শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

আরও ১৭৩০ কোটি টাকা পেলেন এমপিরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একনেকে ১৫ হাজার ২২২ কোটি টাকার ৮ প্রকল্প অনুমোদন
সারা দেশে গ্রামীণ বাজার উন্নয়নে সংসদ সদস্যদেরকে এক হাজার ৭৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিল সরকার। এই টাকা দিয়ে এমপিরা তাদের নিজ নিজ আসনে পছন্দমতো বাজার উন্নয়ন করবেন। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ‘দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সারা দেশে মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ, শ্মশান, ও কবরস্থান উন্নয়নে এমপিদেরকে ৬৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তারও আগে ২০১৫ সালে সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে ছয় হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এমপিরা এসব সুযোগের বাইরে রয়েছেন।
এদিকে গতকালের একনেক সভায় উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১১ সালের অক্টোবরে প্রথম একনেক সভায় নয় হাজার ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি এখনো দৃশম্যান অগ্রগতি হয়নি। ছয় বছরে প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না হলেও এর ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। গতকাল একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় এক হাজার ৮৭২ কোটি টাকা বাড়িয়ে দশ হাজার ৯০২ কোটি টাকা করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। ফ্ল্যাট নির্মাণের স্থবিরতা সম্পর্কে বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১১ সালে প্রকল্পের নকশা সঠিকভাকে করা হয়নি। এছাড়া গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যাংক, স্কুল ও ব্যবস্থাপনা ভবন নির্মাণ, ই ও ঈ বøকের ফ্ল্যাটের আকার পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রকল্পটি গত ছয় বছরে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় ২১৪ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে রাজউকের। বিভিন্ন টাইপের ১৫ হাজার ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ হবে উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে। ১৩১ ভবনে এক হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট হবে ১১ হাজার ৪টি। ১০৫০ বর্গফুটের আয়তনের ফ্ল্যাট হবে চার হাজার ৩২টি। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, ফুটপাত, সেতু কালভার্ট, কমিউনিটি সেন্টার, পানি শোধানাগার, স্কুল, কলেজ, পার্কিং স্থান নির্মাণ করা হবে।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সভায় ১৫ হাজার ২২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে তিন হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। বাকি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নানা ধরনের প্রতিশ্রæতি দিতে হবে এমপিদের। সে জন্য নিজ নিজ আসনের বাজার উন্নয়নের জন্য আলাদাভাবে টাকা পাচ্ছেন এমপিরা। কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের আগে এভাবে এমপিদের জন্য টাকা বরাদ্দ বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক ধারাবাহিক চিত্র। আগের সরকারের সময়েও এমপিদের টাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে জনগণের করের টাকা এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণার বাজেটে খরচ হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, নির্বাচনের আগে আগে এ ধরনের প্রকল্প খরচে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এমপিদের পছন্দমতো প্রতিটি উপজেলা থেকে নির্বাচিত একটি বাজারের উন্নয়ন করা হবে। একটি বাজার উন্নয়নে তিন কোটি টাকা করে খরচ ধরেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, প্রতিটি বাজার হবে চার তলা ফাউন্ডেশনের ওপর দুই তলা। বাজারের জন্য যে নকশা তৈরি করা হয়েছে তাতে দেখানো হয়েছে শবজি বিক্রির জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা রাখা হবে। মাছ বিক্রির জন্য আলাদা জায়গা থাকবে। এছাড়া মাংস বিক্রির জন্য থাকবে আলাদা স্থান। গাড়ি পার্কিং, চা স্টলের জন্য আলাদা জায়গা করা হবে। যেখানে এখন টিনের বাজার আছে, সেগুলো ভবন করা হবে। এমপিরা যেসব বাজার নির্বাচিত করে দিয়েছেন এলজিইডি সেসব বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন করবে। গতকালের একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বাজারে নারীদের জন্য আলাদা একটি স্থান রাখার জন্য। যাতে করে নারীরা বাজারে নির্ধারিত ওই স্থানে গিয়ে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
এদিকে গতকালের একনেক সভায় ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা শিরোনামের আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৩৪ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় গার্বেজ ট্রাক কেনা হবে ৫টি। ক্লিনার ট্রাক কেনা হবে একটি। অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা হবে ২০০টি। এই প্রকল্পের আওতায় স্যানিটারী ল্যান্ডফিল নির্মাণ; কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ, অপসারণ; দূষণ কমিয়ে পরিবেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে স্থানী সরকার বিভাগের। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে গতকাল একনেক সভায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্প-১: ন্যাশনাল সিংগেল উইন্ডো বাস্তবায়ন এবং কাস্টমস আধুনিকায়ন জোরদারকরণ শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৫৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন