বন্যায় খেয়েছে ধান, পাট, আখ, মরিচ ও সবজিসহ নানা জাতের ফসল। ক্ষতি হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ির। দুর্যোগে সব হারিয়ে মলিন কৃষকের মুখ। অভাবের যাঁতাকলে কাটছে দুর্বিষহ জীবন। নানা সমস্যা-সঙ্কটে নতুন করে চাষাবাদে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই। তাই চরের বুকে প্রাকৃতিকভাবে গঁজানো কাশবনে দেখছেন বেঁচে থাকার স্বপ্ন। কিন্তু এবার বিধি বাম, যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে চারবাসীর জীবিকার সহায়ক কাশবন। চোখের সামনে কাশবন বিলীন হয়ে যাওয়া দেখে কষ্টে ছটফট করছেন চরবাসী।
সরেজমিন বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে অনাবাদি জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া কাশবনে এমন ভাঙনের চিত্র চোখে পড়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, যমুনা নদীর বিশাল চর। কোথাও ধূসর বালু। কোথাও প্রাকৃতিকভাবে গঁজানো ঝাউগাছ। দুর্বা ঘাসে আবৃত চরের বালুকণা। কোথাও আবার কাশবন। চাষাবাদের অযোগ্য পতিত জমি। এই পতিত জমিতেই রয়েছে অর্থকরী ফসলের সম্ভাবনা। সোনালি ফসলে স্বপ্নের হাতছাতি। কিন্ত নানা সমস্যা-সঙ্কটে কৃষি কাজে আসছে না চরের জমি। তাই অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতেই আয়ের স্বপ্ন দেখেন চরের মানুষ। সম্প্রতি চরের জমি থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কাশবনগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে। এই কাশবন পরিচর্যা করতে হয় না। কাশবন উৎপাদনে কোনো খরচও নেই। প্রকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে কাশবন। এতে দৃষ্টিনন্দন সাদা ফুল ফোটে। শোভা বর্ধন করে বিশাল চরাঞ্চলে। বাতাসে প্রকৃতির সাথে খেলা করে আপন খেয়ালে। কাশবন শুধু মানুষের মনের খোরাকই জোগায় না, জীবিকার সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কাশবন বড় হয়ে ফুল ফুটে ঝরে পড়ে। তখন চরের কৃষকেরা এই কাশবন কেটে বাজারে বিক্রি করে। এক মুঠো (আঁটি) শুকনা কাশ গাছ চার-ছয় টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। অধিকাংশ চরের কৃষক আবার বিশাল চরের পুরো অংশজুড়ে কাটার উপযোগী কাশবন পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। এতে প্রতিটি চর থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত কাশ গাছ বিক্রি করতে পারেন। প্রতিবছর কাশবন বিক্রির টাকা চরের মানুষের মাঝে সমান হারে বণ্টন করা হয়। এদিকে, কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। অব্যাহত পানি কমতে থাকায় নদীতে প্রবল স্রোত বইছে। যমুনার ঢেউ ক‚লে আঘাত হানছে। পানির প্রবল স্রোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙনের ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে চরাঞ্চলে। ভাঙনের ফলে চরের কাশবন নদীতে বিলীন হচ্ছে। যমুনা নদীর নিউ-সারিয়াকান্দি চরের কৃষক সরোয়ার হোসেন, সিদ্দীক হোসেন, কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়ার গোলাম হোসেন, আব্দুর রহিম জানান, কাশবন উৎপাদনে কোনো খরচ হয়। অথচ প্রতিবছর চরের কাশবন থেকে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এ বছর বন্যায় সেই কাশবন ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চরের মানুষ। বন্যায় চরের ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে, কাশবন থেকে অন্তত কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যেত। কিন্তু এবার কৃষকের সে আশা পূরণ হবে না।
কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া চরের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ, বগুড়ার শেরপুরের মাসুদ রানা বলেন, প্রতি বছর চর থেকে কাশবন কিনে নিয়ে সেগুলো শহরের বিভিন্ন এনজিও কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। এই কাশবন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালী সৌখিন সামগ্রী তৈরি করা হয়। শহরে কাশবনের তৈরি বিভিন্ন সৌখিন সামগ্রীর কদর অনেক বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন