শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

খুলনাঞ্চলে নির্বাচনী সহিংসতা চরমে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না সরকারবিরোধী প্রার্থীরা

প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি
বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা চরম তোপের মুখে রেখেছেন বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের। প্রতিদিন থ্রেটিং, হামলা, মামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা লেগেই আছে। আবার ক্ষমতাসীনদের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। বিএনপির প্রার্থীরা অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই সংঘর্ষ-সহিংসতা বেড়ে চলেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোথাও কোথাও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে আবার কোথাও রয়েছে নিষ্ক্রিয়। আর আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী এখন ক্ষমতাসীন হাইকমান্ডের গলার কাঁটা। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী অবশ্য স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা এমপি বা মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় প্রশাসন তাদের বাইপাস করতে পারছে না। যে কারণে গঠনতন্ত্রের কড়াকড়ি থাকলেও সাংগঠনিকভাবে কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারছে না এসব প্রার্থীকে। বিএনপিতেও প্রায় দেড় ডজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সূত্রমতে, খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তার লোকজন হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বিজয় সরদার এবং তার লোকজনের ওপর। এ ছাড়া কয়রা সদর ইউনিয়ন ও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে প্রায় প্রতিদিন হামলা, মামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এতে তৃণমূলের নেতা, সাধারণ লোকজন, এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মতিউর রহমানসহ গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ২৫ জন আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। বাগেরহাটের শরণখোলায় দফায় দফায় হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন। দুজন মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। একই জেলার ফকিরহাটের ৫নং বাহিরদিয়া মানসা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ রেজাউল করিম ফকিরের নির্বাচনী ক্যাম্পের ভিতর ঝুলানো নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ক্যাম্প চত্বরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মংলার চিলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী আকবর হোসেনের লোকজনের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাসেলের ৫জন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতা সৃষ্টি হয়। এ সময় কমপক্ষে ১৬-১৭ জন আহত হয় এবং ১২-১৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার দুপুরে। একই জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিএনপির সমর্থকদের বাড়িতে গত বুধবারও কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেবহাটায় বিএনপির প্রার্থীদের ও জামায়াতের প্রার্থীদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। থ্রেটিং আতঙ্কিত বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নির্বাচন সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে জেলার সব উপজেলাধীন ইউনিয়নসমূহে সরকারি দলের সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের অব্যাহতভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম এখনো খুলনা জেলায় শুরু না হওয়ায় নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রদত্ত বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় কর্মিসভার নামে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন, যা নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদান, হামলা, হুমকি, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, প্রচারণায় নিযুক্ত কর্মীদের মারপিট, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি প্রদান সংক্রান্ত অন্তত অর্ধশতাধিক অভিযোগ ও আপত্তি লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় থানায় দাখিল করা হলেও একটি ঘটনায়ও কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোমধ্যে বটিয়াঘাটার আমিরপুর ইউপির জনপ্রিয় চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম জনির ওপর শাসক দলের ক্যাডাররা হামলা চালিয়েছে। হামলা হয়েছে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমির এজাজ খানের ওপর। দিঘলিয়ায় বিএনপির প্রার্থী রকিব মল্লিকের ওপর হামলা, ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডেই বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া, ডুমুরিয়ায় বিএনপির নির্বাচনী কর্মীদের ওপর হামলা, পাইকগাছায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জোয়াদুর রসুল বাবুর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, তেরখাদার সাচিয়াদহ, মধুপুর, রূপসা উপজেলার নৈহাটি, টিএস বাহিরদিয়ায় ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা ও সহিংসতায় কোনো প্রতিকার পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত দলকানা পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে নিষ্ক্রিয় করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভালো কর্মকর্তাদের ওপর নির্বাচনী দায়িত্ব অর্পণ, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগে নির্দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ব্যক্তিদের বাছাই করার জন্য জোর দাবি জানান। একই সঙ্গে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিজিবি ও স্পেশাল পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। বিবৃতিদাতারা হলেনÑ নির্বাচন সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনাসহ সব উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিববৃন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন