চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান : চাঁদপুরসহ বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগের একমাত্র সহজ মাধ্যম বাবুরহাট-মতলব-গৌরিপুর-পেন্নাই সড়ক। এ সড়কে প্রায় ২০০ বাঁকের মধ্যে ১৭৬টি বাঁক সোজা না করেই প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে ঝুঁকি ও ভোগান্তি পদে পদে রয়েই গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে বাঁক সোজাকরণ ও সংস্কারের জন্য ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরের প্রকল্প আট বছর পর বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
২০০৫ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদপুরের মতলব ও কুমিল্লার দাউদকান্দির পুরানো আঁকা-বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাটি সংস্কার করে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়ক ঘোষণা করলে চাঁদপুর থেকে ঢাকার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সেই থেকেই ৪২ কিলোমিটারের বাবুরহাট-মতলব-গৌরিপুর-পেন্নাই সড়কে অসংখ্য বাঁকে মরণ ফাঁদের ঝুঁকি নিয়ে মতলব থেকে প্রথম বাস চলাচল শুরু হয়। ঢাকার সাথে যোগাযোগের দূরত্ব অর্ধেক কমিয়ে আনায় চাঁদপুরসহ ল²ীপুর, রায়পুর এলাকার ভারী যানবাহন ও যাত্রীবাহী যানবাহন এখন এ রুটেই যাতায়াত করে। অথচ এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, নিত্য যানজট, আহত, নিহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ সড়কটিকে উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘোষণা করলেও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজাকরণ সম্পন্ন না করে প্রকল্পের মেয়াদের সময়সীমা শেষ ঘোষণা করে। এখনো ৮০ ভাগ বাঁকই রয়ে গেছে। সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বাঁক সোজাকরণ ও সংস্কারের জন্যে ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র ২০ শতাংশ বাঁক সোজাকরণ ও কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে। আট বছর পর ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়ায় বাকি বাঁক সোজাকরণ হচ্ছে না। তবে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, বরাদ্দকৃত টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বাঁক সোজাকরণ করা যেত। বাঁক সোজাকরণের ক্ষেত্রে ভ‚মি অধিগ্রহণে দাম নির্ধারণে অনিয়ম করা হয়েছে বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ছিল না বলেই তারা মনে করেন। আর এতো টাকা বরাদ্দের পরও রাস্তাটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেছে। ফলে এটি বর্তমানে মানুষের কাছে দুর্ঘটনার সড়ক হিসেবেই পরিচিত। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে সময়ের সাশ্রয় হলেও জীবনের ঝুঁকির কারণে যাত্রীরা আতঙ্কে থাকে সবসময়। অতিরিক্ত বাঁক ও অপ্রশস্ত সড়কের কারণে যাত্রী সাধরণের ন্যায্য ভাড়ার পরিবর্তে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। আর এ অপ্রশস্ত সড়কে একবার যানজট লাগলে সারাদিন সড়কেই সময় শেষ হয়। চাঁদপুর, ল²ীপুর, নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলোর যানবাহন ও জনপ্রতিনিধি এবং জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এ রুটে যাতায়াত করলেও সড়কটির তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।
এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী কয়েকজন কলেজ ছাত্রী জানান, অতিরিক্ত বাঁকের কারণে বাসে যাতায়াতের সময় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার কখনো কখনো দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় তাদেরকে। যাতায়াত সমস্যার কারণে মতলবের নায়েরগাঁও, নারায়ণপুর এলাকার ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ায় বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত জানান, ভ‚মি অধিগ্রহণের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় দেখেছে। চাঁদপুর সীমানায় ২৬ কিলোমিটার সড়কে কিছু বাঁক সোজাকরণ ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নতুন করে অর্থ বরাদ্দ না করায় এ বছর প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি কাজ সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে এ কর্মকর্তা জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন