শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে মিলছে না চিকিৎসাসেবা

প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা
নদীভাঙন কবলিত উপজেলার একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে দালাল চক্র চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের বিভ্রান্ত করে নানা বিড়ম্বনায় ফেলছে। এতে করে রোগীদের একদিকে যেমন অর্থ অপচয় হচ্ছে অপরদিকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার একমাত্র চিকিৎসাস্থল এ হাসপাতাল। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪ থেকে ৫শ রোগী বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সূত্র মতে, কোনো রোগী এখানে এলে দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে তাদের বড় বড় ডাক্তারের কথা বলে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন রোগীতে কর্তৃপক্ষ স্থানান্তর করলে দালাল চক্রটি ওই রোগীকে বিভিন্ন কথা বলে সরকারী হাসপাতালে না যেতে দিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে মোটা অঙ্কের বিল করিয়ে ৫০ শতাংশ টাকা ক্লিনিক মালিকদের কাছ থেকে বাগিয়ে নেয়। সম্প্রতি সামি নামের এক শিশু খাৎনা পরবর্তী ইনফেকশন নিয়ে হাসপাতালে এলে তাকে জরুরিভাবে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু লিয়াকত নামের এক দালাল প্রথমে তাকে বিশেষ এক ডাক্তারের কাছে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করে। পরে সামির অভিভাবকরা রাজি না হলে বিভিন্নভাবে প্রলভোন দেখিয়ে ফরিদপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা বিল করায়। এক রোগীকে নিয়ে দুই দালালদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত এখানে ঘটেছে। এ চক্রের ব্যাপক তৎপরতায় কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা। তাদের সঙ্গে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারীও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকার পরও ভালো পরীক্ষার অযুহাতে রোগীদের পাঠানো হয় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আর একেকটি পরীক্ষার বিনিময়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে দালালরা পান ৩০% থেকে ৫০% পর্যন্ত কমিশন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতাল প্রশাসনও বর্তমানে এ দালাল চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। দালালদের প্ররোচনায় যেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয় তাতে নি¤œমানের রি-এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি তাদের নেই কোনো দক্ষ টেকনিশিয়ান। অথচ হাসপাতালে রয়েছে দক্ষ টেকনিশিয়ান, উন্নতমানের রি-এজেন্ট। পাশাপাশি খরচও কম। এ ছাড়া যেসব ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরকারীভাবে বিতরণ করা হয় না, তা লিখে দিলে (প্রেসক্রিপশন) দালাল চক্রটি তাদের নিজস্ব দোকানে নিয়ে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সালমা সিদ্দিকা হাসপাতালে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, দাললদের কথায় প্রভাবিত হয়ে সহজ-সরল রোগীরা অতিরিক্ত অর্থ গচ্ছা দিচ্ছেন অথচ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তবে দাললদের খপ্পরে না পড়তে আগত রোগীর স্বজনদের পরামর্শসহ হাসপাতালের দেয়ালে বিভিন্ন জায়গায় দালাল চক্র সম্পের্কে সচেতনতামূলক উপদেশ লিখে দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই চক্রের সাথে জড়িত নাই বলে তিনি দাবি করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন