মুন্্শী আবদুল মান্নান
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনা একই সঙ্গে বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক। বিস্ময়কর এ কারণে যে, আমাদের জানা মতে, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এভাবে অর্থ বেহাত হওয়ার খবর এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এটা কেবল খারাপ নজিরই সৃষ্টি করেনি, সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ সংরক্ষণ ব্যবস্থা যে কতটা নাজুক ও অপর্যাপ্ত তাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই অমনোযোগিতা, অক্ষমতা ও দুর্বলতাকে দুঃখজনক বললেও কম বলা হয়। আর উদ্বেগজনক এ কারণে যে, এটা অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে। আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠা কিংবা দেশের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করা কীভাবে সম্ভব হবে, আমাদের জানা নেই।
এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা লোপাটের রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনাটি সামনে এসেছে। এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে টাকা লোপাটের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আমানতকারীরা তাদের আমানতের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ও দুর্ভাবনায় পড়েছে। এখন খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থই লোপাট হয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তার সংরক্ষিত অর্থের নিরাপত্তা বিধান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিচলন সঙ্গত কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থাৎ ৮০৮ কোটি টাকার মতো লোপাট হয়েছে। দেখা গেছে, এই লোপাটের খবর যথাসময়ে জানানো হয়নি। ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে এক মাসেরও বেশি সময় পর এ ঘটনা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভবপর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যথাসময়ে বিষয়টি সরকারকে অবহিত করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর (সদ্য পদত্যাগকারী) আতিউর রহমান জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তবে কবে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল টাকা লোপাটের বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারকে অবহিত করা। কেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটা জানাননি তা একটি বড় প্রশ্ন। বিষয়টি গোপন করার বা ধামাচাপা দেয়ার কোনো উদ্দেশ্য এখানে সক্রিয় ছিল কিনা তা খুঁজে দেখা যেতে পারে। সবচেয়ে লক্ষযোগ্য বিষয় হলো, ঘটনাটি গণমাধ্যমে চলে আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় তা প্রশ্নসাপেক্ষ ও অগ্রহণযোগ্য।
অর্থ লোপাটের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ জন্য নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ওপরই দোষ চাপানো হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নয়, অপর প্রান্ত থেকেই ঘটনাটি ঘটেছে। অর্থমন্ত্রী স্বয়ং একই ধারণা ব্যক্ত করেন এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককেই দায়ী করেন। শুধু তাই নয়, ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে হয় যে, সেখান থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেনি। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশ প্রান্ত থেকেই এটি ঘটেছে। বলা হয়, তারা অর্থ ছাড়ের আগে প্রাপ্ত অ্যাডভাইসগুলোর বিষয়ে ই-মেইল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা কোনো জবাব পায়নি।
অতঃপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অভ্যন্তরীণ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, তৃতীয় কোনো পক্ষ এটা ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে ম্যালওয়ার বসিয়ে কাজটি করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আচরণ ও বক্তব্য কোনোটাই যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়। অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার একটা প্রবণতা এখানে রয়েছে। প্রথমেই বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কিংবা কেউ জানার আগে সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে ব্যর্থ হয়ে দায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখানেও সুবিধা করতে না পেরে তৃতীয় পক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কারো সহায়তা বা যোগসাজশ ছাড়া এটা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে এ ধরনের ম্যালওয়ার বসানো বা তাকে কার্যকর করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আরো একটি দাবির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় চলে যাওয়া কিছু অর্থ ইতোমধ্যে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আসলে যা ঘটছে তা হলো, বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার একটি অনিবন্ধিত এনজিওর নামে পাঠানো অর্থ জার্মানির ডয়েচ ব্যাংক ছাড় করেনি। অর্থাৎ অর্থটা আসলে শ্রীলঙ্কায় যায়ইনি। এই বানান ভুলের কারণে অবশ্য দুই কোটি ডলারের মতো অর্থ লোপাট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। এটা ফেরত আনার মতো কোনো ব্যাপার ছিল না এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এজন্য কোনো কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না।
ওদিকে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে মাত্র ৬৮ হাজার ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ডলারের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এ অর্থ ইতোমধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে। ফিলিপাইনের দুটি ব্যাংক হিসাব থেকে এই অর্থ নিয়ে যাওয়া হয় যারা মুদ্রা বিনিময়ের কাজ করে তাদের কাছে। সেখানে প্রাপ্ত অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় কনভার্ট করা হয় এবং ক্যাসিনোতে বিনিয়োগ করা হয়। এভাবে লোপাট হওয়া অর্থ জমার টাকা সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপাইনের পত্রিকাগুলোর দাবি অনুযায়ী, ক্যাসিনো থেকে অর্থ তুলে হংকংয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পুরো কাজটি করা হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে।
অতএব, এ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা বলার উপায় নেই। ফিলিপাইন অবশ্য এ ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। তদন্ত চালিয়ে জালিয়াত চক্রের কাউকে কাউকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। সে দেশের রিজার্ভ কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোষ দেগুইতোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। কিন্তু যে হিসাবে অর্থ গেছে, তা নাকি ভুল হিসাব। ফলে কার কাছে অর্থ গেছে তা ঠিকঠাক জানা যাচ্ছে না। যদি জানা যায় তাহলে হয়তো খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভবপর হতে পারে। সেটা এখনো দিল্লি দূর অস্তের মতো ব্যাপার। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, খোয়া যাওয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফিলিপাইনের এ সংক্রান্ত তদন্তকারী সিনেট কমিটি ব্লু রিবনের সদস্য সোর্গিও ওসমেনা শুনানিতে এ কথা বলেছেন। কমিটির সভাপতি তেয়ো-ফিস্তো গুংগোনা বলেছেন, অর্থ উদ্ধার করা কঠিন হবে। এই অর্থ এর মধ্যেই ব্ল্যাকহোলে চলে গেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, লোপাট অর্থ খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটি ক্যাসিনোর সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে। বলাবাহুল্য, জালিয়াতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের যথাযথভাবে শনাক্ত করার ওপরই অর্থ উদ্ধারের বিষয়টি নির্ভরশীল। তাদের চিহ্নিত ও শনাক্ত করা না গেলে উদ্ধার সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
অর্থ উদ্ধার ও ফেরত আনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, অর্থ লোপাট হলো কিভাবে এবং কারা এটা করলো সেটা খুঁজে বের করা। এর সঙ্গে দেশী-বিদেশী কারা সংশ্লিষ্ট সেটা চিহ্নিত করা। এর মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর তরফেও তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য এফবিআইয়ের একটি দল ঢাকা এসেছে। আশা করা যায়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে অর্থ লোপাটের হোতাদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
ইতোমধ্যেই এটা প্রতিভাত হয়েছে, এই অর্থ লোপাটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারে। অর্থমন্ত্রী পত্রিকান্তরে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, অর্থ চুরির ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অবশ্যই জড়িত। তাদের যোগসাজশ ছাড়া এ কা- ঘটতে পারতো না। এর মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান তার পদ থেকে সরে গেছেন। দুই ডেপুটি গভর্নরসহ সাতজনকে অপসারণ করা হয়েছে। রিজার্ভ শাখায় ১২ কর্মকর্তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এই কর্মকর্তারা গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানা গেছে। পদত্যাগ ও অপসারণের মাধ্যমে যে পরিবর্তন এসেছে তা ঘটনাপ্রবাহের একটি বড় দিক। এর মাধ্যমে সরকার তার সক্রিয়তা প্রদর্শন ও জনগণকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছে বলে মনে হতে পারে। তবে অনেকে মনে করেন, তাদের স্ব স্ব পদে রেখে দেয়া হলে তদন্তে সুবিধা হতো। এই অনেকের মধ্যে একজন হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, তদন্তের সুবিধার্থে এদের স্বপদে বহাল থাকা দরকার ছিল। এখন অনেকে বলতে পারেন, দায় ঢাকতে এদের সরানো হয়েছে। আবার এটা সরকারের চমকও হতে পারে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে, জনগণকে এটি দেখানো। এদিকে আসল তদন্ত তো শুরুই হয়নি। সরকার লক্ষ্যের বাইরে থেকে কাজ করলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না।’
লক্ষ্যের বাইরে গিয়ে কাজ করলে যে কোনো ফল পাওয়া যায় না, তাঁর নজিরের কোনো অভাব নেই। শেয়ারবাজারের অর্থ লুটপাটের কিছু হয়নি। লাখ লাখ মানুষ পথে বসেছে, প্রতিকার পায়নি, লুণ্ঠিত অর্থ ফেরৎ পায়নি। ডেসটিনি, যুবক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হলমার্ক প্রভৃতি মানুষ ঠকিয়েছে, ব্যাংকের অর্থ লোপাট করেছে
। তারও কিছু হয়নি। এই দূরাচার ও লুণ্ঠন সম্পর্কে কখনো কখনো সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এমন মন্তব্য করেছেন যা দুঃখজনক বলে নিন্দিত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের পর যখন বলা হয় ‘এটা কিছুই না’ তখন দুষ্কৃতকারী-লুণ্ঠনকারীরা আস্কারা পায়। যদি সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারিগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হতো, বিচার হতো, দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হতো তাহলে হয়তো লুটেরা ও জালিয়াতিচক্র বাংলাদেশ ব্যাংকে হাত দিতে সাহস পেতো না। একথাও এখানে স্মরণ করা দরকার যে, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চার লক্ষাধিক কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে। নানা পথে নানাভাবে এই বিশাল অংকের অর্থ পাচার হয়েছে। অথচ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কার্যত দেশ সম্পদ ও অর্থ লুণ্ঠন, চুরি ও পাচারের অভয় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ব্যাংকিং খাত যে মারাত্মক হুমকিতে এবং এই খাতে ‘সর্ষের ভূতের’ অবস্থান যে অত্যন্ত শক্তিশালী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লোপাটের ঘটনা তার একটি বড় প্রমাণ। জাতীয় স্বার্থেই ব্যাংকিং খাতের এই হুমকি দূর করতে ও ভূত তাড়াতে হবে। এজন্য তদন্ত হতে হবে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য। ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থায় যে ফাটল ধরেছে, বহির্বিশ্বে আমাদের অক্ষমতা, দুর্বলতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতিপরায়ণতার যে দুর্নাম ছড়িয়েছে, তা দূর করতে হলে অতীতের সব আর্থিক কেলেংকারীরও সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করতে হবে। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যাংক অর্থের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। সবাই আশা করে, ব্যাংকে গচ্ছিত ও রক্ষিত অর্থ সর্বাবস্থায় নিরাপদ থাকবে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই নিরাপদ স্থানটিই বড় অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ব্যাংকিং খাত ডিজিটালাইজ করার পর চুরি ও লুটপাট বেড়ে গেছে। এটা সিস্টেমের দোষ নয়। দোষ যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার। এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ লোপাট এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ বেহাত হওয়ার ঘটনা থেকে বুঝা যায়। সিস্টেমের মধ্যে কোথাও না কোথাও হয়তো দুর্বলতা ও ফাঁক রয়েছে কিংবা কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে। এই দুর্বলতা, ফাঁক ও ঘাটতি দূর করার বিকল্প নেই। আমরা সঙ্গতকারণেই আশা করবো, অর্থের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা হবে। জালিয়াত ও দুষ্কৃতকারীদের উপযুক্ত শাস্তি ও অর্থের নিরাপত্তা নিñিদ্র করা হলে জাল-জালিয়াতি ও অর্থ লোপাটের ঘটনা কমে আসবে।
একটি কথা এখন বিভিন্ন মহল থেকেই বলা হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটলেও উপযুক্ত ও দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে। এ কারণে বিদেশী বিশেষজ্ঞ হায়ার করতে হচ্ছে। এটা কোনো ভালো কথা নয়। এ জন্য উপযুক্ত লোকবল তৈরি করতে এবং বিদেশ নির্ভরতা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। এ অভিযোগও আছে, দেশে যেসব আইটি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা, পারঙ্গমতা বিদেশী আইটি বিশেষজ্ঞদের চেয়ে কোনো অংশেই ন্যূন নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষ বেশী; অথচ তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। এদিকে নজর না দিয়ে বিদেশী বিশেষজ্ঞ ডেকে আনা হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে তাদের কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতা পরিহার করতে হবে। দেশী বিশেষজ্ঞদের কাজে নিয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে হবে। যন্ত্রপাতি কিনতে যদি খরচ করা যায়, তবে বিশেষজ্ঞ তৈরিতে খরচ করা যাবে না কেন?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন