মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আ’লীগের ঘাঁটিতে আঘাত হানতে চায় বিএনপি আগাম প্রচারণায় সরগরম রাজনৈতিক মাঠ

দিনাজপুর-৫ : ফুলবাড়ী-পার্বতীপুরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

মোঃ আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর জেলার ৬টি আসনের মধ্যে দিনাজপুর সদর অর্থাৎ দিনাজপুর-৩ আসনের পরেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসনটিই দিনাজপুর-৫। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনের রাজনৈতিক মাঠ অনেক আগে থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারকদের বক্তব্যে আগামীতে একটি প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বার্তায় বড় দু’দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের মাঝে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। দীর্ঘদিন ভোটের আমেজ বঞ্চিত সাধারণ ভোটারদের মাঝেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যেই ঈদকে ঘিরে রাজনীতিবিদদের ভোটের রাজনীতি ছিল চোখে পড়ার মতো, ঠিক একইভাবে দূর্গাপূজাতেও বড় দু’দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন পূজা মন্ডপে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও দলীয় মনোনয়ন পাবার সমূহ সম্ভাবনার জানান দিয়েছেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরও বছরখানেক বাকি, তারপরেও নির্বাচনী এলাকা দিনাজপুর-৫ আসনের বড় দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডসহ দলীয় মনোনয়ন পেতে তৃণমূল নেতাদের কাছে সম্ভাবনায় জানান দিচ্ছেন। ঈদ ও পূজোর শুভেচ্ছা জানিয়ে ঝুলিয়েছেন নানান রংয়ের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন। সেসব এখনও শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন স্থানে সামাজিক কর্মকান্ড ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নেতা-কর্মীদের সাথে সর্বদায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও খোঁজখবর রাখছেন। মোট কথা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে, বাড়ছে মাঠ দখলের কৌশল।
ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৫ আসনটিতে ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে সময়ের বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মনসুর আলী সরকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাড. খতিবুর রহমানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এরপরই ৬ বার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এ্যাড মোস্তাফিজার রহমান ফিজার এমপি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের বির্তকিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর দ্বায়িত্বে থাকা এই প্রবীণ নেতা প্রায় প্রত্যেকটি নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্ধিতা ছাড়াই দলীয় মনোনয়ন পান। তবে মোস্তাফিজার রহমান ফিজার ছাড়াও এবার এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া জাকির, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ফুলবাড়ী পৌর আওয়ামীলীগের আহŸয়াক সফেদ আশফাক তুহিন, এস এইচ সাজ্জাদ,মাহামুদুন নবী চৌধুরী ও পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ সৈয়দুল আলম শান্তুু। তবে সুবিধা বঞ্চিত তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে মাঠের প্রচারণা জমিয়ে রেখেছেন তরুন ও পরিশ্রমী নেতা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া জাকির। তিনি ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর নির্বাচনী এলাকার সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের সাথে গণ-সংযোগ পথসভাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত ভাবে সক্রিয় থেকে তরুণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
অপরদিকে মামলা, হামলার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও মাঠের রাজনীতি থেকে বিরত থেকেও সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপির একক প্রার্থী সাবেক সাংসদ শিল্পপতি আলহাজ্ব এজেডএম রেজওয়ানুল হক। যদিও এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে ৭ নং সেক্টর মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মনসুর আলী সরকার ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফুলবাড়ী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম মতিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। এদিকে বিএপির আসন পুনরুদ্ধার ও আওয়ামী লীগের আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে কে হচ্ছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় দু,দলের প্রার্থী তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনায় মুখরিত রাজনৈতিক মাঠ। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এই আসনটি থেকে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলহাজ্ব মনসুর আলী সরকার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তৎকালীন সরকারের দিনাজপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারী (ডিডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দিনাজপুর জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। কিন্ত ১৯৮৯ সালের ৫ নভেম্বর তিনি এরশাদ সরকারের জাতীয় পার্টির মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিয়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হবার পর এই আসনটিতে বিএনপি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে। তবে বর্তমান জেলা বিএপির আহবায়ক এজেডএম রেজওয়ানুল হক ১৯৯৫ সালে বিএনপিতে যোগদানের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীরা নতুন করে দল গোছানো শুরু করেন। এরপর ২০০৬ সালে আলহাজ্ব মনসুর আলী সরকার পুনরায় বিএনপিতে ফিরে এলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলহাজ্ব এজেডএম রেজওয়ানুল হক পরাজিত হয়ে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দুঃসময়ে বিএনপির হাল ধরা জেলা বিএনপির এই সফল আহŸায়ক দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে অংশ নিয়ে তার দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজেডএম রেজওয়ানুল হক ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসাবে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে পরাজিত হন। তবে ভোটের হিসেব বলছে প্রতিবারেই তার ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে । এ জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পেলে তিনিই নির্বাচিত হতে পারেন এমনটির মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এদিকে ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম মতি দলের মনোনয়ন পেতে দলের তৃণমূল ও অংগ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তিনিও ছাত্রদলের কর্মী হিসাবে রাজনীতি শুরু করে দীঘ পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এবং বর্তমানে জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়ীত্ব পালন করছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের দখলে থাকা এই আসনটি তিনি বিএনপিতে ফিরে আনতে পারবেন বলে আশাবাদী।
উল্লেখ্য দিনাজপুর-৫ আসনে ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৮৮সালে এরশাদ শাসনামলে অনুষ্ঠিত (দলবিহীন) চতুর্থ সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপির শাসনামলে ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত (বিতর্কিত) ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনসহ এই ৩টি নির্বাচন ব্যতীত এ আসনে প্রতিবারই আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করে আসছেন । স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭বার জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ্যাড: সর্দার মোশাররফ হোসেন (আওয়ামী লীগ), ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে আলহাজ্ব মোঃ মনসুর আলী সরকার (বিএনপি), ১৯৮৬ সালে এ্যাড: মোস্তফিজার রহমান ফিজার (আওয়ামী লীগ), ১৯৮৮ সালে এমএ শোয়েব (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে এডভোকেট মোস্তাফিজার রহমান ফিজার (আওয়ামী লীগ), ১৯৯৬ সালের ১৫ফেব্রুয়ারী (বিতর্কিত) নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এজেডএম রেজওয়ানুল হক (বিএনপি), ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত (তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে) সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এডভোকেট মোস্তাফিজার রহমান ফিজার (আওয়ামী লীগ), ২০০১ সালের অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান ফিজার (আওয়ামী লীগ), ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান ফিজার (আওয়ামী লীগ) এবং ২০১৪ সালের বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান ফিজার (আওয়ামী লীগ) জয়লাভ করে, ৬ষ্ঠ বারের মত এমপি নির্বাচিত হন এই আসন থেকে। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন