ক্রুদ্ধ হয়ে মন্তব্যটি করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। তবে বাংলাদেশের জনগণ কী করতে পারে, এ সম্পর্কে যদি তার ধারণা থাকত, তাহলে এ মন্তব্যটি নিশ্চিতভাবেই করতেন না। বাংলাদেশের মানুষের সুদীর্ঘ ইতিহাসও হয়তো তার জানা ছিল না। বলা হয়, শ্যামল বাংলার মানুষের মন পলিমাটির মতোই নরম, আবার শুকিয়ে গেলে পাথরের চেয়েও কঠিন। সহজে যেমন রাগ করে না, তেমনি একবার রাগ করলে বা ধরলে সহজে ছাড়ে না। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশটির মানুষ তখন কিসিঞ্জারের এ মন্তব্যের জবাব দিতে পারেনি। জবাব দেয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। তবে তখন কেউ কাউকে তিরস্কার করার জন্য বলত, ‘তোমার কিসিঞ্জারি বুদ্ধি রাখো, সোজা কথায় আস।’ এখন অবশ্য এ ধরনের কথা খুব একটা শোনা যায় না। এদেশের জনগণ কিসিঞ্জারের বুদ্ধির ধার ধারে না। তারা এখন নিজের বুদ্ধিতেই চলে। ডুবলে নিজের বুদ্ধিতেই ডোবে। ভাসলে নিজের বুদ্ধিতেই ভাসে। তবে তারা তাদের নিজের বুদ্ধিতে যে ভেসে চলেছে এবং কিসিঞ্জারের অসম্মানজনক মন্তব্যকে অসার প্রমাণ করে দিয়েছে, তা এখন বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির চিত্র দেখেই বোঝা যায়। তলাবিহীন ঝুড়ির তলা লাগিয়ে উপচে পড়া ঝুড়িতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন উপচে পড়ছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জিডিপির ভারসাম্যমূলক সূচক, খাদ্যোৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ইত্যাদির মাধ্যমে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার মতো অভাবনীয় ঘটনা ঘটিয়ে দিয়েছে। ফসল উৎপাদনে এতটাই সাফল্য দেখাচ্ছে যে, কোনো কোনো বছর, দাম না পেয়ে ফসল রাস্তায় ফেলে কৃষককে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের এই উন্নতির কথা কিসিঞ্জারের দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের তাবত পরাশক্তি স্বীকৃতি দিচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত তারই দেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা তো বাংলাদেশকে অর্থনীতিতে এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এই যে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা ৮০০ কোটি টাকা নিয়ে গেছে, এই টাকাকে আমাদের এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মতলুব আহমাদ বলেছেন, এ টাকা নিয়ে যাওয়া কোনো ঘটনাই না। এটা ছেঁচড়া চোরের কাজ। অর্থাৎ সাগর থেকে এক চামচ পানি নিলে সাগরের তেমন কিছু যায় আসে না বা তার পানিতে কোনো টান পড়ে না।
দুই.
এ কথা সত্যি, বাংলাদেশ উন্নতি করছে। এশিয়ার ইমার্জিং টাইগারে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। বাংলাদেশের পরিশ্রমী ও উন্নয়নকামী মানুষ উন্নতির দিগন্ত রেখার দিকে মনেপ্রাণে ছুটে চলেছে। তাদের এই নিরলস উন্নতির রেখাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১৩১৬ ডলার। অবশ্য এ নিয়ে একটা বিতর্ক আছে। এটাকে অনেকে কাগজেকলমে বলছেন। বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। মিল না থাকারই কথা। এটি গড় হিসাব। যে বেকার তার তো এই আয় হওয়ার কথা নয়। তারপরও তার আয় ১৩১৬ ডলার হলো কী করে? ওই যে বললাম গড় হিসাব। যার শত শত কোটি টাকা আছে তার সঙ্গে অন্য আয় রোজগারকারীদের অর্থ ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে গড় করে ভাগাভাগি হয়েছে। এই গড় ১৩১৬ ডলার এবং তা একজন বেকারের ওপরও পড়েছে। সে যাই হোক, কিছু মানুষের অর্থ সম্পদের উন্নতি দিয়ে দেশের অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে। অর্থনীতির উন্নতিটাই এমন গোলমেলে। পরিসংখ্যান সবসময় সঠিক হিসাব দেয় না। তবে খালি দৃষ্টিতে মানুষজন ও অবকাঠামোর দিকে তাকালে উন্নতির ছোঁয়া তো দেখা যায়ই! সেটা সুষম হোক আর অসম হোক। আবার আমরা যদি জিডিপির দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে কয়েক বছর ধরে এর প্রবৃদ্ধি ৫ ও ৬ বা সাড়ে ৬-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। সরকার বারবার ভবিষ্যদ্বাণী ও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছে ৭ হবেই। যখন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দেশীয় বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও সংস্থা বলছে সরকারের টার্গেট পূরণ হয়নি, জিডিপি হয়েছে এত, তখন সরকার তার মানসম্মান রক্ষার জন্য তার থেকে একটু বাড়িয়ে বলে হয়েছে এত। তারপর আবার আশাবাদ ব্যক্ত করে। এসব হিসাব-নিকাশ জটিল ব্যাপার-স্যাপার। সাধারণ মানুষের জন্য নয়। তবে একটা কথা ঠিক, জিডিপির হার একটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। সরকারের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে এই হার বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সরকার যদি বলেও দেয় ৭ হয়েছে, তাতে কার কী আসে যায়? কে এর সত্যতা যাচাই করতে যাবে? আমাদের দেশের কোনো সরকার কখনই বলে না, তার আমলে কোনো উন্নতি হয়নি। সরকার বলতেও পারে না। বললে তো আর তার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। তবে তারা যে পরিমাণ উন্নতির কথা বলে, ওই পরিমাণ না হলেও কিছু উন্নতি তো হয়ই। তাতে সরকারের উন্নতির স্পৃহা থেকে জনসাধারণের উন্নতির স্পৃহাই এগিয়ে থাকে বেশি। জনসাধারণের এই স্পৃহার কারণেই দেশ এগিয়ে যায়। তাদের এই স্পৃহার সঙ্গে যদি সরকারের উন্নতির পরিকল্পনা সঠিকভাবে যুক্ত হতো, তাহলে নিশ্চিতভাবেই উন্নতির রেখাচিত্রটি সুষমভাবে এগিয়ে যেত। দুঃখের বিষয়, সরকারের প্ল্যান অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন বা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে সঠিকভাবে সমন্বয় হয় না। যে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হয় এবং অর্থ বরাদ্দ করা হয়, বছরের পর বছর ধরে তার সমন্বয় সাধিত হচ্ছে না। অবকাঠামোগত যেসব প্রকল্প নেয়া হয়, দেখা যায় তা শুরু করতে করতেই আর্থিক বছরের দুই-তিন মাস চলে যায়। তারপর বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় হয় এবং কাজ শুরু হয় ঢিমেতালে। যেই অর্থ বছর শেষের দিকে এসে দাঁড়ায়, তখনই তড়িঘড়ি করে অর্থ ছাড় এবং কাজ শুরু হয়। এই করতে গিয়ে প্রকল্পের কাজ তো শেষ হয়ই না, যা হয় তা অতি নি¤œমানের হয়। আর প্রকল্পের অর্থের লুটপাটের জন্য প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত একশ্রেণির কর্মকর্তা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রকল্পের উন্নতি না হলেও তাদের বেশ উন্নতি হয়। অতঃপর প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত সময় শেষ এবং অর্থ পুরোপুরি ব্যয় না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ে, নতুন করে অর্থও বরাদ্দ করা হয়। সরকারের নেয়া অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। সরকারও প্রকল্পের সূচনা কাজ দেখিয়ে উন্নয়নের ঢোল পেটাতে থাকে। আবার অনেক সময় ঘটা করে প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকেও উন্নয়নের স্মারক হিসেবে ব্যাপক প্রচার করা হয়। উন্নয়ন নিয়ে এই যে চালবাজির সংস্কৃতি, এটা বছরের পর বছর ধরে চলছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকাসহ যেসব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো উন্নয়ন প্রকল্পে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা দেয়, এই অর্থও সরকার সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারছে না। এক হিসাবে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে দাতা সংস্থাগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থের ৩৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত গেছে। এর মূল কারণ, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারা, সক্ষমতার অভাব এবং দুর্নীতি প্রবণতা। কী বিস্ময়কর ব্যাপার! পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে অর্থাভাবে উন্নতি করতে পারছে না, সেখানে আমরা বিপুল অর্থ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারছি না। অর্থাৎ উন্নয়ন কাজে ঘরের টাকাও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছি না, বাইরের টাকাও ধরে রাখতে পারছি না। এ অবস্থার মধ্যে থেকেই যদি সরকার তার উন্নয়নের কথা বলে, তবে তা কি অনেকটা প্রহসনের মতো নয়? টাকাই যদি কোনো কাজে না লাগে বা লাগানো না যায়, তবে সেই টাকা কি অচল টাকা নয়? অর্থনীতিতে উন্নয়নের মূল তত্ত্বই হচ্ছে বিনিয়োগ। অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করা। জমিয়ে রাখা নয়। অর্থ হচ্ছে জ্বালানি তেলের মতো। ইঞ্জিন যতই নতুন হোক না কেন, তাতে যদি এই তেল না দেয়া হয়, তবে তা কোনো দিনই স্টার্ট নেবে না। ইঞ্জিনে তেল দিলে তা স্টার্ট নেবে, সচল হবে এবং এগিয়ে যাবে। পুনরায় তেল দিতে হবে এবং ইঞ্জিন সচল রাখতে হবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ এবং পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যা উন্নয়ন হচ্ছে, তা পুরনো বিনিয়োগের মাধ্যমেই হচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে একটা সময় অর্থনীতি সংকটে পড়তে বাধ্য। পেটের ভাত হজম হয়ে এক সময় ক্ষুধা লাগবেই।
তিন.
হেনরি কিসিঞ্জার বিশ্বখ্যাত কূটনীতিবিদ হতে পারেন, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তার দূরদৃষ্টি যে ক্ষীণ ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশকে তার দেয়া ‘বটমলেস বাস্কেট’ এখন আর বটমলেস নেই। এ দেশ এখন ‘বাস্কেটফুল’। এখানে অর্থের ছড়াছড়ি। অর্থ উপচে পড়ে তা এখন দেশের বাইরে গিয়ে পড়ছে। এদেশের কিছু দুর্বৃত্ত শ্রেণি লুটপাট করেও এই অর্থ শেষ করতে পারছে না। বিগত দশ বছরে এ দেশ থেকে তার দেশসহ বিভিন্ন দেশে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বটমলেসই যদি হতো, তবে এত টাকা আসে কোত্থেকে? অশীতিপর বৃদ্ধ কিসিঞ্জার যদি তার দেশের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হিসাব নেন যে বাংলাদেশের রিজার্ভ কত, তাহলে তিনি লজ্জায় জিভ কাটবেন। যাই হোক তার জ্ঞাতার্থে জানাই, বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভুলত্রুটি থাকতে পারে, তবে অর্থের অভাব নেই। আর অর্থ যেখানে থাকবে সেখানে একটু-আধটু সমস্যা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে বড় ধরনের সমস্যা হয় না। এ যেমন শেয়ার মার্কেট থেকে এক লাখ কোটি টাকা লোপাট হলেও কোনো সমস্যা হয়নি। ৩৩ লাখ ফড়িয়া টাইপের মানুষ হয়তো নিঃস্ব হয়েছে, কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে, তাতে সরকারের কিছু যায় আসেনি। সরকারও জানে কিছু দিন এ নিয়ে হইচই হবে, তারপর থেমে যাবে। সরকারের এ ধারণা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। এখন আর শেয়ারবাজারের লুটপাট নিয়ে কোনো কথা হয় না। যারা জড়িত ছিলেন, তাদেরও কিছু হয়নি। সেই থেকে বাংলাদেশ নামক টাকার খনির টাকা উত্তোলন শুরু। তারপর ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হলমার্ক, সোনালি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সোনালি ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনাকে তো আমাদের অর্থমন্ত্রী তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এটা কোনো টাকাই না। বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেটই যদি হতো, তবে এত টাকা এলো কোত্থেকে? এখানেই শেষ নয়, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যে হ্যাকাররা ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে, এ টাকাও কোনো ব্যাপার না বলে বলেছেন আমাদের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি। তবে তিনি অনেকটা আশ্বস্ত বোধ করেছেন এই ভেবে, হ্যাকাররা যে রিজার্ভের পুরো ২৮ বিলিয়ন ডলার নিয়ে নেয়নি। এবার বুঝুন, আমাদের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতার কত কনফিডেন্স যে, ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হওয়াকে তিনি কোনো টাকাই মনে করছেন না! রাষ্ট্রের অর্থ লোপাটের ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করার মতো এত বড় বুকের পাটা কি অন্য দেশের কোনো ব্যবসায়ীর আছে? আমরা অর্থের সাগরে ভাসছি। এই সাগরের ঢেউয়ে একটু চিৎ-কাত হলেও আমরা ভয় পাই না। গণতন্ত্রের দুর্দশা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব, নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলো আমলে নিলে উল্লিখিত ঘটনাগুলো অবশ্যই খারাপ। এসব ঘটনা না ঘটলে এবং বিপুল অর্থ লুটপাট না হয়ে সুরক্ষিত থাকলে, আমাদের উন্নতির গতিটা আরও বহুগুণে বেগবান হতো।
চার.
উন্নতির এ পর্যায়ে এসে আমরা খানিকটা বিপাকে পড়েছি। রাজনৈতিক অঙ্গন সুনসান নীরব থাকলেও ধারাবাহিকভাবে এমন কিছু অকল্পনীয় ঘটনা ঘটছে, যা আমাদের বিচলিত করছে। জঘন্যতম পারিবারিক ও সামাজিক অপরাধ ঘটার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন হচ্ছি। শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার অজুহাতে গত নভেম্বরে ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে অস্ট্রেলিয়া। আর গত সপ্তাহে একই কারণ দেখিয়ে যুক্তরাজ্যও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশও যুক্তরাজ্যের এ পথ অনুসরণ করতে পারে। তারপর চুক্তি করেও মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। শুধু শ্রমিক নেয়া বন্ধ ঘোষণাই করেনি, ২০১১ সালের অক্টোবরে করা একটি সমঝোতা স্বাক্ষর থেকেও সরে যাচ্ছে। এ চুক্তির মধ্যে ছিল উত্তরায় ৮ হাজার ৪০০ ফ্ল্যাট নির্মাণে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা। একের পর এক এ ধরনের ঘটনা যে আমাদের উন্নতি ও অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে উঠছে তাতে সন্দেহ নেই। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, অর্থনৈতিক এসব সমস্যার কারণে উন্নতির মহাসড়কের মাঝ পথে গিয়ে যদি আমরা থেমে যাই, তাহলে তো শত বর্ষের কাছাকাছি কিসিঞ্জার সাহেবের কুঞ্চিত মুখে হাসি ফুটতেই পারে। আমাদের সরকার কি কিসিঞ্জারের মুখের হাসি প্রসারিত হতে দেবে? নাকি যেসব কারণে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে? তবে আমরা মনে করি, সরকার আসবে, যাবে। আমরা থেমে থাকব না। আমেরিকার অবিসংবাদিত মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছিলেন, ‘ইফ ইউ ক্যান রান, দ্যান রান, ইফ ইউ ক্যান ওয়াক, দ্যান ওয়াক, ইফ ইউ ক্যান ক্রল, দ্যান ক্রল। বাট রিমেম্বার, হোয়াটএভার ইউ ডু, নেভার স্টপ, কিপ মুভিং।’ সরকারের ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা হয়তো হোঁচট খাব, তবে আমরা আবার উঠে হয় দৌড়াব, না হয় হাঁটব, না হয় গড়িয়ে চলব। থামব না।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন