শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মানিকগঞ্জে কৃষিজমিতে ইটভাটা!

| প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মানিকগঞ্জ থেকে এ এফ এম নূরতাজ আলম বাহার : মানিকগঞ্জে মাত্র ৯৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর কৃষিজমি। নদীভাঙনের ফলে প্রতি বছর কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। তার উপর নিয়মনীতি না মেনে তিন ফসলি জমিতে যত্রতত্র ইটভাটা তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে কৃষক হারাচ্ছেন তার জমি, বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ, খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়নি। অনুমোদন ছাড়াও বেশ কিছু ইটভাটা চলছে। এ ছাড়া প্রতি বছর বিভিন্ন এলাকায় নিয়মের তোয়াক্কা না করে ইটভাটা নির্মাণ করে যাচ্ছে। অনেক ইটভাটার পাশেই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। অদৃশ্য কারণে একের পর এক ইটভাটা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। মানিকগঞ্জ সদরে এবারো একাধিক ইটভাটা নির্মাণ হচ্ছে। যেসব কারণে দ্রæত কৃষিজমি কমে যাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ ইটভাটা। মানিকগঞ্জের দীঘি ইউনিয়নের বাটবাউর মৌজায় নতুন ইটভাটা নির্মাণকে কেন্দ্র করে কৃষক ও ভাটার মালিকের মধ্যে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা ফসলি জমিতে ইটভাটা না করার জন্য ২৪৭ জন কৃষক স্বাক্ষরিত একটি আবেদন জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরে দিয়েছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সরেজমিন একাধিকবার ইটভাটা এলাকা পরিদর্শন ও তদন্ত করেন।
সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর দু’পক্ষের উপস্থিতিতে সরেজমিন তদন্ত করেন সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা নাজিম-উর রউফ খান। কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, বিভিন্ন কারণে কৃষিজমি দ্রæত কমে যাচ্ছে। আমরা খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছি। তার উপর তিন ফসলি জমিতে নতুন করে ইটভাটা করলে আমরা একেবার নিঃশেষ হয়ে যাব। কিছু জমির মালিককে টাকার লোভ দেখিয়ে কৌশলে জমি ইজারা নিচ্ছে। তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা না করার জন্য এলাকার সবাই সোচ্চার। ইটভাটাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতর থেকে সহকারী পরিচালক মো. সাইদ আনোয়ার ২৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লিখিত স্থানে ইটভাটা না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইটভাটার মালিক ফজলুল হক বলেন, সরকারের নিয়ম মেনেই আমি ইটভাটা করব। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে একই মৌজায় ইরি জমিতে নতুন নতুন ইটভাটা হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ না করে আমারটি বন্ধ করার পাঁয়তারা চলছে। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। যে ভাটা নিয়ে কৃষকরা আপত্তি তুলছেন, সেখানে ইরি ধান হয় না। সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা নাজিম-উর রউফ খান বলেন, একাধিক ফসলি জমিতে ইটভাটা করার বিধান নেই। কৃষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সরেজমিন তদন্ত করেছি। খুব দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলীমুজ্জামান মিয়া বলেন, জেলায় মোট ৯৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর কৃষিজমি। প্রতি বছর নদীভাঙনের ফলে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর, ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দ্রুত কৃষিজমি কমে যাবে। এর ফলে জেলাবাসী তীব্র খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে। মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ার বলেন, যে স্থানে দিগন্ত ট্রেডার্স নামে ইটভাটা স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সে জমি এক ফসলি না একাধিক ফসলি তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিধিমোতাবেক বহু ফসলি জমির ক্ষেত্রে ইটভাটার জন্য অনুমোদন দেয়া যায় না। পরিবেশ অধিদফতর থেকে ইটভাটা তৈরির ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন