শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দুবলার চরে জেলে জীবন দুর্বিষহ

| প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে : দিলীপ মন্ডলের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেবদুয়ার গ্রামে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গত ২২ অক্টোবর সঙ্গীদের সাথে পাড়ি জমিয়েছেন বঙ্গোপসাগরের তীরে সুন্দরবনের কোলে দুবলার চরে। দুবলার চরের আলোরকোলে সাভার (নিজস্ব শুটকি শুকানোর পল্লী) তৈরি করেই লইট্যা, ছুরিসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ধরতে বঙ্গোপসাগরে পাড়ি জমানো শুরু করেন তারা।
প্রতিদিনের ন্যায় ৩১ অক্টোবরও সঙ্গীদের সাথে সাগরে পাড়ি জমান দিলীপ মন্ডল। কিন্তু দিনটি মোটেই ভাল ছিল না তার জন্য। নৌকা থেকে সাগরে কাছি নামানোর সময় পায়ে বেধে দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। বেশ কষ্টে অন্যান্য সঙ্গীরা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও দুবলার চরে ভাল কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় গত এক সপ্তাহেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। একজন গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসায় কোন মতে বেঁচে আছেন দিলীপ মন্ডল।
শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থা নয়, দুবলার চরের শুটকি পল্লীর জেলেদের জন্য নেই কোন সাইক্লোন শেল্টার। আর সাগরে দুস্যদের ভয় তো আছেই। ঠিক এমনটিই বলছিলেন আলোরকোলের আরেক জেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের শ্রীমন্তকাটি গ্রামের সফিকুল ইসলাম। মৎস্য আহরণ ও শুটকি তৈরির জন্য গত ১৪ বছর ধরে দুবলার চরে যান তিনি। সফিকুল ইসলাম বলেন, সিডরের সময় এই চরেই ছিলাম আমি। মৃত্যু ভয় যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে সিডরের সময় সেটা দেখেছি। সৃষ্টিকর্তা বাচিয়ে রেখেছে তাই আজ কথা বলছি। সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় খোলা আকাশের নিচে থেকেই সিডর মোকাবেলা করেছে লক্ষাধিক জেলে-মাঝি।
আর দস্যুতার ভয়ের কথা জানালেন তালা সদরের জেলে লিটন অধিকারী। তিনি বলেন, সাগরে জেলেরা একটুও নিরাপদ নয়। জীবন বাজি রেখে মাছ ধরি আমরা। আর দস্যুরা তুলে নিয়ে যায়। শুধু মাছই নেয় না, আমাদেরও তুলে নিয়ে যায়। মুক্তিপণ না দিলে কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেয় আমাদের।
জেলেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কথা হচ্ছিল মহাজন রঞ্জিত হালদারের সাথে। তিনিও সাগরে যান জেলেদের সাথে। তিনি বলেন, এই দুবলার চরে আলোরকোল, মেহের আলীর চর, নারকেলবাড়িয়া ও ট্যাক অফিস মিলে লক্ষাধিক মানুষ মাছ ধরে, শুটকি করে জীবিকা অর্জন করছে। কারও জীবনেই নিরাপত্তা নেই। বিপদে পড়লে ডাক্তার নেই। ঝড়ে আশ্রয়ের জায়গা নেই। দস্যুদের হাত থেকে মুক্তি নেই।
অথচ আমরাই প্রতিবছর সরকারকে ৫০-৬০ লাখ টাকা রাজস্ব দেই। জেলে-নৌকা-জাল সবই আমরা নিয়ে আসি, যাওয়ার সময় সরকারকে রাজস্ব দিয়ে যায়। সরকার শুধু নেয়, আমাদের জন্য কিছুই করে না। তিনি আরও বলেন, চৈত্র মাস নাগাদ অর্থাৎ পাঁচ মাসের মতো আমরা দুবলায় থাকি। সরকার সবার জন্য সব কিছু করে। এই সময়টুকু আমাদের জন্য কি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় না। ঝড়ের কবল থেকে প্রাণে বাচঁতে কয়েকটি সাইক্লোন সেল্টার করা কি খুবই কঠিন- প্রশ্ন করেন তিনি।
শুধু দিলীপ মন্ডল, সফিকুল ইসলাম কিংবা রঞ্জিত হালদার নয়, খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার তালা, আশাশুনি, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, বাগেরহাটের মংলা, শরণখোলা, মোড়লগঞ্জসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষাধিক জেলে-মাঝিকে এভাবেই দুবলার চরে জীবিকার তাগিদে ঝুঁকির মধ্যদিয়ে কাটাতে হয় প্রতিটি দিন। কিন্তু তাদের জীবনমান উন্নয়নে আজ অবধি সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ এসব জেলে-মাঝিদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন