দেশে প্রতি বছর তামাকের অবৈধ বাণিজ্যের কারণে দুই হাজার ৪৪৫ মিলিয়ন টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বছরে এই অবৈধ বাণিজ্যের পরিমাণ নয়শ ৪৪ মিলিয়ন টাকা। তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকজাত দ্রব্যের এই অবৈধ বাণিজ্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
গতকাল রোববার ‘এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকজাত দ্রব্যের অবৈধ বাণিজ্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়। সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সম্মেলন কক্ষে যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে এলায়েন্স ফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)। বিএইচআরএফ’র সভাপতি দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক মারুফের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী। বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. কাজী মুশতাক হোসেন, সাউথ এশিয়ান রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. ইউএস রোকেয়া আকতার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবিক-এর কারিগরি পরামর্শক রফিকুল ইসলাম মিলন। সভা সঞ্চালনা করেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা।
উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে দেশে বিশ্বের ৫০-টির বেশে দেশ থেকে শতাধিক ব্রান্ডের অবৈধ তামাকপণ্য বাজারজাত হচ্ছে। অবৈধ সিগারেট ও চুরুটের অধিকাংশই সমুদ্র ও বিমানপথে আসে। আর ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের প্রায় পুরোটাই আসে স্থলপথে। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত তামাকজাত দ্রব্যের একটা বড় অংশ কর ফাঁকি দিয়ে বাজারজাত করা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ এবং চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার মূল্যমানের অবৈধ সিগারেট আটক করা হয়েছে। তবে দেশে যে পরিমাণ চোরাই ও অবৈধ সিগারেট আসছে তার ১০ শতাংশও ধরা পড়ছে না। সারা দেশে চোরাই সিগারেট অথবা অবৈধ সিগারেট জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে কিশোর ও তরুণরা। কারণ অবৈধ সিগারেটে কোনো কর দিতে হয় না বলে এগুলো বাজারে অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। ফলে যাদের পকেটে কম টাকা থাকে, যেমন- স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও নতুন ধূমপায়ীরা এসব অবৈধ চোরাই সিগারেটের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।
সভায় এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকজাতদ্রব্যের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- অবিলম্বে এফসিটিসি প্রটোকলে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করা, প্রটোকল মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, দ্রুত তামাকজাতদ্রব্যের করনীতি প্রণয়ন, চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে প্রটোকল অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় সমঝোতা চুক্তি করা, নকল সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানি বা ব্যক্তিকে কঠোর শাস্তি প্রদান ইত্যাদি। বক্তারা বলেন, মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রায় শতভাগই তামাক সেবী। শুধু তা-ই নয় ৬০ শতাংশ ক্যান্সারের জন্য দায়ী এই তামাক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন