শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অতীতের বিভেদ ভুলে ঐক্যের পথে আ.লীগ-বিএনপি দৃশ্যমান হচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রচারণা

লক্ষীপুর-১ : রামগঞ্জে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

লক্ষীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) : | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লক্ষীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে সক্রিয় হয়ে উঠছে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দলীয় নেতারা ছাড়াও এ আসনে জোটের শরীক অন্যান্য প্রার্থীরাও দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, তরিকত ফেডারেশন ও এলডিপি সমর্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করেছেন। প্রার্থীরা রাজনৈতিক সভা, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ে, জন্মদিন, কুলখানীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলছে গণসংযোগ, শুভেচ্ছা বিনিময়, দান-অনুদান বিতরণসহ নানা তৎপরতা। শুরু হয়েছে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে গ্রুপিং-লবিং। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দিলে জয় সহজ হবে তা নিয়েও উভয় জোটে চলছে নানা বিচার-বিশ্লেষণ।
জানা যায়, লক্ষীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১৯৮৬ সালে মরহুম মমিন উল্যাহ ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ব্যতীত) ২০০১ সালের নির্বাচনে মরহুম জিয়াউল হক জিয়া, ২০০৮ সালে নাজিম উদ্দিন আহমেদসহ বিএনপি থেকে এ আসনে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে তরিকত ফেডারেশন মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি তার ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরে আগামী নির্বাচনেও ভোটারদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। লায়ন এম এ আউয়াল এমপি বলেন, জোটের মনোনয়ন পেলে সবাইকে নিয়ে বিগত সময়ের মতো আগামীতেও জয় লাভ করব। অবশ্য আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে তরিকত ফেডারেশনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া এম এ আউয়াল মনোয়ন পাওয়ায় রামগঞ্জে আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশকে বাদ দিয়ে তিনি রামগঞ্জের উন্নয়ন করেছেন। যা চোখে পড়ার মতো নয়।
এক সময় রামগঞ্জে আওয়ামী লীগ দলের আদর্শের চাইতে নেতার আদর্শে পরিচালিত হতো। চলিত বছরের ১৫ জুলাই জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের নিরন্তন প্রচেষ্ঠায় রামগঞ্জের ইতিহাসে আ.লীগের নেতাকর্মীর অবিস্মরণীয় উপস্থিতিতে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু সভাপতি ও আকম রুহুল আমিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। ১২ আগস্ট রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের কর্যালয়ে ১৫ আগস্ট পালন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি সফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপিত আলহাজ মো. শাহাজাহান ও বর্তমান সভাপতি অ্যাড. সফিক মাহমুদ পিন্টু হাতে হাত রেখে অতীতের ভুল-ত্রুটি ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন।
আগামী নির্বাচনে এ আসনে আ.লীগ দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন চাইবেন। আ.লীগের মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিল্পপতি সফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও তারুণ্যের প্রতীক এম এ মমিন পাটোয়ারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন, ঢাকাস্থ আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এর মধ্যে বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে এম এ মমিন পাটোয়ারী বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাবরণ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার সম্পর্কে সবই অবগত। আমি আশা করি, তিনি আমার এই কর্মের স্বীকৃতি অবশ্যই দেবেন। তিনি রাজনীতির বাইরেও ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় তৎকালীন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অতীতের বিভেদ ভুলে ঐক্যের পথে হাঁটছে রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। রামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হানিফ পাটওয়ারী আবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কয়েকজন নেতার সুপারিশে দলের বৃহত্তর স্বার্থে ৯ বছর পর গত ১৭ অক্টোবর সাবেক সাতজন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। অন্যদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া চলছে বলে দলীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করে।
আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের প্রত্যাশায় যারা বিএনপির হাই-কমান্ডে লবিং করার পাশাপাশি সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বাধা-বিপত্তি সত্তে¡¡ও কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন- তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনির আহম্মেদ, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগরী বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমাম হোসেন, গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি তরুণ শিল্পপতি কফিল উদ্দিন পাটোয়ারী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রামগঞ্জ কলেজের সাবেক ভিপি আবদুর রহিম, ঢাকাস্থ কাতার দুতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, সেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াছিন আলী। এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. মামুনও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে লংবি করছেন বলেও জানা যায়। অপরদিকে বিশ দলীয় জোটের শরীক দল এলডিপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাহাদাত হোসনে সেলিম জোটের প্রার্থী হতে মাঠে ও কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা রফিকউল্যা পাটোয়ারীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগের অবস্থান অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো, তাই আগামী নির্বাচনে বিএনপি বা বিশ দলীয় জোট প্রার্থী নির্বাচনে ভুল সিদ্বান্ত নিলে আসনটি পুনঃ উদ্ধার নাও হতে পারে। বিএনপি কিংবা জোটের সব নেতাকর্মীকে যিনি ঐক্যবদ্ধ করে এক প্লাটফর্মে আনতে পারবেন, দলীয় হাইকমান্ড তেমন প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন এমনটি তৃণমূলের প্রত্যাশা।
গত ১৭ অক্টোম্বর দীর্ঘ ৯ বছর পর জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভ‚ঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবুর যৌথ আদেশে পৌর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র হানিফ পাটোয়ারী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদ আহম্মেদ দাদু, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরন, ভাদুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং রামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক জিএস লকিয়ত উল্যা, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান, উপজেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মনির হোসেন, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল বাসার সতুসহ সাত জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।
জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিন সাবু বলেন, দীর্ঘদিন পর বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বিএনপি। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে সবাই যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে সে লক্ষে রামগঞ্জের সাতজন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে অন্যদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন