ময়মনসিংহের ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার ২০ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-২ সংসদীয় আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত। আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এম শামছুল হক এ আসন থেকে ৫বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং থাকলেও দলের স্বার্থে ঐক্যের জায়গাটি সুসংহত করার নজির আগেও দেখিয়েছে দলটি। আসন্ন নির্বাচনেও তা ফুটে উঠবে বলে দৃঢ় আশাবাদী তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। আর দলীয় ঐক্যের পথ ধরে আসনটি আগামীতেও আওয়ামী লীগের কব্জায় থাকবে বলে মনে করেন নেতারা। অপরদিকে ঘরের আগুনে পুড়ছে বিএনপি। গ্রুপিং কোন্দলের কারণে সুবিধা করতে পারছেনা বিএনপি। গ্রুপিং কোন্দল না থাকলে ফুলপুর-তারাকান্দা হতো বিএনপির ঘাঁটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি হন সাবেক এমপি মরহুম শামছুল হকের ছেলে শরীফ আহমেদ। ভোটবিহীন নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রবীণ কিছু নেতাকর্মীর সাথে তার স¤পর্কের অবনতি ঘটে। দুর্দিনে হালধরা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীরা ছোট ছোট দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে সাবেক এমপি হায়াতোর রহমান খান বেলাল, শাহ কুতুব চৌধুরী, এড. ফজলুল হক, ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, ময়মনসিংহ (উ.) জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তারাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, ময়মনসিংহ (উ:) জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক বর্তমান ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার আকন্দসহ কয়েকজন নেতার দলীয় কার্যক্রম বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হতাশায় ডুবিয়ে রেখেছে। নেতায় নেতায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে কর্মী-সমর্থকরা। মোতাহার হোসেন তালুকদার ও আবুল বাসার আকন্দ আ’লীগবিরোধী আন্দোলনে বিস্ফোরক মামলার আসামী হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে মামলা, হামলা থেকে রক্ষা পেতেই অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে নেতা-কর্মীরা জানান।
বিভিন্ন সূত্র ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, ময়মনসিংহ-২ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বর্তমান এমপি ফুলপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক শরীফ আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি হায়াতোর রহমান খান বেলাল, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ, তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহŸায়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, ফুলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক শাহ কুতুব চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম ফেরদৌস জিলু।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, ময়মনসিংহ (উ.) জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা এড. আবুল বাসার আকন্দ, ময়মনসিংহ (উ.) জেলা বিএনপির যুগ্ম
আহবায়ক তারাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এড. সৈয়দ এনায়েত উর রহমান ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জেলা ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক মোঃ সুজাউদ্দৌলা সুজা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সম্ভাব্য এসব প্রার্থী তৃণমূলে গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, পাঁচবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও একবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জননেতা মরহুম এম. শামছুল হকের জ্যেষ্ঠ পুত্র শরীফ আহমেদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে ফুলপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহŸায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উঠতি বয়সের তরুণ যুবক আর সদ্য ভোটার হওয়া তারুণ্যের ঝলকে তিনি উদ্ভাসিত। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে এবারো মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলীয় বিশৃঙ্খলা নিরসন করে সুষ্ঠু নির্বাচনে আবারো এমপি হবেন বলে তিনি আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী সুপরিচিত নেতা হিসেবে ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন হায়াতোর রহমান খান বেলাল। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে যান। ইদানীং নির্বাচনী আলোচনায় নৌকা মার্কায় মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন পেলে সুষ্ঠু নির্বাচনে তিনি আবারো এমপি হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা বর্তমান তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এড. ফজলুল হক ইতঃপূর্বে দুইবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। ১৯৯০ সলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস মার্কায় প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে পরাজিত হওয়ার পর তাকে আর কোনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। নৌকার দুর্দিনের কান্ডারি এবার গত রমজানে দলীয় ইফতার মাহফিল করতে গিয়ে দলীয় গ্রুপিংয়ে আক্রান্তহন। তিনিও আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে মাঠে পোস্টার, হ্যান্ডবিল ও লিফলেট ছড়িয়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছিলেন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক শাহ কুতুব চৌধুরী। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে হায়াতোর রহমান খান বেলাল মনোনয়ন পাওয়ায় তিনি সন্তুষ্টচিত্তে হায়াতোর রহমান খানের সহযোগী হয়ে নির্বাচনী কর্মকান্ড চালান। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য জোর লবিং চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি গণসংযোগ চালিয়ে জনমত গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি এমপি হবেন বলে আশাবাদী।
এলাকার উচ্চ শিক্ষিত ও সদালাপী হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রথম দিকে খুবই মজবুত অবস্থানে থাকলেও শেষ পর্যন্তমনোনয়ন বঞ্চিত হন। তিনি এবার মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন ধরে ফুলপুর ও তারাকান্দার প্রত্যন্তপলীতে নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। তিনি ২০টি ইউনিয়নের প্রতিটি হাট-বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে নিয়ে নৌকার পক্ষে জনমত গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছেন।
ফুলপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে ফুলপুরে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত ছিল অত্যন্তশক্তিশালী। আশরাফ উদ্দিন সরকারের আকস্মিক মৃত্যুতে জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব থেকে ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগদান করে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ শহীদ সারোয়ার। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাঁচবার নির্বাচিত এমপি ও একবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে জনপ্রিয় নেতা শামছুল হককে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হায়াতোর রহমানের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তিনি। এরপর স্থানীয় বিএনপি ও তার সাথে যোগ দেয়া জাতীয় পার্টির কর্মীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব দেখা দেয়ায় কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। আগামী নির্বাচনে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে দৃঢ়ভাবে আত্মবিশ্বাসী।তৃণমূল পর্যায়ে জনস¤পৃক্ত এবং দলীয় মনোনয়নে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন ময়মনসিংহ (উ:) জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক মুক্তিযোদ্ধা এড. আবুল বাসার আকন্দ। এ নির্বাচনে বিজয়ী হলেও সংসদ ভেঙে দেয়ার কারণে বেশি দিন টিকতে পারেননি তিনি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী হিসেবে ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এড. আবুল বাসার আকন্দ। তিনিও আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান ময়মনসিংহ (উ:) জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক ও তারাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে পরিচিত থাকলেও ক্ষমতাসীনদের সাথে বৈরিতা আর দলীয় অনৈক্যের কারণে সুবিধা করে উঠতে পারছেন না। ইতঃপূর্বে চারবার প্রার্থী হয়েও জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তিনি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তেতিনি বার বার মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও কখনো বিদ্রোহী অবস্থান নেননি। এবারো মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক মোঃ সুজাউদ্দৌলা সুজা দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় গণসংযোগসহ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এবার বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দিকে চেয়ে দলীয় সিদ্ধান্তমেনে নেয়ার মানসিকতা রয়েছে বলে জানান এই নেতা। এক সময় ফুলপুর-তারাকান্দা নেতৃত্ব সঙ্কটের চরম দুর্দিনে যিনি বিএনপির হাল ধরেছিলেন সেই নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল এড. সৈয়দ এনায়েত উর রহমান এবার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। ফুলপুর পৌরসভার গত নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে হেরে যাওয়া ঢাকা শহরের বিশিষ্ট
ব্যবসায়ী এম এইচ ইউসুফ নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। উদীয়মান ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান-অনুদান দিয়ে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন