নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা : আগাম আলুর ক্ষেতে পানি দেয়া, কীটনাশক প্রয়োগ, নিড়ানি দেয়াসহ আলু ক্ষেত পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারীর কৃষকরা। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে আর অল্প কিছু দিনের মধ্যে আগাম আলু উত্তোলন করতে পারবেন এ জেলার কৃষকেরা।
আগাম আলু চাষের জন্য বিখ্যাত নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকা উপজেলা। দেশের আগাম আলুর বেশির ভাগ উৎপাদন হয় এখানে। আগাম লাগানো আমন ধান কর্তনের পর এখানকার কৃষকরা একখন্ড জমিও পতিত রাখে না। এ ছাড়া বছরের পর বছর যে জমিগুলো পড়ে থাকত গত কয়েক বছর ধরে সে জমিগুলোতে আগাম জাতের আলু চাষ করে ইতোমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা। ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে উৎপাদিত গেনোলা জাতের আগাম আলু চাষ করে থাকেন এখানকার কৃষকরা। এ দু’টি উপজেলার মাঠে মাঠে এখন আগাম আলুর বেড়ে উঠা লকলকে গাছ শোভা পাচ্ছে।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিস জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে। যা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে উত্তোলন শুরু করবেন কৃষকরা। আগাম আলু তোলার পর একই জমিতে আবার মৌসুমী আলু, ভুট্টা, মরিচসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে থাকেন তারা। বছরে একই জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আগাম আলু চাষে সেচ সার কম লাগে এবং স্বল্প সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় এ আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এখানকার উৎপাদিত আগাম আলু জেলার চাহিদা মিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা বাবুর ডাঙ্গার কৃষক সাহেব আলী ও আব্দুল মাসুদ জানান, আগাম জাতের আলু চাষে বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১৫ হতে ২০ হাজার টাকা। বাজার ধরতে পারলে অন্তত ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা সম্ভব হবে। এতে খরচ বাদে প্রতি বিঘাতে লাভ হবে অন্তত ৫০ হাজার টাকা বলে তারা জানান।
বাহাগিলী ইউনিয়নের নান্নুর বাজার এলাকার কৃষক মুকুল হোসেন জানান, গত বছর পাঁচ বিঘা জমিতে তিনি আগাম আলুর আবাদ করেছিলেন। এবার আবাদ করেছেন ১০ বিঘা। তিনি বলেন, আগাম আলু চাষে খরচ কম লাভ বেশি। এ ছাড়া বাজারে আগাম আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। একই গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বলেন, এবারে আট বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলুর আবাদ করেছেন। এখন পরিচর্যার কাজ চলছে। ৬০ দিনের মধ্যে আলু তুলে বাজারে বিক্রি করা যাবে।
এদিকে আগাম আলু আবাদের কারণে কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা হয়েছে এ সময়ে বসে থাকা এ জেলার কৃষি শ্রমিকদের। আমন ধান পুরোপুরি না পাকা পর্যন্ত আলু ক্ষেতে কাজ করে তারা সংসার চালাবেন। আগাম আলু ক্ষেতে কাজ করা রহিম বক্স, মেহের আলী, জয়ন্ত্রী রানী বলেন, আলুর জমিতে কাজ করে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশত টাকা করে পাই। আগে এ সময়ে অর্থাৎ আশ্বিন-কার্তিক মাসে কোনো কাজ না থাকায় না খেয়ে থাকতে হতো। এখন আগাম আলু ক্ষেতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানায় আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবার কিশোরগঞ্জে আগাম আলুর বাম্পার ফলন হবে। তিনি জানান, আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে এই উপজেলায় আগাম আলু উত্তোলন শুরু হবে। নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, দেশের অন্যান্য জেলার আগেই নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আগাম আলু উঠে এবং আগাম বাজার ধরতে পারায় লাভবান হন এখানকার কৃষকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন