একটি নয়, দুইটি নয়- মানবদেহের কমপক্ষে ২০টি রোগ নিরাময় হবে পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মানো পদ্মগুরুজ লতা নামের বনজ ওষুধি গাছের রস সেবনে! ওই লতা গলায় ঝুলিয়ে কুমিল্লার শহর, গ্রাম-গঞ্জে মাইলের পর মাইল হেঁটে বিক্রি করছেন বাচ্চু মিয়া নামে এক স্বঘোষিত কবিরাজ। প্রায় দুই ফুট লম্বা প্রতিটি লতা ২২০ টাকায় কিনে সেবন করলে দেহের অন্তত ২০টি রোগ নিরাময় হবে এমন প্রতিশ্রুতিও রয়েছে তার গলায় ঝুলানো রোগ বর্ণনার প্রচারপত্রে।
দেশীয় প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসার আলাদা গুণমান রয়েছে। বনৌষধীর গুণমান এখনো অক্ষুন্ন রেখেছেন দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ফুটপাত বা ভ্রাম্যমান ভূয়া কবিরাজ হেমিকরা বনৌষধের গুণগতমানের বারোটা বাঁজিয়ে ছাড়ছেন। আয়ুর্বেদীক বা ইউনানী শাস্ত্রের ওপর লেখাপড়া করে ডিগ্রি নিয়ে আজকে সত্যিকারের হেকিম কবিরাজকেও পেছনে ফেলে দিচ্ছে কথিতরা। এরকম একজন কথিত কবিরাজের সন্ধান মিলেছে কুমিল্লা শহরে। নাম বাচ্চু মিয়া। ৫৫ বছর বয়সী এই লোকটির বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের হাড়িসর্দার বাজারের কাছাকাছি ঈশানচন্দ্র নগর গ্রামে। প্রায় ১০বছর ধরে পথেঘাটে কবিরাজী করছেন। কিন্তু আয়ুর্বেদ বা ইউনানী বিদ্যা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এসব বিষয়ে কোনদিন পড়ালেখাও করেননি। তবুও তিনি নিজের নামের আগে ‘কবিরাজ’ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। স্বঘোষিত কবিরাজ বাচ্চু মিয়া জানান, কবিরাজী বিষয়ে তাঁর কোনোরকম প্রাতিষ্ঠানিক সনদ বা লেখাপড়া নেই। নিজের গ্রামের করিম কবিরাজের সহকারি হিসেবে প্রায় ১৫ বছর কাজ করেছেন। পরে নিজেই কবিরাজ হয়ে বাড়িতে চেম্বার খুলে বসেছেন। খাগড়াছড়ি ও বান্দারবান এলাকা থেকে পদ্মগুরুজ নামে ওই লতা কিনে আনেন। ওই লতা লোকজনের জটিল ও সাধারণ রোগের চিকিৎসায় ভালো ফল এনে দেয় বলে দাবী স্বঘোষিত কবিরাজ বাচ্চু মিয়ার। তিনি জানান, মানুষের শরীরের সবধরণের রোগ সারাবে পদ্মগুরুজ লতা। তারমধ্যে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, ঘনঘন জ্বর আসা, জন্ডিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাত-পায়ে ব্যথা-জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, যক্ষা, চর্মরোগ, বাত, পেটের অসুখ, কৃমিনাশ, মুখের দুর্গন্ধ দূর, যৌনরোগসহ অন্তত ২০টি রোগ নিরাময় হবে পদ্মগুরুজ লতা সেবন করলে। প্রতিটি লতার দাম নিচ্ছেন ২২০টাকা। স্বঘোষিত কবিরাজ বাচ্চু মিয়া জানান, তার দুইজন সহকারি রয়েছে।
কুমিল্লার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আয়র্বেদীক ও ইউনানী চিকিৎকদের অনেকে জানান, এদেশের প্রাচীন বনৌষধী এখনো মানুষের রোগমুক্তিতে সফলভাবে কাজ করছে। কিন্তু ফুটপাত, অলিগলি আর রাস্তার ক্যানভাসারের বনৌষধীর চিকিৎসা অপচিকিৎসার সামিল। রাস্তাঘাটের এসব ওষুধের কোন গুণাগুণ তো নেই বরং তা সেবনে মানুষের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই দেশের আয়র্বেদীক ও ইউনানী চিকিৎসা পদ্ধতির সুনাম টিকিয়ে রাখতে হলে ফুটপাত-পথেঘাটের হাতুড়ি চিকিৎসা এবং বনৌষধীর নামে সালসা, হালুয়া, গাছ-গাছালি, ছাল-বাকলের তৈরি বড়ির ওষুধ বিক্রির প্রবনতা বন্ধে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন