মোঃ মেরাজ উদ্দিন, শেরপুর থেকে
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে নালিতাবাড়ীর ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত ৫৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন। এর মধ্যে শুধু ৯নং মরিচপুরান ইউনিয়নে এ দুটি দল থেকে কোনো বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। বাকি ১১টি ইউনিয়নেই রয়েছে এক এবং একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে এ দল দুটি। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে নানা শংকার সৃষ্টি হয়েছে। ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বন্দনা চাম্বুগং এবং বিদ্রোহী হয়েছেন মোঃ আজাদ মিয়া, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী উমর ফারুক এবং বিদ্রোহী হয়েছেন আবু বকর সিদ্দিক। ২নং নন্নী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ বিল্লাল হোসেন চৌধুরী এবং বিদ্রোহী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও মোঃ আব্দুল হাই আজাদ, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ মোঃ আব্দুর রশিদ সরকার এবং বিদ্রোহী আবুল কাশেম মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান রিটন। এখানে জাতীয় পার্টি মনোনীত একমাত্র প্রার্থী রয়েছেন মোঃ শামশাদ আলম সরকার। ৩নং রাজনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফারুক আহমেদ বকুল এবং বিদ্রোহী তানযিল আহমদ, শাহীনুর ইসলাম, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ আতাউর রহমান আতা এবং বিদ্রোহী মোঃ হাতেম আলী। ৪নং নয়াবিলে আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থী মোঃ নূর ইসলাম এবং বিএনপি মনোনীত মোঃ ইউনুছ আলী দেওয়ান ও বিদ্রোহী মোঃ মিজানুর রহমান। ৫নং রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ আমান উল্লাহ বাদশা এবং বিদ্রোহী মোঃ খোরশেদ আলম খোকা, বিএনপি মনোনীত একক প্রার্থী ফজলুল হক দেলোয়ার। ৬নং কাকরকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত শহীদ উল্লাহ তালুকদার মুকুল এবং বিদ্রোহী মোঃ নাজিম উদ্দিন, মোঃ নিয়ামুল কাউসার সোহাগ, মোঃ আবুল কাশেম, বিএনপি মনোনীত একক প্রার্থী মোঃ আনিসুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত মোঃ জিয়াউর রহমান তোতা। ৭নং নালিতাবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থী মোঃ আসাদুজ্জামান (আসাদ মাস্টার), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ আশরাফ আলী এবং বিদ্রোহী মোঃ মিজানুর রহমান মিজান ও মোঃ খাদেমুল ইসলাম। ৮নং রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান এবং আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী মঞ্জুর আল মামুন, বিএনপির একক প্রার্থী মোঃ আব্দুর রহমান তারা। ৯নং মরিচপুরান ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থী খন্দকার মোঃ শফিকুল ইসলাম শফিক ও বিএনপি মনোনীত একক প্রার্থী মোঃ আইয়ুব আলী। ১০নং যোগানিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ হাবিবুর রহমান হবি এবং বিদ্রোহী মোঃ তাকিজুল ইসলাম তারা, মোঃ জামাল উদ্দিন, মোঃ আব্দুল জলিল, বিএনপি মনোনীত একক প্রার্থী মোঃ ছামিদুল ইসলাম মুন্সী। ১১নং বাঘবেড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ আব্দুস সবুর এবং বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ হাসানুজ্জামান রিয়াদ, মোঃ গোলাম মোস্তফা, বিএনপির একক প্রার্থী মোঃ আমিনুল ইসলাম জিন্নাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জহুরুল হক বদি। ১২নং কলসপাড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ আবুল কাশেম এবং বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ জয়নাল আবেদীন, বিএনপি মনোনীত রেজাউল করিম রিয়াজুল এবং বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান বিএসসি। এ ছাড়াও এ ইউনিয়নে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একমাত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক আওয়ামী যুবলীগ নেতা মোঃ ফকর উদ্দিন নয়ন। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নেতারাই বিদ্রোহ ঠেকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। বিদ্রোহীদের অভিযোগ, জনপ্রিয়তা যাছাই না করে নিজ নিজ গ্রুপ শক্ত করতে ও টাকার বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাই তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে লড়বেন। শেষ চেষ্টা করেও বিদ্রোহ ঠেকাতে পারছে না দল দুটি। এদিকে শেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান রিপন দলের বড় পদে থেকেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তার আপন ভাই আবুল কাশেম মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান রিটনকে বিদ্রোহী প্রার্থী করে তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ মোঃ আব্দুর রশিদ সরকার দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এদিকে আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে নির্বাচন। সেদিকেই তাকিয়ে আছে শেরপুর জেলাবাসী। স্থানীয় প্রশাসন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও বিশ্বাস করতে পারছেন না স্থানীয় জনগণ। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, সরকারি দলের সমর্থকরা বলে বেড়াচ্ছেন তাদের মনোনীত প্রার্থীরা এক ভোট পেলেও নির্বাচিত হবেন। এ নিয়ে প্রার্থী ও ভোটাররা শঙ্কার মধ্যে আছেন। নালিতাবাড়ী উপজেলার নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে এ জেলার বাকি ৪ উপজেলার আরও ৪০টি ইউনিয়নের নির্বাচন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন