সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সক্রিয়

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পুরস্কার ঘোষিত পেশাদার শীর্ষ সন্ত্রাসীর অনেকেই ধরা ছোয়ার বাইরে থেকেও সক্রিয় রয়েছে আন্ডারওয়াল্ডে। এক একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর রয়েছে পৃথক বাহিনী। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশে রয়েছেন ঢাকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অনেকেই। দেশে না থেকেও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। তবে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ছে না। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে কেউ চাঁদাবাজিসহ কোন অপরাধ করলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় অভিযোগ বা অবহিত করার জন্যও বলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু শীর্ষ সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়ায় আতংক রয়েছে ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষের মধ্যে।
পুলিশের সাবেক আইজি ও সচিব নূর মোহাম্মদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়ায় সাধারন মানুষের মধ্যে আতংকের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। যেহেতু এরা দেশের বাইরে থেকে টেলিফোনে নানা অপরাধ করছে, তাই এদের গ্রেফতার করা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জন সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সাধারন মানুষকেও তথ্য দিয়ে পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা টেলিফোনে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে ফোন নম্বরের মাধ্যমে হুমকি দেয়া হয় তা শনাক্ত করে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে। সাধারন মানুষ যাতে আতংকিত না হন সে জন্য পুলিশকে আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলে সাবেক পুলিশ প্রধান নূর মোহাম্মদ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিপিএম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশে আসলেই যাতে ধরা পড়ে সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। বিদেশ থেকে কেউ চাঁদা দাবি বা অন্যভাবে হুমকি দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ থানা পুলিশকে আবহিত করলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। তবে এদের বিষয়ে আতংকিত না হয়ে পুলিশকে সাথে সাথে অবহিত করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিপিএম বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগিরা বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছে। শুধু শীর্ষ সন্ত্রাসী বা তাদের সহযোগি নয়, সকল অপরাধীদের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একজন ব্যবসায়ী জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হুমকি গত এক বছর তিনি ২বার পেয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথমে দেশের বাইরের নাম্বার থেকে ফোন করে বলা হয় কেমন আছেন। তার পর পরিচয় দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। ওই ফোনে বলা হয় টাকা না দিলে আমার ছেলেরা চলবে কেমন করে। ব্যবসা ভাল করছেন। আমার ছেলেরা যোগাযোগ করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভয়ে আমি কারো কাছে যাইনি। পরে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে তাদের ধরিয়ে দিতে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন। এদের ১২ জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২৬ জুন পিচ্চি হান্নান নিহত হন ক্রসফায়ারে। আর আলাউদ্দিন নিহত হয়েছেন গণপিটুনিতে। লিয়াকতের কোনো হদিস নেই। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে তাকে। তার পর থেকেই তার আর খোঁজখবর নেই। কালা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন না বেঁচে আছেন সে ব্যাপারে কোনো হদিস দিতে পারছে না কেউ। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে পুরস্কার ঘোষণার পর দেশের ভেতর গ্রেফতার হয়েছেন পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল, খোরশেদ আলম ওরফে রাশু, কামাল পাশা, মশিউর কচি, আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস। কারাগারেই রয়েছেন তারা। বহু মামলার মধ্যে কোনো কোনো মামলায় জামিন হয়েছে, আবার কোনো কোনো মামলায় জামিন হয়নি এখনো। এদের মধ্যে জামিনে বের হয়ে গেছেন প্রকাশ নামের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী। জামিনে বের হয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন সুব্রত বাইন। ভারত থেকে পালিয়ে নেপালে যাওয়ার সময় নেপাল তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আমিন রসুল সাগর অবস্থান করছেন আমেরিকায়। কানাডায় অবস্থান করছেন ইমাম হোসেন। প্রকাশ কুমার বিশ্বাস অবস্থান করছেন কলকাতায়। মোল্লা মাসুদ ও শামিম আহমেদ অবস্থান করছেন কলকাতায়। হারিস আহমেদ অবস্থান করছেন পাকিস্তানে। তানভিরুল ইসলাম জয় অবস্থান করছেন কলকাতায়। জব্বার, মুন্না, জাফর আহমেদ কোথায় অবস্থান করছেন সে ব্যাপারে কারো কাছে কোনো তথ্য নেই। বিদেশে পলাতক থাকলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন ওই সন্ত্রাসীরাই। প্রতিনিয়ত ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফোনে বাংলাদেশের বিভিন্নজনকে ফোন করে চাঁদা দাবি করে আসছেন তারা। আটটি হত্যাসহ ১৬টি মামলা মাথায় নিয়ে ভারতে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের নামে মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি হচ্ছে। গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, শাহাদতের বর্তমান অবস্থান ভারতের মুর্শিদাবাদে। ভারতের আলীপুর জেলে বন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের নামে রাজধানীর ধানমন্ডিও মোহাম্মদপুরে চাঁদাবাজি হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বসবাস করছেন। প্যারিস থেকে প্রকাশ মাঝে মধ্যে কলকাতা ঘুরে যান। তবে তিনি এখন অব্দি বাংলাদেশে প্রবেশ করেননি। তার ভাই আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। এরপর যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে কলকাতায় পাড়ি জমান। সেখান থেকে বিকাশ ভাই প্রকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্যারিসে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগিদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলে যে কোন সময় আইন-শৃংখলার অবনতি হওয়ার আশংকা করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন